শনিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোটে টিকে গেলেন জ্যাকব পঙ্কজ রেজা কিবরিয়া সোহেল রানা

দ্বিতীয় দিনে টিকলেন ৭৮ জন, বাদ পড়লেন হাওলাদার

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাদ পড়াদের মধ্যে অধিকাংশ প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। আবার অনেকে আপিল করেও ভোটে ফিরতে পারেননি। গতকাল আপিল শুনানির দ্বিতীয় দিনে ৭৮ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। ৬৫টি আবেদন নামঞ্জুর এবং ৭টি পেন্ডিং রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রথম দিনে ৮০ জন প্রার্থিতা ফিরে পান। ৪টি আবেদন পেন্ডিং আর নামঞ্জুর হয়েছিল ৭৬টি আবেদন। গত দুই দিনে ৩১০টি আপিল শুনানি করে ইসি। এর মধ্যে মোট ১৫৮ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। আর আপিল নামঞ্জুর করা হয়েছে ১৪১টি। ১১টি আবেদন পেন্ডিং রয়েছে। ইসির আপিলেও যারা বাদ পড়েছেন তাদের অনেকেই উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন।     আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের ১১ তলায় গতকাল সকাল ১০টায় শুনানি শুরু হয়। জমা পড়া মোট ৫৪৩টি আপিলের মধ্যে আবেদনের ক্রমিক নম্বর অনুসারে ১৬১ থেকে ৩১০ নম্বর পর্যন্ত আপিলের শুনানি করে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী অস্থায়ী এজলাসে রয়েছেন বিচারকের আসনে। আজ শেষ দিনে ৩১১ থেকে ৫৪৩ ক্রমিক পর্যন্ত আপিল আবেদনের শুনানি হবে। সেই হিসেবে খালেদা জিয়ার শুনানি হবে আজ। আপিল শুনানির দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন হবিগঞ্জ-১ আসনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও গণফোরামের প্রার্থী রেজা কিবরিয়া, বরিশাল-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, বিএনপি প্রার্থী এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। আর বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথ ও ভোলা-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের মনোনয়নপত্র গ্রহণের বিরুদ্ধে আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ায় তাদের প্রার্থিতা টিকে গেছে। গতকাল আপিল শুনানির দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন মোট ৭৮ জন। এর মধ্যে বিএনপির ২১ জনসহ আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও রয়েছেন। এদিকে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও পটুয়াখালী-১ আসনের প্রার্থিতা ফেরত পেলেন না জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, বিএনপি প্রার্থী ডা. আবু জাফর জাহিদ হোসেন, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমরান এইচ সরকারসহ ৬৫ প্রার্থী।  অন্যদিকে ঢাকা-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান ও ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের শুনানি স্থগিত রাখা হয়েছে।

প্রার্থিতা ফিরে পেলেন যারা : হবিগঞ্জ-১ আসনের গণফোরামের প্রার্থী রেজা কিবরিয়া নির্বাচন কমিশনে আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। রিটার্নিং অফিসার বাছাইয়ে ‘ঋণখেলাপের’ অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার পক্ষ থেকে বলা হয়, সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড বিভাগ ও ঢাকা ব্যাংক থেকে পাঠানো অভিযোগের ভিত্তিতে রেজার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। শুনানি শেষে রেজা সাংবাদিকদের বলেন, তিনি কখনো ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেননি, তার ঋণও বকেয়া নেই। তিনি বলেন, আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আশা করছি সবাই পাবেন। আপিল মঞ্জুর হওয়ায় এখন ইসির ওপর আস্থা রাখতে পারছেন কিনা— এমন প্রশ্নে রেজা কিবরিয়া বলেন, এ প্রশ্নটা নির্বাচনের পরদিন করলে তার উত্তর দিতে পারব।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানরীপাড়া) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ৪১৪৭ টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার। বকেয়া থাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছিলেন সোহেল রানা। শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশন তা মঞ্জুর করায় আশির দশকের জনপ্রিয় এই চিত্রনায়ক প্রার্থিতা ফিরে পান। পরে সোহেল রানা সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিলের কিছু টাকা বাকি ছিল। তা পরিশোধ করে দিয়েছি। আদালতের ওপর শ্রদ্ধা আছে বলেই আমি আবেদন করেছি এবং প্রার্থিতা ফিরে পেলাম। বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথের মনোনয়নপত্র গ্রহণের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন মেজবাহ উদ্দিন সরকার ও মাহাবুব আলম। শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশন তাদের আপিল নামঞ্জুর করলে পঙ্কজ দেবনাথের প্রার্থিতা টিকে যায়। আপিলকারীদের অভিযোগ ছিল— ২০০৭ সালে একটি দুর্নীতি মামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথের ১৩ বছরের সাজা হয়েছিল। সেই তথ্য তিনি মনোনয়নপত্রে গোপন করেছেন। শুনানি শেষে পঙ্কজ দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, সেই মামলায় আমি খালাস পেয়েছি। আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চে লিভ টু আপিল গ্রহণ করা হয়নি। আমার বিরুদ্ধে ১/১১ এর কুশীলবরা যে অভিযোগ এনেছিল, তা ভিত্তিহীন, অসত্য, মিথ্যা ছিল। সর্বোচ্চ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে আমি নিরপরাধ। কিন্তু হাই কোর্টের রায় গোপন করে আমার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন তারা। আমার আইনজীবীরা সত্যটা তুলে ধরতে পেরেছেন, তাই প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছি। এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আপিল করা, তার শুনানি— এটাও নির্বাচনী উৎসবের অংশ। ভোলা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ এনে তার মনোনয়নপত্র গ্রহণের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করেছিলেন বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আলম। শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশন তা নামঞ্জুর করলে জ্যাকবের ভোটের পথে বাধা কেটে যায়।

আমান-আফরোজা ঝুলেই রইলেন : ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা আব্বাসের আপিল আজ পুনঃশুনানির জন্য পেন্ডিং রাখা হয়েছে। ঋণখেলাপের দায়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল। আইনজীবী জয়নুল আবেদীন গতকাল আফরোজা আব্বাসের পক্ষে শুনানি করেন। এ সময় মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা এবং তার স্বামী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবী জয়নুল আবেদীনের বক্তব্য শুনে কমিশন এ আপিল পেন্ডিং রাখে। তখন আইনজীবী প্রশ্ন করেন, আমরা আপিলের রায় কবে জানতে পারব? তখন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, শনিবার এই আপিলের শুনানি নিষ্পত্তি করা হবে। তিনি বলেন, এটি পেন্ডিং রাখা হলো। মূল নথি তলব করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মূল নথি নিয়ে পর্যালোচনা করে কালকে পুনঃশুনানি গ্রহণ করে নিষ্পত্তি করা হবে। এদিকে ঢাকা-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের মনোনয়ন ঝুলেই রয়েছে। গতকাল আপিলের শুনানি হলেও তারটি স্থগিত রাখা হয়েছে। পরে এ বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী দ্বিতীয় দিন মনোনয়ন ফিরে পেয়েছেন যারা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ মো. মুসলিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৮ হাসান মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৭ মো. আবু আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ মো. গিয়াস উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আবদুল খালেক, কুমিল্লা-১০ মো. শাহজাহান মজুমদার, চাঁদপুর-৫ খোরশেদ আলম খুশু, বরিশাল-২ এ কে ফাইয়াজুল হক, পটুয়াখালী-১ মো. আবদুর রশিদ, বরিশাল-১ মো. বাদশা মিয়া, বরগুনা-১ মো. মতিয়ার রহমান তালুকদার, ভোলা-১ গোলাম নবী আলমগীর। বরিশাল-২ মাসুদ পারভেজ, ঝালকাঠি-১ বজলুল হক হারুণ (তার মনোনয়ন বাতিল করতে আপিল করা হয়। শুনানিতে সেই আপিল খারিজ হয়ে যায়), পটুয়াখালী-২ মো. শহিদুল আলম তালুকদার, বরিশাল-২ সৈয়দ রুবিনা আক্তার, ভোলা-৪ নাজিম উদ্দিন আলম, বরিশাল-৪ মাহাবুবুল আলম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ মো. ছাইফুল্লাহ (হুমায়ুন মিয়া)। ঢাকা-১৬ এর আলহাজ এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকা-৩ মোহাম্মদ সুলতান আহম্মদ খান, কিশোরগঞ্জ-২ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, কিশোরগঞ্জ-৬ মোহাম্মদ মুছা খান, টাঙ্গাইল-৮ মোহাম্মদ আ. লতিফ মিয়া, নরসিংদী-২ জাইদুল কবীর, কিশোরগঞ্জ-১ খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেন খান, গাজীপুর-৩ মোহাম্মদ জহিরুল হক মণ্ডল বাচ্চু, মানিকগঞ্জ-২ মঈনুল ইসলাম খান, শরীয়তপুর-৩ সুশান্ত ভাওয়াল, কিশোরগঞ্জ-২ নূরুল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ-১ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, কিশোরগঞ্জ-৩ ডা. এনামুল হক। নারায়ণগঞ্জ-৪ মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, টাঙ্গাইল-৬ মোহাম্মদ আবুল কাসেম, টাঙ্গাইল-৭ সৈয়দ মজিবর রহমান, শরীয়তপুর-২ মোহাম্মদ বাদল কাজী, মাদারীপুর-১ মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, নারায়ণগঞ্জ-৪ মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন খোকা, টাঙ্গাইল-৬ ব্যারিস্টার এম আশরাফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-৬ মামুনুর রহমান, টাঙ্গাইল-৩ এস এম চান মিয়া, মাদারীপুর-২ আল আমিন মোল্লা, ঢাকা-৮ এস এম সরওয়ার। মাদারীপুর-১ আসনের নাদিরা আক্তার, ঢাকা-১ ফাহিমা হুসাইন জুবলী, কিশোরগঞ্জ-১ মোহাম্মদ আবদুর রহমান, কিশোরগঞ্জ-৩ সাইফুল ইসলাম সুমন, ঢাকা-৮ মাহমুদা রহমান মুন্নী, ঢাকা-১৬ মোহাম্মদ আমানত হোসেন, সিলেট-৫ এম এ মতিন চৌধুরী, সিলেট-৫ সেলিম উদ্দিন, মৌলভীবাজার-১ এবাদুর রহমান চৌধুরী। সুনামগঞ্জ-৪ আসনের মোহাম্মদ দিলোয়ার, সুনামগঞ্জ-৪ দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন, হবিগঞ্জ-১ রেজা কিবরিয়া, সুনামগঞ্জ-৪ মোহাম্মদ আজিজুল হক, হবিগঞ্জ-১ অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল হান্নান, কিশোরগঞ্জ-৫ সেলিনা সুলতানা, টাঙ্গাইল-৬ নূর মোহাম্মদ খান, কিশোরগঞ্জ-২ এরশাদ হোসাইন, ঢাকা-১৮ সাইফুদ্দিন আহমেদ খান, টাঙ্গাইল-৩ মোহাম্মদ আতাউর রহমান খান, টাঙ্গাইল-৬ সুলতানা মাহমুদ, ঢাকা-১৮ শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, ঢাকা-১ শামসুদ্দিন আহমেদ, মানিকগঞ্জ-২ এস এম আবদুল মান্নান। ঢাকা-২ আসনের সুকান্ত শফি চৌধুরী, ফরিদপুর-৪ আতাউর রহমান, শরীয়তপুর-১ সবদার এ কে এম নাসির উদ্দিন, কুড়িগ্রাম-৪ মোহাম্মদ জাকির হোসেন, রংপুর-২ শ্রী কুমারেশ চন্দ্র রায়, ময়মনসিংহ-৮ মাহমুদ হাসান সুমন, জামালপুর-১ এম রমিদুজ্জামান মিল্লাত, ময়মনসিংহ-১ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, ময়মনসিংহ-১১ মোহাম্মদ আমান উল্লাহ সরকার, নেত্রকোনা-১ মোহাম্মদ এম এ করিম আব্বাসী ও ময়মনসিংহ-৫ জহিরুল ইসলাম।

সর্বশেষ খবর