শিরোনাম
রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিদ্রোহীদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি আওয়ামী লীগের

শেখ হাসিনার খোলা চিঠি, চলছে দেনদরবার-আলোচনা

রফিকুল ইসলাম রনি

বিদ্রোহীদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি আওয়ামী লীগের

দলীয় ও মহাজোট মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছে আওয়ামী লীগ। তাদের  প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য তাগিদ ও দেনদরবার করছেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই উদ্যোগী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীদের সরাতে। তিনি তাদের উদ্দেশে দেওয়া খোলা চিঠিতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত নৌকা কিংবা মহাজোট মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে ২৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থীকে শনাক্ত করেছে দলের হাইকমান্ড। আজকের মধ্যেই বিদ্রোহীরা সরে দাঁড়াবেন বলে আশাবাদী দলের নীতিনির্ধারকরা। তবে কেউ নির্দেশ অমান্য করলে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। জানা গেছে, দল বা জোটের মনোনয়ন না পেয়ে ৯৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে গত ২ ডিসেম্বরের যাচাই-বাছাইয়ে অর্ধেকের বেশি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। অন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাঁচ নেতা। তাদের হস্তক্ষেপে এরই মধ্যে কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। গতকালও ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে বসে বিভিন্ন এলাকার বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ অন্যরা। কারও কারও সঙ্গে কথা বলেছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব বিদ্রোহীর উদ্দেশে গত ৭ ডিসেম্বর খোলা চিঠি দিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী নিশ্চিত করার ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। ইতিমধ্যে ২৪ জন বিদ্রোহীকে শনাক্ত করেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন এবং নৌকার পক্ষে কাজ করবেন।’  দলীয় সূত্রমতে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় অনেক আসনেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট বা জাতীয় পার্টির একাধিক প্রার্থী ছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করার জন্যই সে সময় বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে রাখে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এবার বিএনপি অংশগ্রহণ করায় প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে চায় দলটি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। বেশ অগ্রগতি হয়েছে। অনেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। আজকের মধ্যে কেউ কেউ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আশা করছি প্রতিটি আসনেই একক প্রার্থী থাকবে। দল ও মহাজোটকে ক্ষমতায় আনতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে।’

বিদ্রোহীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনার চিঠি : চিঠিতে শেখ হাসিনা লিখেন, আওয়ামী লীগ এই জনপদের একটি ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রমের মতো যে কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াও পরিচালিত হয় একটি সুনির্দিষ্ট গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের সুচিন্তিত মতামত, তৃণমূল নেতাদের পরামর্শ এবং আমাদের সংগঠন কর্তৃক একাধিক নিবিড় জরিপ কার্যক্রমের সুপারিশ ভিত্তিতে দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির জন্য প্রায় ৪ হাজারের অধিক ব্যক্তি আবেদন দাখিল করেছিলেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাদের প্রায় সবারই ত্যাগ ও অবদান রয়েছে। রাজনৈতিক ত্যাগ, দক্ষতা, যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার বিচারে প্রায় প্রত্যেকটি আসনেই ছিল একাধিক যোগ্য প্রার্থী। একাধিক আবেদনকারীর মধ্য থেকে একজনকে প্রার্থী হিসেবে নির্ধারণ করার কাজটি ছিল অত্যন্ত কঠিন ও দুরূহ। আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটি আবেদনপত্র ও প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত এবং মাঠপর্যায়ের জরিপের ফলাফল পর্যালোচনা করে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। আমাদের সংগঠনের মনোনয়ন প্রদানের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া ও সংসদীয় বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে মনোনয়ন দিতে না পারায় আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে একটি শক্তিশালী ও কল্যাণমুখী রাজনৈতিক দলে পরিণত করার কাজে আপনার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও দেশের কল্যাণে আপনার নিরবচ্ছিন্ন ভূমিকার জন্য আপনাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও প্রাণপ্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগের প্রতি আপনার ভালোবাসা-আনুগত্য-বিশ্বস্ততা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। বিএনপি জামায়াতের হিংস্র থাবা থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে বাংলাদেশকে টেকসই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠার জন্য আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমরা সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আপনার কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে আপনার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে মহাজোটকে বিজয়ী করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন। আপনার ত্যাগ, শ্রম ও আন্তরিকতা সবকিছুই আমার বিবেচনায় আছে। তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে আবারও বাংলাদেশের জনগণের সেবা করার সুযোগ পাবে। সেই বিজয়ের অংশীদার হবেন আপনিও।

সর্বশেষ খবর