শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ড. কামালের গাড়িতে হামলা বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ড. কামালের গাড়িতে হামলা বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ

গতকাল মিরপুরে ড. কামাল হোসেনের গাড়িতে হামলা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা বেড়েই চলেছে। গতকালও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া বা পুলিশের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ হয়েছে। ঢাকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের গাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বহরে থাকা কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া এ দিন সারা দেশে অন্তত অর্ধশত নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের বড় অংশই বিএনপি জোট বা ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মী।

ঢাকা : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে দলীয় ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যান ড. কামাল হোসেন। ফেরার পথে তার গাড়িতে অতর্কিত হামলা  চালায় দুর্বৃত্তরা। সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানো শেষে বের হওয়ার সময় অনেক মানুষের জটলা দেখতে পাই। আমি আগে নিরাপদে বের হয়ে গেলেও পেছনে ড. কামাল হোসেন ও আ স ম রবের গাড়ি হামলার শিকার হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকে ড. কামাল হোসেনের গাড়ি রাখা ছিল। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি যখন গাড়িতে বসতে যাচ্ছিলেন, তখন আচমকা গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। ড. কামালের পেছনে যারা হেঁটে আসছিলেন, তাদেরও মারধর করা হয়। এ সময় পেছনে থাকা নেতা-কর্মীরা ড. কামালকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাদেরও বেধড়ক পেটানো হয়। এতে নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে বেশ কয়েকটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। এ ঘটনায় কয়েকজন মাথায় আঘাত পান। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় গুরুতর আহত কয়েকজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হামলার ছবি তুলতে গিয়ে কয়েকজন ফটোসাংবাদিকও আহত হন। গণফোরামের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর লতিফুল বারী হামীমের অভিযোগ, ড. কামাল, আ স ম রবসহ ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বের হওয়ার সময় হামলার শিকার হন।

ড. কামালের সংবাদ সম্মেলন : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘কেউই চিরস্থায়ী নয়, আমি তোমাদের (পুলিশের) একাডেমিতে বক্তৃতায় বলেছি, এখনো বলছি— কেউ বেআইনি আদেশ মানবে না। তিনি বলেন, সংবিধানে প্রথম স্বাক্ষর জাতির জনকের। তোমরা বঙ্গবন্ধুর আদেশ অমান্য করছ? জেনে রেখ— কেউ চিরস্থায়ী নয়। তোমরা ৫০-৫৫ বছর চাকরি করবে, বুঝে নিও, সংবিধান ভঙ্গ করার কাজ কর না। কার আদেশে এমন কাজ করছ তা আমাকে জানাও।’ গতকাল বিকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, ড. রেজা কিবরিয়া, জগলুল হায়দার আফ্রিক, আ ও ম শফিকউল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  অবিলম্বে এ ঘটনার তদন্ত চেয়েছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে হামলার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভের কাছে এ হামলার ঘটনাকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গুরুতর অপমান বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। এর মাধ্যমে শহীদদের প্রতি অবমাননা করা হয়েছে। নির্বাচনের প্রচারাভিযান শুরুর পর বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল বলেন, ‘এসব পুলিশ কার আদেশে যারা (প্রার্থীরা) আইনানুগভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, কাজ করছেন— তাদেরকে কেন এসে তারা (পুলিশ) চ্যালেঞ্জ করে, বাধা দেয়, কেন গ্রেফতার করে। চারদিকে এখন শুধু এই অ্যারেস্ট অ্যারেস্ট আর অ্যারেস্ট। আমি প্রত্যেকটা অ্যারেস্টের তথ্য চাই।’ সারা দেশে গণহারে গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যারা বেআইনি আদেশ দিচ্ছে তাদের দেশের মানুষ চিহ্নিত করে রাখছে। আগামীতে তাদের প্রত্যেকের বিচার হবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার আর মাত্র ১৬ দিন ক্ষমতায় আছে। তাদের বলব, বেআইনি আদেশ দেওয়া বন্ধ করুন, আপনারা আইন মেনে চলুন। সরকার আইনের ঊর্ধ্বে না। জেনে রাখুন— এই দেশে কোনো সরকার আইনের ঊর্ধ্বে না।’ গণমাধ্যমকে দেশের স্বার্থে জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ জানান। জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘ওরা ভেবেছে ভয় দেখিয়ে আমাদেরকে নির্বাচনের বাইরে রাখবে। সে জন্য আজকে এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। কতগুলো ছেলেকে আহত করেছে। এই হামলা পরিকল্পিত।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ফ্ল্যাগ লাগিয়ে গোপালগঞ্জ গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করবেন, আর আমাদেরকে প্রচারণা করতে দেওয়া হবে না।  এটা কী মগের মল্লুক? প্রধানমন্ত্রী যদি ফ্ল্যাগ ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে ড. কামাল হোসেনকেও প্রটোকল দিতে হবে।’ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আমরা বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল প্রত্যাহার করা হোক, মন্ত্রীদের সব প্রটোকল বন্ধ করা হোক।’

ড. কামালের বিরুদ্ধে ইবি থানায় জিডি : ড. কামাল হোসেনের নামে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। জিডিটি করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও দৈনিক বাংলাদেশ সময় পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ড. মিঠুন মুস্তাফিজ। বাংলা নিউজ। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি লিখিত অভিযোগ করলে সেটাকে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নেয় ইবি থানা পুলিশ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ বলেন, বুদ্ধিজীবী দিবসে ঢাকার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের ভর্ত্সনা করেছেন। তার বক্তব্য সাংবাদিকদের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড. কামালের বিরুদ্ধে মিঠুন মুস্তাফিজ মামলা করতে এলে আমরা তার অভিযোগটি নিয়ে একটি জিডি করে ডিএমপি অন্তর্ভুক্ত দারুস সালাম থানায় পাঠিয়েছি। তারা পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

কুমিল্লা : কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর আসনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের ছোট ভাই কে এম মজিবুল হকের নির্বাচনী প্রচারে হামলা হয়েছে। গতকাল বিকালে মুরাদনগর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল ৫টার দিকে মুরাদনগর বাজারে গণসংযোগ করছিলেন কে এম মজিবুল হক। অতর্কিতভাবে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা সেখানে রামদা ও লাঠিসোঁটা হাতে হামলা চালায়।  ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে গাড়ি ভাঙচুর করে। এতে বেশ কয়েকজন বিএনপির কর্মী আহত হয়েছেন। মজিবুল হক মুরাদনগরে পৌঁছার আগেই দেশি অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগকে ব্যাপক মহড়া দিতে দেখা যায়। বেলা ১টায় নহলচৌমুহনী এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থীকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষমাণ নেতা-কর্মীদের ওপরও হামলা হয়। এতে চার বিএনপি কর্মী আহত হয়েছেন। তারা হলেন— নেছার উদ্দিন খোকন, আবুল কালাম আজাদ, আলী হাসান ও মো. লিটন। বেলা আড়াইটার দিকে মজিবুল হক ঢাকা থেকে গাড়িবহরযোগে মুরাদনগর উপজেলা সদরে পৌঁছান। এ সময় হাজারো নেতা-কর্মী মিছিল-স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও নির্বাচনী সংঘর্ষের খবর—বরিশাল : সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের অব্যাহত হামলা ও বাধার কারণে গতকালও কোনো প্রচারণা চালাতে পারেননি বরিশাল-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী সাবেক এমপি এম জহির উদ্দিন স্বপন। কার্যত এদিন তিনি নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ ছিলেন। জানা গেছে, এদিন তার কাণ্ডপাশা এবং নলচিড়া বাজারে পূর্ব ঘোষিত দুটি উঠোন বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগেই সেখানে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে থাকেন। এ অবস্থায় ‘সংঘাতের আশঙ্কা’ প্রকাশ করে তিনি দুটি কর্মসূচিই বাতিল করেন। দলীয় সূত্রে বলা হয়েছে, স্থানীয় সশস্ত্র ক্ষমতাসীনরা স্বপনের বাড়িতে প্রবেশের সব রাস্তায় মহড়া দেয় এবং আসা-যাওয়ার পথে বিএনপির ১০ জন নেতা-কর্মীকে মারধর করে। এ ছাড়া তার পক্ষে গণসংযোগে অংশ নেওয়ায় মাহিলাড়া বাজারের ৮টি দোকান ভাঙচুর করে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে বরিশাল নগরীর রূপাতলী আছালত খান জামে মসজিদ চত্বরে হাতপাখার লিফলেট বিতরণের সময় ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রশিক্ষণ সম্পাদক শাকিল হোসেনের মাথা ইট দিয়ে থেঁতলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল জুমার নামাজের পর এ হামলার ঘটনা ঘটে। বরিশাল-৫ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. শরীয়াতুল্লাহ দাবি করেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ কর্মী মিরাজ ও সেলিম তাকে লিফলেট বিতরণ করতে নিষেধ করে। এরপরও শাকিল হাতপাখার লিফলেট বিতরণ অব্যাহত রাখলে তারা ইট দিয়ে শাকিলের মাথায় আঘাত করে। এ ছাড়া বরিশাল-২ আসনের বানারীপাড়া উপজেলায় বিএনপি প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন সান্টুকে মোটরযান বহর নিয়ে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উজিরপুর-বানারীপাড়ার সীমান্তবর্তী গুয়াচিত্রা এলাকায় সান্টুর মোটর বহরে বাধা দেয় পুলিশ। বরগুনা : বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের কড়ইতলা গ্রামে গতকাল সন্ধ্যায় ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর প্রচারাভিযানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গোলাম সরোয়ার হিরুর স্ত্রী নূরে আফরোজ হ্যাপি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ইউনিয়নে তার দুই প্রচার কর্মী ইজিবাইক নিয়ে প্রচার করতে গেলে নৌকার সমর্থকরা মুখোশ পরে মোটরসাইকেলে এসে প্রচার বন্ধ করে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়। এ ছাড়া এদিন বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা বাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দুর্বৃত্তদের হামলায় আলমগীর খান (৪০) নামে এক জাপা কর্মী আহত হয়েছেন। বগুড়া : সারিয়াকান্দি উপজেলা সদর বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে কার্যালয়ের টেলিভিশন, চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। এ সময় পাসের ২টি পার্টসের দোকানের মালামালও পুড়ে যায়। গতকাল গভীর রাতে সারিয়াকান্দি পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় মোড়ে উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে সোনাতলা উপজেলার বালুয়াহাট বিএনপির আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে চারটি তাজা ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকিরসহ ৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে। সোনাতলা থানার উপ-পরিদর্শক বাশির আহম্মেদ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। কিশোরগঞ্জ : বাজিতপুরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, গতকাল দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহানের ওপর বিএনপির কর্মীরা হামলা চালায়। এতে তার একটি দাঁত ভেঙে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থান ক্ষতবিক্ষত হয়। এ ছাড়া আগের রাতে আওয়ামী লীগের কর্মীরা বাজিতপুর পৌর এলাকায় বিএনপির দুটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর এবং বলিয়ারদী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শামসু মিয়ার বাড়িতে হামলা করে বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম। সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা-১ আসনের বিএনপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবের নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় কলারোয়া বাজারে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। গতকাল দুপুরে কলারোয়া বল্ডফিল্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় ৭ জন আহত হয়েছেন। প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিব জানান, গণসংযোগকালে হঠাৎ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালিয়ে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মেহেরপুর : গাংনী উপজেলার বাওট বাজারে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার গভীর রাতের কোনো এক সময় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটায়। এতে নির্বাচনী ক্যাম্পের শামিয়ানা পুড়ে গেছে। মেহেরপুর-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী জাভেদ মাসুদ মিল্টন বলেন, ‘ওরা গাংনী অফিসে হামলা করেছিল। নির্বাচনে আমরা যেন না থাকি সে জন্য তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে।’ সখীপুর (টাঙ্গাইল) : সখীপুরে কাকড়াজান ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক শাহআলম শাহীন দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়েছেন। গতকাল রাত ১টার দিকে উপজেলার মহানন্দপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ওই এলাকার বারখাদা পাড়ার জোবায়ের হোসেন (৫০) নামে এক লোককে আটক করেছে পুলিশ। সিরাজগঞ্জ : দুটি পৃথক মারপিট ও মোটরসাইকেল পোড়ানোর ঘটনায় সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের বিএনপি প্রার্থী ড. এম এ মুহিতের শ্রীফলতা বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুই বিএনপি নেতাকে আটক করেছে। গতকাল দুপুরে শাহজাদপুর থানার পুলিশ এ অভিযান চালায়। আটককৃতরা হলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন হিরো ও যুগ্ম সম্পাদক আরিফুজ্জামান আরিফ। শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া জানান, ১১ ডিসেম্বর  শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে দুটি পৃথক মারপিট ও মোটরসাইকেল পোড়ানোর ঘটনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় ওই দুই নেতা এজাহারভুক্ত আসামি। এ মামলায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া এদিন পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি প্রার্থী রোমানা মাহমুদসহ ৭ জন গুলিবিদ্ধ এবং সবমিলে ২০ জন আহত হয়েছেন। সন্ধ্যায় শহরের কলেজ রোড ও বিএনপি কার্যালয়ের পাশে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের একটি গাড়ির গ্লাস ভাঙা হয়েছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, আমরা কলেজ রোড দিয়ে মিছিল নিয়ে মোড়ে যাওয়ার পর পুলিশ টিয়ারশেল-রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে রাবার বুলেটের আঘাতে বিএনপি প্রার্থী রোমানা মাহমুদ আহত হয় এবং গুলি লেগে মেরিনা নামে এক মহিলা নেত্রীর দুচোখ নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়াও অন্তত দলের ২০ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ দাউদ জানান, পুলিশ টহল দেওয়ার সময় বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশের গাড়ির ওপর হামলা চালায়। শরীয়তপুর : শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন আহম্মেদ অপুর নির্বাচনী ও উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে ৯ হাজার পোস্টার ছিনিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় হামলাকারীরা পোস্টার সাঁটানোর সামগ্রীসহ ৩৬ হাজার নগদ টাকা নিয়েও নিয়ে গেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শরীয়তপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করার কথা জানিয়েছন বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকরা। নড়াইল : নড়াইল-১ আসনে বিএনপির সমর্থকদের হামলায় কালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা খান শামীম রহমানসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় কালিয়া উপজেলার খাশিয়াল বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মাথায় আহত শামীম রহমানকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খাশিয়াল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খান রাসেল সুইটসহ আরও তিনজন আহত হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর