মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বেঁচে আছি ভাবতেই অবাক হই

অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী

বেঁচে আছি ভাবতেই অবাক হই

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিল ১৯৭১-এর ২৮ ফেব্রুয়ারি। তার কথায় যুদ্ধ ছাড়া দেশকে বাঁচানো সম্ভব না এরকম ইঙ্গিত ছিল। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে আমরা ছড়িয়ে পড়লাম। ২৫ মার্চ রাতে আমি গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় ছিলাম। রাত প্রায় ১১টায় ঢাকা শহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নেমে গিয়েছে বলে জানতে পারলাম। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিবেন। আমরা প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করলাম। কিন্তু আমরা চার-পাঁচদিনের বেশি টিকতে পারলাম না। কারণ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট খুব কাছে ছিল। সেখান থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। সেখানে অস্ত্রের মজুদ অনেক বেশি থাকায় আমরা টিকতে পারলাম না। এরপর শুরু হলো গেরিলা যুদ্ধ। ট্রেনিং নিতে শুরু করলাম বিভিন্ন জায়গায়। পাকিস্তানি বাহিনী যাতে এগিয়ে যেতে না পারে এ জন্য আমরা বেশ কয়েকটি ব্রিজ-কালভার্ট গুঁড়িয়ে দিয়েছিলাম। একদিন আমরা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মিলে একটা এলাকার কিছু ব্রিজ ভেঙে দেওয়া এবং রাস্তা বন্ধ করার পরিকল্পনা করছিলাম। হঠাৎ এক মৌলভী ভদ্রলোক আসলেন আমাদের কাছে। কথার ফাঁকে তিনি আমার নাম নিয়ে বললেন, মান্নানকে তো পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করেছে। আমরা খুব অবাক হলাম। তিনি বলে চললেন, আপনারা জানেন না এখনো। পুরো গ্রাম জানে। মান্নানের বাড়িতে এসে গুলি করে তাকে হত্যা করেছে পাকিস্তানি বাহিনী। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাকে অনেক আগে থেকেই খোঁজ করছিল। তখন আমি তাকে বললাম আমিই মান্নান, আমি এখনো বেঁচে আছি। সে তো পুরো ভূত দেখার মতো অবাক। তখন জানতে চাইলেন, যাকে খুন করা হয়েছে সে কে? পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম আমাদের পাশের গ্রামে শারাফত আলী নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ছিলেন। তিনি খুব নিরীহ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তখন পাশাপাশি দুই গ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন এই সংখ্যাটা খুব কম ছিল। তাই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাকে ভেবে ওই ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। বেশ কয়েকবার নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছি। এখনো বেঁচে আছি ভাবতেই অবাক হই। মাঝেমাঝে সেই সময়ের কথাগুলো মনে পড়লে শরীরে শিহরণ জাগে। এই দেশ অনেক রক্তের বিনিময়ে এসেছে। অজস্র ত্যাগ আর জীবনের বিনিময়ে পাওয়া এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তরুণদের নিতে হবে। অনুলেখক : জয়শ্রী ভাদুড়ী ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর