শুক্রবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ক্ষমতায় এলে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু

রাজবাড়ীতে জনসভায় শেখ হাসিনা

রফিকুল ইসলাম রনি, গাড়িবহর থেকে

ক্ষমতায় এলে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দল আগামীতে ক্ষমতায় এলে প্রয়োজনে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে, বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিল বলেই গত ১০ বছরে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের রোল মডেল। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। শেখ হাসিনা গতকাল দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, দেশবাসীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আগামীতে দেশ উন্নয়নের পথে যাবে নাকি আবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবে, জঙ্গিবাদ, বাংলাভাইয়ের জন্ম হবে। উন্নয়ন ও শান্তি চাইলে নৌকায় ভোট দিন। দিনভর টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার ফেরার পথে সাতটি নির্বাচনী সভায়ও তিনি একই আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশের সব উন্নয়ন ধ্বংস করে দেবে, খুন-সন্ত্রাস-দুর্নীতি-জঙ্গিবাদের মাধ্যমে দেশকে আবারও অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে। তাই দেশের মানুষ আর অন্ধকারের যুগে ফিরে যেতে চায় না, দেশবাসী চায় নৌকায় ভোট দিয়ে আলোর পথেই এগিয়ে যেতে। দেশের শান্তি-স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে উন্নয়ন হবে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অন্ধকার থেকে আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি, এই উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির পথে যাত্রার ধারাবাহিকতা যাতে অব্যাহত থাকে সে জন্য আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করুন। রাজবাড়ী-১ আসনে কাজী কেরামত আলী এবং রাজবাড়ী-২ আসনে জিল্লুল হাকিমকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করার জন্য জেলার ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েই তা মিথ্যা প্রমাণ করেছি। রাজবাড়ীর মানুষের দাবি আছে, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করার। আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারলে প্রয়োজনে এখানে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। ইতিমধ্যে আমরা সম্ভাব্যতা যাচাই করছি। এদিকে মানিকগঞ্জে পৃথক দুটি নির্বাচনী সভায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দেন। শেখ হাসিনা বলেন, তার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। তিনি বাবা-মা, ভাইসহ সবাইকে হারিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করছেন, যাতে দেশের মানুষ একটু ভালো থাকে। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মের জন্য আমরা একটা উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ রেখে যেতে চাই। আগামীতে ক্ষমতায় এলে দেশের কারও ঘর অন্ধকার থাকবে না, কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। এ জন্য আরেকটিবার দরকার আওয়ামী লীগ সরকার।

বৃহস্পতিবার সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকায় ফেরার পথে পাঁচটি জেলার সাতটি নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আরও বলেন, যদি দেশের উন্নয়নের গতি আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চান, দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান, তাহলে নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আরেকটিবার দেশসেবার সুযোগ দিন। একমাত্র নৌকাই দেবে উন্নয়ন, গতিশীলতা আর মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন। নৌকা না থাকলে এসব থাকবে না, সবকিছু ধ্বংস করে দেবে। তিনি বলেন, খুনি, সন্ত্রাসী, বিদেশে অর্থ পাচারকারী, অগ্নিসন্ত্রাসকারী, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী, স্বাধীনতাবিরোধী ও এতিমের টাকা আত্মসাৎকারীরা (বিএনপি-জামায়াত) আর যাতে ক্ষমতায় যেতে পারে, দেশকে আবারও ধ্বংস করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত তরুণ সমাজের জন্য উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনই আগামীতে আমাদের মূল লক্ষ্য। নির্বাচনে বিজয়ী হলে তরুণ সমাজ বিশেষ করে আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলব। দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, আগামী ৩০ জানুয়ারির নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে আপনাদেরই (দেশবাসী) সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনারা কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান? বাংলাদেশে আবারও জঙ্গিবাদ, বাংলাভাই, একই দিনে পাঁচশ’ স্থানে বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, সন্ত্রাস, দুর্নীতির মতো অতীতের অন্ধকারের দিকে ফিরে যাবেন, নাকি জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-মাদক-দুর্নীতিমুক্ত বর্তমানের উন্নয়নের আলোর পথেই থাকবেন? সেই সিদ্ধান্ত আপনাদেরই নিতে হবে। সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে দোয়া, মোনাজাত করার পর সকাল ৯টার দিকে টুঙ্গিপাড়া থেকে সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পথিমধ্যে ফরিদপুর মালিগ্রাম ভাঙ্গার মোড়, ফরিদপুরের কমরপুর মোড়, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ পৌরসভা মোড়, ধামরাই রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ এবং সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে সাতটি পৃথক নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিয়ে এসব আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করার জন্য প্রধানমন্ত্রী উদাত্ত আহ্বান জানান।

ফরিদপুর বিভাগ প্রক্রিয়াধীন : ফরিদপুরের কোমরপুরের নির্বাচনী সভায় ফরিদপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ‘ফরিদপুর বিভাগ’ করার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ফরিদপুরবাসীকে কোনো দাবি করতে হবে না। জাতির জনককে হত্যার পর কেউ এ এলাকার উন্নয়ন করেনি। অনেকেই মন্ত্রী হয়েছিল। আগে ফরিদপুরকে ফকিরপুর বলা হতো। এখন আর ফকিরপুর নেই, সত্যিই উন্নত ফরিদপুর হয়েছে। ফরিদপুর বিভাগ ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, ফরিদপুরকে বিভাগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চলছে। একটি জেলা নিয়ে বিভাগ করা যায় না। সে কারণে অন্যান্য জেলার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। আগামীতে ক্ষমতায় এলে ফরিদপুরকে বিভাগ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর-৩ আসনে বর্তমান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নৌকায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করার জন্য আহ্বান জানান।

মানিকগঞ্জে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম ও অর্থনৈতিক জোন করা হবে : পাটুরিয়া ঘাটে আয়োজিত সমাবেশে মানিকগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এ এম নাইমুর রহমান দুর্জয়কে বিজয়ী করার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকাই দেবে উন্নয়ন, গতিশীলতা ও মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন। নৌকা না আসলে এসব কিছুই থাকবে না, সবকিছু ধ্বংস করে দেবে। বিএনপি ক্ষমতায় থেকে দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে, আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে সারা বিশ্বে দেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, মানিকগঞ্জে অনেক মানিক আছে। আমরা কিছু মানিক কুড়িয়ে এনেছি। নাইমুর রহমান দুর্জয় ক্রিকেটের একটি মানিক। তিনি আপনাদের এমপি। মমতাজ বেগম আরেকজন মানিক। তিনি গানের শিল্পী।

নৌকায় ভোট চাইলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ ও ফেরদৌস : নৌকায় ভোট চাইলেন রুপালি পর্দার জনপ্রিয় দুই নায়ক রিয়াজ ও ফেরদৌস। এ দুই তারকাই শেখ হাসিনার নির্বাচনী সফরসঙ্গী হয়েছেন। সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৭টি নির্বাচনী জনসভায় মঞ্চে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করেন। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দঘাটে স্থানীয় জনসভায় রিয়াজ বলেন, সামনে নির্বাচন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ন। এই নির্বাচনে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আসতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বিশেষ করে তরুণ সমাজের প্রথম ভোট স্বাধীনতার পক্ষে, বাংলাদেশের পক্ষে হোক। নৌকায় ভোট দিন।

৩০ গাড়ির ফেরিভাড়া দিলেন প্রধানমন্ত্রী : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী সফরে বের হন গত বুধবার। নির্বাচনী সফরে তিনি সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেননি। প্রথম দিনের মতো গতকাল দ্বিতীয় দিনেও তিনি ব্যক্তিগত গাড়ি, ড্রাইভারসহ যাবতীয় খরচ নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করেছেন। গতকাল সকালে টুঙ্গিপাড়া থেকে সড়কপথে ঢাকায় ফেরেন। ফেরার পথে রাজবাড়ীর পাটুরিয়া ফেরিঘাটে নিজের গাড়িসহ দুটি ফেরিতে তার সফরসঙ্গী ৩০টি গাড়ির ভাড়া নিজস্ব তহবিল থেকে পরিশোধ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেননি।

সাতটি পৃথক নির্বাচনী জনসভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে আফজাল হোসেন, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, আবদুস সবুর, যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, মোল্লা মো. আবু কাওছার, ইসহাক আলী খান পান্না, লিয়াকত সিকদার, মাহমুদ হাসান রিপন, সাইফুর রহমান সোহাগ, এসএম জাকির হোসাইন, নাজমা আকতার, মাহমুদা বেগম ক্রিক, শেখ সোহেল রানা টিপু, স্থানীয় নেতাদের ও এমপি প্রার্থীদের মধ্যে জাহিদ মালেক স্বপন, মমতাজ বেগম, গোলাম মহীউদ্দীন, আব্দুস সালাম, জিল্লুল হাকিম, কাজী কেরামত আলী, বেনজির আহমেদ, ডা. এনামুর রহমান, সুবল চন্দ্র সাহা, ঝর্না হাসান, নাজমুল হাসান লেভী, বরকত ইবনে সালাম, সামচুল আলম প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর