শনিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
তিন শতাধিক সাবেক কর্মকর্তার একাত্মতা

স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় এলে উন্নয়নের গতি থামিয়ে দেবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা চাই না খুনিদের দল, যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় আসুক। এরা ক্ষমতায় এলে যে উন্নয়ন এত দিন হয়েছে এবং যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে, তার গতি থামিয়ে দেবে। গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে সাবেক ৩ শতাধিক বেসামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন  তিনি। অবসরপ্রাপ্ত ৩০৭ জন সরকারি কর্মকর্তা আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন জানাতে এ সাক্ষাতে আসেন। এ সময় নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করেন তারা। সাবেক সরকারি এসব কর্মকর্তার মধ্যে ছিলেন সিনিয়র সচিব ৫৮ জন, সাবেক রাষ্ট্রদূত ৯ জন, যুগ্ম/উপসচিব পর্যায়ের ৭৫ জন, স্বাস্থ্য ক্যাডারের ১৪ জন, শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ জন, প্রকৌশলী ২৭ জন, বন ও ডাক বিভাগের ১১ জন, পুলিশ ক্যাডারের ১০ জন, কর ও তথ্য ক্যাডারের ১৩ জন, কৃষি ৬৭ জন, টেলিকম, শুল্ক, রেলওয়ে, খাদ্যসহ অন্যান্য কাডারের ১১ জন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কাজ করলেই জনগণ ভোট দেবে, এমন নয়। ১০ বছরে আমরা যে উন্নয়ন করেছি, তা জনগণকে বার বার মনে করিয়ে দিতে হবে। নইলে মানুষ তা ভুলে যায়। কারণ ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনেরও পরিবর্তন হয়। তিনি বলেন, আমরা ধ্বংসের দিকে যেতে চাই না, আমরা উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যেতে চাই। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে কোনো সরকার মেয়াদ পূর্ণ করে একবারও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেনি। ৫ বছর দায়িত্ব পালন শেষে ২০০১ সালে একমাত্র আমিই সেটা করতে পেরেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে যাওয়ার পরপরই আমাদের সময়ে দায়িত্ব পালন করা ১৩ জন সচিবকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। এমনকি অফিস থেকে বঙ্গভবনে গিয়েছেন যারা, তারা অফিসে গিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেবেন, সে সুযোগটাও দেওয়া হয়নি। সামরিক প্রশাসনেও এমনটা করা হয়েছে। চাকরির মেয়াদ থাকলেও ২৫ বছর পর্যন্ত ওএসডি করে রাখা হয়েছিল। তাদের অপরাধ ছিল আমাদের সময়ে তাদের পদোন্নতি দিয়েছি। এ সময় ৯৬ এ জনতার মঞ্চ গড়তে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবদানের কথা স্মরণ করেন তিনি। ২০০১ সালের নীলনকশার নির্বাচন ও বিএনপির জুলুম-নির্যাতনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সম্পদ গ্যাস বিক্রি করিনি। আমেরিকার কোম্পানি গ্যাস বিক্রি করবে, ভারত সেটা কিনবে। আমি রাজি হইনি। এতে দুটি দেশই আমাদের প্রতি বিগড়ে গেল। ফলে ওই নির্বাচনে হাতে ধরে আমাদের হারানো হলো। আমরা কিন্তু ভোটে হারিনি। এত বাধার পরও আমরা অনেক ভোট পেয়েছি। কিন্তু সিটে আমাদের হারানো হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে আমি একটা ডকুমেন্ট পেয়েছিলাম। সেখানে দেখলাম তখনই চিহ্ন দেওয়া ছিল যে, কোন কোন সিট আমাদের দেওয়া হবে, আর কোনটি দেওয়া হবে না। কোনোটা লাল, কোনোটা কালো, কোনোটা হলুদ, সবুজ কালিতে দাগ দেওয়া ছিল। এইভাবে তৈরি করা ছিল। সেখান থেকে বোঝা যায় যে, নির্বাচনটা তখন কেমন হয়েছিল। সাম্প্রতিক সংলাপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক। কিন্তু অনেক অপমান, নির্যাতন সহ্য করার পরেও অন্যান্য রাজনৈতিক দল যখন চাইল আমরা দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় নিয়ে তাদের সঙ্গে সংলাপে বসলাম। আমরা যেহেতু জনগণের জন্য কাজ করেছি, জনগণ খুশি হয়ে ভোট দিলে আছি, না দিলে  নেই। দেশের ভাগ্যটা পরিবর্তন হোক, আমরা সেটাই চাই। আজকে দেশের মানুষ বুঝতে পারে তাদের জন্য কারা কাজ করেছে। তার পরেও যত কাজই করি না কেন, শুধু কাজ করলেই যে দেশের মানুষ ভোট দেবে, তা কিন্তু নয়। মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতে হয়। তাদের বলতে হয় যে, এই সরকার আপনাদের জন্য এই কাজ করেছে। কাজেই এই সরকারকে আগামীতে আরও ভোট দিতে হবে। এই তথ্য বার বার পৌঁছে দিতে হবে, উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আমরা রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। তার পরও আমরা ভোট পেলাম না। কাজেই শুধু উন্নয়ন করলেই হয় না। মনে করিয়ে দিতে হয় যে, আমরা তোমাদের জন্য এটা করেছি। এ সময় মঞ্চে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ নেতারা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্যসচিব  ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব ৭৩ ব্যাচের কর্মকর্তা আবু তাহের, এম এম আলী কবীর, বেগম কামরুন নেসা খানম, অশোক মাধব রায়, আজিজুর রহমান, আনছার আলী খান, ড. খন্দকার শওকত হোসেন, কৃষিবিদ ওয়াছিউজ্জামান আকন, সাবেক রাষ্ট্রদূত আবদুল হান্নান, স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা প্রফেসর নোমান-উর রশীদ, প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভুঁইয়া, সাবেক আইজিপি সামসুজ্জোহা খন্দকার প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর