বুধবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোটের পথ আটকে গেল খালেদা জিয়ার

আমান, মশিউর, ডা. জাহিদ, ওয়াদুদ, ওহহাব অংশ নিতে পারবেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটের পথ আটকে গেল খালেদা জিয়ার

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাগারে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সুযোগ আটকে গেছে। আপিল করেই খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন, তার আইনজীবীরা এতদিন এমন দাবি করে আসলেও গতকাল হাই কোর্টের দেওয়া এক আদেশে সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। পর্যবেক্ষণে হাই কোর্ট বলেছে, দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিলে ওই দণ্ড চূড়ান্তভাবে বাতিল বা স্থগিত হয়। দুর্নীতির দায়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে বিএনপির পাঁচ নেতার করা আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ। এ আদেশের ফলে গতকাল দণ্ড ও সাজা স্থগিতের আবেদন দাখিলকারী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক এমপি মো. মশিউর রহমান, বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খাগড়াছড়ির সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূঁইয়া এবং ঝিনাইদহ-১ আসনের সাবেক এমপি মো. আবদুল ওহহাব নির্বাচন করতে পারবেন না বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। আদেশের সঙ্গে দেওয়া পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিলে ওই দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হয়। সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কেউ অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে মুক্তির পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না।’ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের দণ্ড নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এতদিন দাবি করছিলেন, বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে এবং উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে অতীতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার নজির থাকায় খালেদাও একইভাবে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু গতকাল হাই কোর্টের আদেশের ফলে খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ আর থাকছে না বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেছেন, সম্পূর্ণ খালাস পেলে অথবা দণ্ড বাতিল হয়ে গেলে, তখন উনি পারবেন। আজকের আদেশে এটা আরও স্পষ্ট হলো। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ওই দুই মামলায় আপিল করে খালাস পেলে বা সাজা বাতিল হলেও পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ার আগ পর্যন্ত খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তিনি বলেন, এখানে শর্ত হলো ২টি। তা হলো, তিনি যদি দণ্ডিত হন তাহলে পারবেন না। আর ইতিমধ্যে তিনি যদি তার দণ্ড বা সাজা থেকে মুক্তি লাভ করেন তাহলে তার সাজা বাতিলের তারিখ থেকে পাঁচ বছর তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কাজেই খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে দুটি প্রতিবন্ধকতাই রয়েছে। মাহবুবে আলম বলেন, যারা দরখাস্ত করেছিলেন তারা সবাই দণ্ডপ্রাপ্ত। এরা তাদের দণ্ড থেকে মুক্তি লাভ করেনি এবং তাদের ৫ বছর সময় অতিবাহিত হয়নি। এমতাবস্থায় যদি তাদের দণ্ড স্থগিত করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়, তা হবে সংবিধানের পরিপন্থী। কাজেই আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করে তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। আদালতে আমান উল্লাহ আমানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আরিফুল ইসলাম। ডা. জাহিদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আইনজীবী আহসানুল করিম ও খায়রুল আলম চৌধুরী। মশিউর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক। ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও মো. আবদুল ওহাবের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক ও আইনজীবী এ কে এম ফখরুল ইসলাম। সব মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

সুপ্রিম কোর্টে যাবে বিএনপি নেতারা : হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার খায়রুল আলম চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজন বিএনপি নেতা হাই কোর্টে আবেদন করেছিলেন সাজা ও দণ্ড স্থগিত করার জন্য। তারা নির্বাচনে অংশ নিতে এই আবেদন করেছিলেন। আদালত সব পক্ষের বক্তব্য শুনে আবেদনগুলো খারিজ করে দিয়েছে। আমরা এ আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে যাব।

সর্বশেষ খবর