বুধবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হেলাফেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হেলাফেলা

এম সাখাওয়াত হোসেন

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, নির্বাচন যেন এখন একটা ‘ফান প্লেস’ এ পরিণত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা হেলাফেলা করছি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন জোকারদের অন্তর্ভুক্তি ঘটছে। তিনি নাম উল্লেখ না করে বলেন, মিডিয়ায় দেখলাম এমন একজনের মনোনয়ন নির্বাচন কমিশন থেকে বাদ দেওয়ার পর কোর্ট থেকে আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তারপরও বলব— আসন্ন নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে এখনো যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। জনমনে প্রশ্ন— নির্বাচন হবে তো! আমরা ভোট দিতে পারব তো?

গতকাল সকালে রাজধানীর ইস্কাটনে বিস্্ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ননেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক সেমিনারে ড. সাখাওয়াত হোসেন এসব কথা বলেন। আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান ড. আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক- (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসাইন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব এ এইচ মোফাজ্জল করিম, প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমির, প্রফেসর সাহাব ইনাম খান, ড. সিনহা এম এ সাইয়িদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সাইফুল্লাহ, ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী, জানিপপ চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, এফবিসিসিআই পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী, আয়েশা কবির ও সালেহ আহমেদ তিথা প্রমুখ। মূল প্রবন্ধে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন যদি ফেয়ার না হয়— তাহলে হতাশায় লাখ লাখ তরুণ বিপথগামী হতে পারে। আল্লাহ পাক যেন সেটি না করেন। তাহলে দেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

 ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, হতাশার কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা এখন এমন অংশগ্রহণমূলকই হতে যাচ্ছে যে, তাকে আবার নুতন করে চিন্তা করতে হচ্ছে। শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের ফলাফল যে কী হবে তা আমরা সবাই বুঝতে পারছি। এখন শুধু কোন দল বিরোধী দলে বসবে সে প্রতিযোগিতাটাই হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। বিএনপি নাকি এরশাদের জাতীয় পার্টি। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি একদিনে তৈরি হয়নি। এ জন্য পর্যায়ক্রমে সবগুলো সরকারই কমবেশি দায়ী। তাই যেসব অভিযোগ উঠছে— সেগুলোর রাতারাতি (ওভার নাইট) কোনো সমাধান সম্ভব নয়। ধাপে ধাপেই সবকিছুর সমাধান হবে। নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে পরীক্ষার ফল আগেই প্রকাশ হয়ে যায় সে পরীক্ষার প্রতি আর কোনো আকর্ষণই থাকে না। জাতি ২০১৪ সালের ভুলের খেসারত দিচ্ছে। ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন বলেন, দেশে যে আইনের শাসন আছে, নির্বাচন কমিশন যে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে সেটি এখন বোঝা যাচ্ছে। আদালতের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। মোফাজ্জল করিম বলেন, জনগণ এখন সিদ্ধান্ত পাল্টেছে। তারা আগেভাগে এত রিহার্সেল না দিয়ে আগামী ৩০ ডিসেম্বর সরাসরি স্টেজে- গিয়েই মেরে দেবে মনে হচ্ছে। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, বিদেশিরা এখন বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে হতাশ। দ্য ইকোনমিস্টে লিখেছে বাংলাদেশের সরকার সে দেশের বিরোধী দলকে ছাগল থেকে একেবারে খাসি বানিয়ে দিয়েছে। সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বাংলাদেশে এখন এমন কালচার তৈরি হয়ে গেছে যে, নির্বাচন থেকে শুরু করে সবই সরকারি দলের জন্য একেবারে ফ্রি। আর বিরোধী দলের জন্য অত্যন্ত কঠিন। নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান শর্তই হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করা। ইসি সেটা করার চেষ্টা করছে। রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে সবাইকে সহযোগিতা দিতে হবে। তবেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। ড. আসিফ নজরুল বলেন, কোন দল ক্ষমতায় এলো সেটি বড় কথা নয়, এবারের নির্বাচনটা হলো মানুষ ঠিকমতো তার ভোটটা দিতে পারল কিনা এবং তা ঠিকমতো কাউন্ট হলো কিনা! তা নিশ্চিত করার নির্বাচন।

সর্বশেষ খবর