শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভাসমান সৌরবিদ্যুতে আলোকিত হবে দেশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ভাসমান সৌরবিদ্যুতে আলোকিত হবে দেশ

হাওর-বিল-নদীবেষ্টিত বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা আলোকিত করতে এবার সারা দেশে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ ধরনের উদ্যোগের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কাপ্তাই লেক ও তিস্তা বাঁধসংশ্লিষ্ট খালকে বেছে নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, কাপ্তাই লেকের পাশে সৌরশক্তি ব্যবহার করে ৭ দশমিক ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হবে ২২ একর জমি। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের তিস্তা বাঁধ এলাকাসংলগ্ন জলাভূমিতে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে আরও ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওরবেষ্টিত ভাটি অঞ্চলেও এ ধরনের ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ ছাড়া সমুদ্রবেষ্টিত উপকূলীয় এলাকায়ও ভাসমান সোলার প্যানেল নির্মাণ করা হবে। ফেনীর মুহুরী ড্যামে ২৫ মেগাওয়াট ও চাঁদপুরের মেঘনা-ধনাগোদা ড্যামেও ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সূত্র জানান, ভাসমান বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মতামতও চাওয়া হয়েছে। নৌপরিবহন অধিদফতর সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত মতামতে বলেছে, ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প  অত্যন্ত যুগোপযোগী পদক্ষেপ বলে প্রতীয়মান। তবে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণের আগে চারটি বিষয় বিবেচনার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। তা হচ্ছে— এক. ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জন্য কী পরিমাণ জমি দরকার এবং তা নৌপথকে সংকুচিত করার মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কিনা বিবেচনা করা জরুরি; দুই. নদীর প্রবল সে াতে সরাসরি প্রস্তাবিত স্থাপনায় আঘাতের ফলে ভাঙন সৃষ্টি করবে কিনা, করলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা আছে কিনা, নদী ভাঙনসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে তাও বিবেচনা করতে হবে; তিন. প্রকল্প থেকে সরাসরি বা প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশগ্রহণকারী বা পরবর্তীতে সেখানে অবস্থানকারীদের কারণে পরিবেশ বা জলজ প্রাণীর কোনো ধরনের ক্ষতি হবে কিনা এবং চার. ভাসমান স্থাপনার নিচে ভূমির মালিকানা কী হবে তাও উল্লেখ করা। নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ভাসমান সৌরশক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর জন্য কোনো জমি অধিগ্রহণ করতে হয় না। সরকারি জলাশয়ে নির্বিঘ্নে এ ধরনের প্লান্ট স্থাপন করা সম্ভব। অনেকে বাড়ির ছাদে এ ধরনের সৌর প্যানেল বসাতে চান। কিন্তু স্থানাভাব সেখানে একটি বড় প্রশ্ন। ছোট বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল উপযুক্তভাবে কাজ করতে পারে না। জলাশয়ের ক্ষেত্রে সে সমস্যা নেই। সিঙ্গাপুরের একটি সৌর জ্বালানি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্বব্যাংকের গবেষণা প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জমির সংস্থান। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বড় আশার আলো হতে পারে ভাসমান সোলার প্যানেল। সংশ্লিষ্টরা তাদের বিভিন্ন গবেষণায় ভাসমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, বাংলাদেশের জলাধারের পরিমাণ ৫ দশমিক ২৮ লাখ হেক্টর অর্থাৎ মোট আয়তনের ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এর যদি ২০ শতাংশ ব্যবহার করা যায় তাহলে ব্যবহৃত জলাধার হবে ১ লাখ ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর বা ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৩২ একর। প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন অনধিক ৫ একর; তাহলে ২০ শতাংশ জলাধারে ৫২ হাজার ১৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে; যা ২০৫০ সাল অবধি বাংলাদেশের সম্পূর্ণ চাহিদা মেটাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এনার্জির পরিচালক, বাংলাদেশ সোলার এনার্জি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটি সত্যি যে, আমাদের জমির অপ্রতুলতা রয়েছে, তবে প্রচুর জলাশয় রয়েছে আমাদের দেশে। এগুলো তেমন কোনো কাজেও লাগছে না। ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে একদিকে যেমন এসব নদ-নদী, জলাশয় কাজে লাগানো যাবে, তেমন এগুলো অবৈধ দখলের হাত থেকেও মুক্ত রাখা যাবে।’ নবায়নযোগ্য এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে আমরা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছি। এরই মধ্যে সরকার কাপ্তাই লেক এলাকাসহ দু-একটি স্থানে এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।

 এতে সাফল্য পেলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিল-ঝিল-হাওর-বাঁওড়ে এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা সম্ভব হবে। সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে বাংলাদেশ।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর