মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোটে আওয়ামী লীগ উৎকণ্ঠায় বিএনপি

তবুও একক প্রার্থী তালিকার চেষ্টা করছে বিএনপি

এলাকায় যেতে নিরাপত্তা চেয়ে সিইসিকে স্বপনের চিঠি ৬ আসনে প্রার্থী শূন্য, জটিলতা কাটেনি ঐক্যফ্রন্টে

মাহমুদ আজহার

তবুও একক প্রার্থী তালিকার চেষ্টা করছে বিএনপি

এলাকায় সুষ্ঠুভাবে ভোটের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনার নিরাপত্তা চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে চিঠি দিয়েছেন বরিশাল-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপন। গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি এই চিঠি দেন। শুধু তিনি একাই নন বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রার্থী নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন। তারা কেউ ইসিকে চিঠি দিয়েছেন আবার কেউ স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। তবে প্রতিকূল পরিবেশেও  শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। যাচাই-বাছাইয়ে ১৪১ প্রার্থী বাতিল হওয়ার পরও একক প্রার্থী তালিকা তৈরি করছে বিএনপি। নির্বাচন কমিশনে উত্তীর্ণ হওয়ার পর যে কোনো দিন ১৫০ থেকে ২০০ আসনে প্রার্থী তালিকার নাম ঘোষণা করতে পারে দলটি। এ নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরাও কাজ করছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে এখনো আসন বণ্টন চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি। এ নিয়েও তিন পক্ষেই মান অভিমান চলছে। তবে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই দল, জোট ও ফ্রন্টের ধানের শীষের একক প্রার্থী তালিকার চিঠি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাচ্ছি। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দূরের কথা কোনো ধরনের ব্যবস্থাই নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন। বিএনপির প্রার্থীদের গুম করা হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে। ছুতো অজুহাত দিয়ে মনোনয়ন বাতিল করা হচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের মূল প্রার্থীর কোনো কিছুই চোখে পড়ছে না ইসির। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি এমন আচরণ করতে থাকে তাহলে আমরা নির্বাচন নিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি।’  জানা যায়, দলের একক প্রার্থী ঘোষণা করতে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক চলে গভীর রাত পর্যন্ত। গুলশানে চেয়ারপারসন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোন কোন আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করা যায় তার একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। আজ-কালের মধ্যেই দলীয় একক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারে বিএনপি। সেক্ষেত্রে দলীয়ভাবে ২০০ প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করা হতে পারে। তবে প্রার্থীকে ৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ধানের শীষ প্রতীকসহ চিঠি দেওয়া হবে। দল, জোট ও ফ্রন্টের একটি তালিকা নির্বাচন কমিশনেও জমা দেওয়া হবে। এ ছাড়াও বৈঠকে ছয়টি শূন্য আসনে সরকারের বাইরে অন্য কোনো দলের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া যায় কি না তা নিয়েও আলোচনা হয়। স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীকে দলীয় চিঠি দিয়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া যায় না তা নিয়েও বিস্তারিত কথা হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার চায় না আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকি। এ জন্যই বিএনপির এত সংখ্যক প্রার্থী বাতিল করা হয়েছে। প্রার্থী গ্রেফতার, গুম-খুন অব্যাহত রয়েছে। এক প্রতিকূল পরিবেশেও আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা নির্বাচনে লড়তে চাই। এবার আর সরকারকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেব না।’ ২০-দলীয় জোট সূত্র জানায়, জোটের শরিকদের আসন এখনো চূড়ান্ত করেনি বিএনপি। তবে বিএনপির দলীয় মনোনয়নের চিঠিও জোটের শরিকদের দেওয়া হয়েছে। জামায়াত বাদে অন্য শরিকদের সঙ্গে বিএনপির বোঝাপড়া চূড়ান্ত হয়েছে। জামায়াতও এ পর্যন্ত ২৪টি আসন নিশ্চিত করেছে। আরও ৩-৪টি আসন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে দর কষাকষি করছে। দু-একদিনের মধ্যে ২০ দলেরও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে এখনো আসন বণ্টন চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে কয়েকদফা বৈঠকও হয়েছে। তবে দু-একদিনের মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন বণ্টনের ফয়সালা হবে বলে জানা গেছে। এ দিকে বিএনপির দফতর শাখা থেকে জানা যায়, নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর অন্তত ১৫ জন প্রার্থীকে গ্রেফতার কিংবা নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আবু বকর সিদ্দিকী নামে যশোরের এক প্রার্থীর লাশ বুড়িগঙ্গায় পাওয়া গেছে। কারাগারে থাকা নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদের চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আ ন ম এহছানুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নির্বাহী কমিটির সদস্য মনোয়ার হোসেন খান, সাইফুল আলম পটু, মোশাররফ হোসেন খোকন প্রমুখ। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় তাদের নামও রয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুও নিজ এলাকায় যেতে পারছেন না। শনিবার সন্ধ্যায় তার বাড়ির নিচতলায় নাটোর জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলা চালিয়ে একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে ‘হেলমেট’ বাহিনী। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এলাকায় আওয়ামী লীগের গুণ্ডা বাহিনীর তাণ্ডব চলছে। নেতা-কর্মীদের ওপর গ্রেফতার-নির্যাতন চলছে। তারপরও আমি খুব শিগগিরই এলাকায় যাব। চাঁদপুর-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আ ন ম এহছানুল হক মিলন এখন জেলে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকাছাড়া। নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার জন্যও চাঁদপুরে গেলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। পরে অবশ্য তাকে চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ফেনী-১ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় ওই আসনে ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থী রফিকুল আলম মজনু। তিনিও এলাকায় যেতে পারছেন না বলে বিএনপির অভিযোগ। যশোর-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তি। তিনি অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় এমপির পক্ষ থেকে নানাভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি এলাকায় থাকতে পারছেন না। স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদেরও নির্যাতন হয়রানি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আর কত গ্রেফতার করবেন। এবার থামুন। ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ দিন। নইলে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে যাবেন।’

৬ আসনে বিএনপির প্রার্থীশূন্য : দেশের বিভিন্ন সংসদীয় এলাকায় ছয়টি আসনে আপাতত প্রার্থীশূন্য হয়ে পড়েছে বিএনপি। এমনকি বিএনপি জোটের কোনো প্রার্থীও নেই এই ছয়টি আসনে। আসনগুলো হলো— বগুড়া-৭, ঢাকা-১, মানিকগঞ্জ-২, জামালপুর-৪, রংপুর-৫ ও শরীয়তপুর-১ আসন।

রাজনৈতিক গ্রেফতারদের মুক্তি  চেয়ে ইসিকে ঐক্যফ্রন্টের চিঠি : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেফতার নেতা-কর্মীদের মুক্তি চেয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছে। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে ওই চিঠি পাঠানো হয়।

জোটের প্রধান সমন্বয়ক মোস্তফা মহসীন মন্টুর সই করা চিঠিতে বলা হয়, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর দেশের সবকিছু নির্বাচন কমিশনের আওতায় এসে যায়। সেই হিসেবে বৈধ প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণার পর রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেফতার করা যায় না।’ রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হওয়া যে কোনো রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে মুক্তি দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিতে পারে নির্বাচন কমিশন বলেও উল্লেখ করে ঐক্যফ্রন্ট।

সর্বশেষ খবর