সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে পুরনোদেরই আধিপত্য, নতুন কম

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগে পুরনোদেরই আধিপত্য, নতুন কম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২৩০ আসনে দলের মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয় থেকে এ চিঠি বিতরণ করা হয়।

বাকি ৭০টি আসন জোট শরিকদের জন্য রাখা হয়েছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর নৌকা নিয়ে যারা লড়ছেন তাদের অধিকাংশই বর্তমান সংসদের এমপি। আবার কেউ কেউ সাবেক এমপি রয়েছেন। এবার প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন সর্বোচ্চ ৩০ জন। অর্থাৎ মনোনয়ন তালিকায় পুরনোদেরই আধিক্য, নতুন মুখ এসেছে কম।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা। সে কারণে এবার প্রার্থী বাছাইয়ে বর্তমান সংসদ সদস্যরাই আবারও দলীয় মনোনয়নে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য কোন্দল ও বিশৃঙ্খলা এড়ানো এবং প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে বর্তমান এমপিরাই বেশি সুবিধা পাবেন বলে দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন। এ ছাড়া নতুন প্রার্থী দিলে বর্তমান এমপিরা নির্বাচনে কী ভূমিকায় থাকবেন সেদিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৪৮ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য দলীয় মনোনয়ন পাননি। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, জনবিচ্ছিন্ন কাউকে ফের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। তবে এবার বাদ পড়ার সংখ্যা কমে এসেছে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ড ১১ নভেম্বর থেকে টানা বৈঠক করে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে। তিনটি আসনে একাধিক ব্যক্তিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর ব্যাখ্যায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কোনো কোনো আসনে মনোনয়নের চিঠি দুটিও দেওয়া হয়েছে। এটি টেকনিক্যাল কারণে। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রার্থী বদলাতেও হতে পারে। অন্য প্রার্থী বেশি শক্তিশালী হলে দলের প্রার্থী বিবেচনা করা হবে। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মহাজোটের শরিকদের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতা হয়ে গেছে। আজ দুপুরে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হবে। গতকাল যারা চিঠি পেয়েছেন সেসব তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবার পুরনো এমপিদের আধিক্য। নতুন মুখ কম। নওগাঁ জেলায় সংসদীয় আসনটি ৬টি। এ আসনে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন ৫ জন। একজন স্বতন্ত্র নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন মুখ হিসেবে নওগাঁ-৫ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুল জলিলের ছেলে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন। নাটোরে চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতেই পুরনো মুখ রাখা হয়েছে। একটি আসন জোট শরিকদের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে। নাটোর-৪ আসনে সপ্তমবারের মতো নৌকা পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস। তিনি চারবারের এমপি। রাজশাহীতে ৬টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের এমপি ৫ জন। এর মধ্যে রাজশাহী-২ আসনটি ওয়ার্কার্স পার্টির। শুধু পরিবর্তন রাজশাহী-৫ আসনে নতুন মুখ হিসেবে এসেছেন ডা. মনসুর রহমান। মাদারীপুরের তিনটি আসনের একটিতে এসেছে নতুন মুখ। খুলনায় ৬টি আসনের মধ্যে দুটিতে নতুন মুখ এসেছে। গাজীপুরে ৫টি আসনে প্রার্থীদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নতুন মুখ এসেছে মাত্র একজন। তিনি হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ। এ আসনের এমপি ছিলেন রহমত আলী। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি বাদ পড়েছেন। চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। চাঁদপুরে ৫টি আসনে প্রার্থী তালিকায় কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। তবে চাঁদপুর-১ আসনে বর্তমান এমপি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের নাম রয়েছে। চট্টগ্রামের ৮টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাতজনই বর্তমান এমপি। নতুন মুখ হিসেবে এসেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সিটি মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিনের ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। প্রার্থীদের নাম ঘোষণার ব্যাপারে শীর্ষ নেতারা বলছেন, দলীয় কোন্দলে জড়িত, এলাকায় যোগাযোগ কম থাকা এবং নানা কারণে বিতর্কিতদের এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন পাওয়া অনেক নতুন মুখের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসির ভাগ্নে শাহজাদা সাজু (পটুয়াখালী-৩) মনোনয়ন পেয়েছেন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হলেন আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন। তাকেও দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর মনোনয়ন পাওয়া আতাউর রহমান খানের ছেলে আমানুর রহমান রানা টাঙ্গাইল-৩ আসনের সংসদ সদস্য। হত্যা মামলায় রানা জেলে থাকায় তার বাবাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। একইভাবে কক্সবাজার-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শাহীন চৌধুরী। তিনি আবদুর রহমান বদির স্ত্রী।

সর্বশেষ খবর