শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রার্থিতা ফিরে পেলেন অনেক হেভিওয়েট

আপিল শুনানির প্রথম দিনে বেশিরভাগ মনোনয়ন বৈধ, পেলেন আখতারুজ্জামান, রনিসহ বিএনপির অন্তত ৩৫ জন। মীর নাছির টুকু দুলুসহ ৭৬ জন আপিলেও বাতিল, কাল খালেদার শুনানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রার্থিতা ফিরে পেলেন অনেক হেভিওয়েট

আপিল শুনানিতে গতকাল নির্বাচন কমিশনাররা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রিটার্নিং অফিসারের বাছাইয়ে যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল, তাদের মধ্যে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। গতকাল আপিল শুনানির প্রথম দিন ১৬০ জনের আবেদন নিষ্পত্তি করে ৮০ জনের প্রার্থিতাই ফিরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে অন্তত ৩৫ জন বিএনপির প্রার্থী। এ ছাড়া শুনানিতে ৭৬টি আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। এখন তারা উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা বলেছেন, আজ এবং কাল নির্বাচন কমিশনে আপিল শুনানি চলবে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দ্বিতীয় দিন ১৬১ থেকে ৩১০ এবং শেষ দিন ৩১১ থেকে ৫৪৩ ক্রমিক পর্যন্ত আপিল আবেদনের শুনানি হবে। সেই হিসাবে খালেদা জিয়ার শুনানি কাল হতে পারে। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাদ পড়াদের মধ্যে প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে ৫৪৩টি আপিল আবেদন জমা পড়েছে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্ম-সচিব এস এম আসাদুজ্জামান বলেছেন, আপিল শুনানির প্রথম দিন ৮০ জন তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন, যাদের মনোনয়নপত্রে নানা অসংগতি থাকায় সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা বাতিল করেছিলেন। চারটি আবেদন পেন্ডিং রয়েছে আর নামঞ্জুর হয়েছে ৭৬টি আবেদন। গতকাল সকাল ১০টায় নির্বাচন ভবনের ১১ তলায় নির্বাচন কমিশনে এই আপিল শুনানি শুরু হয়। ৫৪৩টি আপিল আবেদনের মধ্যে প্রথম দিন ১৬০টি আবেদনের নিষ্পত্তি করে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী শুনানি নিয়েছেন। সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শামসুল হুদার আবেদনের শুনানির মাধ্যমে কমিশনে এ কার্যক্রম শুরু হয়।

প্রথম দিন বগুড়া-৭ আসনে মোর্শেদ মিল্টন, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, পটুয়াখালী-৩ আসনে গোলাম মাওলা রনিসহ অন্তত ৩৫ জন বিএনপির প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। এদিন মোট প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৮০ জন। এদিকে চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মনোনয়নপত্র আপিলেও বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলমের বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের মনোনয়ন আপিলেও বাতিল হয়। স্বাক্ষর জালিয়াতির কারণ দেখিয়ে তার মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তা বাছাইয়ে বাদ দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে গতকাল ৭৬টি আবেদন আপিলেও বাদ পড়ে।

নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন পটুয়াখালী-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীদের আপিলের ওপর শুনানির প্রথম দিন এ সিদ্ধান্ত আসে। সদ্য আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে নাম লেখানো গোলাম মাওলা রনির মনোনয়নপত্র ২ ডিসেম্বর ‘হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকার’ কারণ দেখিয়ে বাতিল করে দেন পটুয়াখালীর রিটার্নিং কর্মকর্তা। শুনানি শেষে রনির আইনজীবী বিএনপি নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, রনিকে তার হলফনামায় স্বাক্ষরের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জামালপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী ফরিদুল কবির তালুকদারের মনোনয়নপত্রও বৈধতা পেয়েছে। এই উপজেলা চেয়ারম্যানের পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ার কারণ দেখিয়ে তার প্রার্থিতা বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।  বগুড়া-৭ আসনে খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থী গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোর্শেদ মিল্টনের মনোনয়নপত্রও একই কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনে আপিল করে তিনিও প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ার কারণ দেখিয়ে প্রার্থিতা বাতিল করা ঢাকা-১ আসনে বিএনপির খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা-২০ আসনে ধানের শীষের তমিজ উদ্দিনও আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। কিশোরগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল খেলাপি ঋণের জামিনদার হিসেবে ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে। তাকেও প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিয়েছে ইসি। এ ছাড়া পঞ্চগড়-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী ফরহাদ হোসেন আজাদও প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রার্থীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আমাদের বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মনোনয়ন ফিরিয়ে দিয়েছে কমিশন। এখন বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন ফিরিয়ে দেওয়ার ওপর আমাদের সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি নির্ভর করছে।’ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের দণ্ড নিয়ে ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার নামে এবার ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় দুই বছরের বেশি সাজা হওয়ার কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তারা তা বাতিল করেন।

ডেকে এনে তামাশা করছে ইসি— মীর মোহাম্মদ নাছির : আপিলেও মনোনয়নপত্র অবৈধ রাখার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও দলের ভাইস-চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। গতকাল নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও প্রার্থিতা ফিরে না পেয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে তামাশা করা হচ্ছে। তাদের সিদ্ধান্ত পূর্বনির্ধারিত। আমারটা একেবারে রিজেক্ট করে দিয়েছে। পেন্ডিং রাখলেও হতো।’ তিনি বলেন, ‘আগেই ভেবেছিলাম, এখানে এসে সঠিক বিচার পাওয়া যাবে না। বাইরে থেকে লোকদের ঢাকায় ডেকে এনে তামাশা মঞ্চস্থ করছে ইসি।’

উচ্চ আদালতে আপিল করব—দুলু : নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও প্রার্থিতা ফিরে না পেয়ে নাটোর-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমিও দমছি না। আইনি প্রক্রিয়ার শেষ দেখে ছাড়ব। উচ্চ আদালতে আপিল করব।’ গতকাল নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে দুলুর আপিল নাকচ করে দেওয়া হয়। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার পাইনি। সুপরিকল্পিতভাবে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।’ নাটোর-২ আসনে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিলে কনভিকশন আছে জানিয়ে ২৮ নভেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তা যাচাই-বাছাইয়ে সেটি বাতিল করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর