শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভিকারুননিসার শিক্ষিকা কারাগারে ছয় দফা মানল কর্তৃপক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা আন্দোলনের মুখে অবশেষে শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি মেনে নিয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় ক্ষমাও চেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি। এদিকে গ্রেফতারের পর অভিযুক্ত এক শিক্ষিকাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। তবে অভিযুক্ত অন্য দুই শিক্ষিকা এখনো পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিসি-পূর্ব) খোন্দকার নুরুন্নবী। তিনি বলেন, তাদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। গতকাল  ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় তাদের বিক্ষোভ। বেলা ১১টার দিকে ছাত্রীরা থেমে থেমে স্লোগান দিতে থাকে। গভর্নিং বডির সদস্যদের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করে তারা। বিকালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে ভিকারুননিসার শিক্ষক প্রতিনিধি দল। এ সময় তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলে চলমান আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

কারাগারে সেই শিক্ষিকা : স্কুলছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেফতার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সাঈদ তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে মঙ্গলবার রাতে পল্টন থানায় অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকাসহ তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী। মামলার অন্য আসামিরা হলেন ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও প্রভাতি শাখার প্রধান জিনাত আরা। বুধবার সন্ধ্যায় গভর্নিং বডির এক সভায় অভিযুক্ত এই তিন শিক্ষিকাকে বহিষ্কার করা হয়। এদিন রাত ১১টার দিকে উত্তরার একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে বিকালে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে র‌্যাব মহাপরিচালক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চিঠি পাওয়ার পরই গ্রেফতারের তৎপরতা শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি পুলিশ জানায়, গ্রেফতারের ভয়ে বাসা ছেড়ে হোটেলে আত্মগোপন করেছিলেন স্কুলটির বরখাস্ত হওয়া শিক্ষিকা হাসনা হেনা। তবে তিনি থাকতেন মগবাজারের ডাক্তারের গলিতে। মামলা হওয়ার পর পরিস্থিতি প্রতিকূলে ভেবে হাসনা হেনা ঢাকার বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। তা সম্ভব না হওয়ায় উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের হোটেল উত্তরা ইনে আত্মগোপন করেন তিনি। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ তার অবস্থান শনাক্ত করে। গ্রেফতারের পরপর নারী পুলিশ সদস্যরা তাকে মাইক্রোবাসে করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কামরুল হাসান তালুকদার এই শিক্ষিকাকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। অপরদিকে তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

ক্ষমা চাইলেন ভিকারুননিসার সভাপতি : ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার গতকাল দুপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির চত্বরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, ‘অরিত্রী অধিকারীর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। এ ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণেও দুঃখিত আমরা। অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় তার পরিবারের কাছে ক্ষমা চাই। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অধ্যক্ষসহ তিনজন শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে আমরা একমত, এসব দাবি পূরণ হওয়া উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজন হলে আমি পদত্যাগ করব।’ গভর্নিং বডির অন্য সদস্যদের পদত্যাগের দাবির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘গভর্নিং বডির বৈঠকে এ বিষয়টি উত্থাপন করব। গভর্নিং বডি ভেঙে দেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

ছাত্রীদের আন্দোলন স্থগিত : বিকালে পরিস্থিতি নিরসনে আন্দোলনকারী ছাত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষক প্রতিনিধি দল। দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে এসেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে কর্মসূচি স্থগিত করে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেয় তারা। শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র আনুশকা রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষকরা আমাদের সব দাবি পর্যায়ক্রমে মেনে নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা ক্লাসে ফিরে যাব।’ বৈঠক শেষে শিক্ষক প্রতিনিধি মুশতারী সুলতানা জানান, শিক্ষার্থীরা বলেছে, কাল (আজ) থেকে আন্দোলন না করে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবে। তিনি বলেন, ‘ছাত্রীদের ভুল বুঝিয়ে একটি পক্ষ সন্তানতুল্য ছাত্রী ও মায়ের মতো শিক্ষকদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল।’

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য : গতকাল শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তদন্ত কমিটি করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের চিহ্নিত করেছি। তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। আমি বলব, শিক্ষার্থী অরিত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে হত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের অন্য অনিয়মগুলো চিহ্নিত করছি, সেগুলোও মূল্যায়ন করে ব্যবস্থা নেব। তাদের অনিয়মের ব্যাপারে মাসব্যাপী তদন্ত করব।’ শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন-নির্যাতন করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন নাহিদ।

সর্বশেষ খবর