বৃহস্পতিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রার্থিতা ফিরে পেতে আবেদন খালেদার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রার্থিতা ফিরে পেতে আবেদন খালেদার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাদ পড়াদের মধ্যে প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে ৫৪৩টি আপিল আবেদন জমা পড়েছে। রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এসব আপিল করেছেন সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা। এ ছাড়া গতকাল শেষ দিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তিনটিসহ আপিল আবেদন জমা পড়েছে ২২২টি। তবে দুই দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করার দাবি জানিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে আপিলের শুনানি শুরু করবে কমিশন, চলবে কাল শুক্রবার ও পরশু শনিবার। এই তিন দিনে সব আপিল আবেদন শুনানি শেষে নিষ্পত্তি করবে কমিশন এবং আপিলের রায় সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী এ আপিল শুনানি করবেন। এ সময় ইসি সচিবও উপস্থিত থাকবেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ১১ তলায় এ লক্ষ্যে এজলাস তৈরির কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর নির্ধারিত সময়ে ৫৪৩টি আপিল আবেদন আমরা পেয়েছি। পুরো কমিশন ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর তা শুনবে। শুনানি শেষে আপিলের রায় সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হবে। ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময় রয়েছে। ইসি সচিব জানান, আপিল আবেদনের ক্রমিক ১ থেকে ১৬০ নম্বর পর্যন্ত শুনানি চলবে বৃহস্পতিবার, ১৬১ থেকে ৩১০ নম্বর পর্যন্ত শুক্রবার এবং ৩১১ থেকে ৫৪৩ নম্বরের শুনানি হবে শনিবার। সে হিসাবে খালেদা জিয়ার আপিল আবেদনের শুনানি শেষ দিন শনিবার হতে পারে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে সবার শুনানি শেষ করা হবে। সে ক্ষেত্রে শুনানি শেষের জন্য নির্ধারিত সময়ক্ষণ নেই। যতক্ষণ লাগবে ততক্ষণ শুনানি চলবে বলে উল্লেখ করেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। ৫৪৩টি আবেদনের মধ্যে অধিকাংশই মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে। তবে প্রার্থিতা বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কতজন এবং দলভিত্তিক কতজন সে তথ্য জানাতে পারেনি ইসি। রায়ে সার্টিফায়েড কপি সরবরাহের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, যাদের আপিল আবেদন নামঞ্জুর হবে (অর্থাৎ রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে), তাদের রায়ের নকল কপি যেন দ্রুত দেওয়া হয় সে ব্যবস্থা থাকবে। ৩০ ডিসেম্বর ভোট হবে। এর আগে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে ৩ হাজার ৬৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন; বাছাইয়ে বাদ পড়েছে ৭৮৬টি; বৈধ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র রয়েছে ২ হাজার ২৭৯টি। মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে প্রথম দিন সোমবার ৮৪টি, মঙ্গলবার ২৩৭টি ও গত বুধবার ২২২টি আপিল আবেদন জমা পড়ে।

খালেদার তিন আবেদন : দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করা হয়েছে। ফেনী-১ আসনের জন্য ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বগুড়া-৬ ব্যারিস্টার নওশাদ জমির এবং বগুড়া-৭ আসনের জন্য অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এই আপিল জমা দেন। ফেনী ও বগুড়ার রিটার্নিং কর্মকর্তা ২ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই শেষে খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্রই বাতিল ঘোষণা করেন। দুর্নীতির মামলায় দুই বছরের বেশি সাজা হওয়ার বিষয়টিকেই মনোনয়নপত্র বাতিলের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তারা। এর সমালোচনায় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের নেত্রীর মনোনয়নপত্র বতিলের বিষয়টি ‘সরকারের নীলনকশার অংশ’। বিএনপি নেতারা আশা করছিলেন, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে তিনি ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। সে অনুযায়ী ফেনী ও বগুড়ার তিনটি আসনে তাকে ধানের শীষের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।

গড় সময় পাঁচ মিনিটের বেশি নয় : সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টানা শুনানি চললেও ১৬০টি আপিল আবেদনের শুনানি করতে গড়ে সাড়ে ৪ মিনিট করে সময় লাগবে। ১২ ঘণ্টায় ৭২০ মিনিটের মধ্যে গড় হিসাবে আবেদনপ্রতি শুনানির এ সময় বিবেচনা হয়েছে। যদিও কমিশন এ সময়ের মধ্যে মধ্যাহ্ন বিরতি নেবে। সেই সঙ্গে যতক্ষণ না শেষ হবে ততক্ষণ শুনানি চলবে বলে জানান সচিব। এবার ৭৮৬টি বাতিল মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৩৮৪টি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশই ১% স্বাক্ষর গরমিলের কারণে বাদ পড়েছেন, যাদের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যে ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি ও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি মিলিয়ে অন্তত ১৩০ জন রয়েছেন। বাকিদের মধ্যে দলীয় প্রত্যয়ন না থাকা, হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়াসহ হরেক রকমের আইনি ব্যত্যয় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তিন দিনে যুক্তিযুক্ত আবেদনকারীদের শুনানিতে পর্যাপ্ত সময় মিলবে বলে মনে করেন ইসির কর্মকর্তারা।

কালো নয়, স্বচ্ছ সাদা নির্বাচন করতে চাই—মাহবুব তালুকদার : নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘আইনের শাসন না থাকলে গণতন্ত্র অর্থহীন হয়ে পড়ে। আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচন আইনানুগ না হলে তা কালো নির্বাচন। আমরা কালো নয়, স্বচ্ছ সাদা নির্বাচন করতে চাই।’ নিরপেক্ষ নির্বাচন গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এ জন্য নির্বাচন আইনানুগ না হলে সে নির্বাচন কালো নির্বাচন। আমরা কালো নির্বাচন নয়, স্বচ্ছ, সাদা নির্বাচন করতে চাই।’ গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির সদস্যদের ব্রিফিংয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

‘গ্রেফতার-বাণিজ্য’ ও হয়রানি বন্ধে আবারও ইসির নির্দেশনা চায় বিএনপি : ভোটের মাঠে সমান সুযোগ নিশ্চিতে নেতা-কর্মীদের ‘গায়েবি মামলা’র অজুহাতে আটক, গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আবারও অনুরোধ জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দেওয়া হয়। দলের যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আলাদা তিনটি চিঠি ইসি সচিবের কাছে পৌঁছে দেন।

দ্রুত আপিল নিষ্পত্তির দাবি : বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘যাদের প্রার্থিতা প্রাথমিক পর্যায়ে রিটার্নিং অফিসাররা বাতিল করেছেন, তাদের আপিলের শুনানি অতি দ্রুত করার জন্য আমরা বলেছি।’ তিনি জানান, ৬ ও ৭ তারিখের মধ্যে দ্রুত করার জন্য অথবা নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব বিবেচনাপ্রসূত কোনো পদ্ধতিতে অতি দ্রুত তা সম্পন্ন করলে প্রার্থীদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। ৯ তারিখ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। এ ক্ষেত্রে ৮ তারিখে শুনানি শেষ হলে অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। শুনানি যেন ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত না গড়ায় সে জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান আলাল।

১১ দলের জোট ও প্রতীক নিয়ে দ্বিধা কাটেনি এখনো : দুই বা ততোধিক দলের জোট একক প্রতীকে ভোট করলে চূড়ান্ত মনোনয়ন ও প্রতীক নিয়ে আবারও স্পষ্টীকরণ চেয়েছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো কোনো আসনে জোটের একাধিক প্রার্থী থাকলে প্রতীক বরাদ্দের সময় কী হবে জানতে চাওয়া হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব এক চিঠিতে ইসি সচিবের কাছে লিখেছেন, কোনো একজন বৈধ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দের জন্য পত্র দিলে জোটভুক্ত অন্য দলগুলোর বৈধ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে কি না? অথবা একজনকে বিএনপির পক্ষ থেকে ধানের শীষ দেওয়ার জন্য বলা হলে জোটের অন্য দলের বৈধ প্রার্থীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে কি না? ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে এমন ১১টি দলের তালিকাও ইসিতে জমা দেওয়া হয়েছে। ১৫ নভেম্বরের এ-সংক্রান্ত চিঠিও যুক্ত করেছে বিএনপি। জোটের ১১টি দল হচ্ছে—বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, এলডিপি, বিজেপি, খেলাফত মজলিস, জাগপা, কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর