শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ড. কামালকে প্রধানমন্ত্রী

‘খামোশ’ বললেই জনগণ চুপ হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খামোশ’ বললেই মানুষের মুখ খামোশ হবে না। জনগণ চুপ হবে না। লজ্জা কম বলেই সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তারা খামোশ বলতে পারেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে গতকাল বিকালে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।  

যুদ্ধাপরাধী আর সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যারা রাজনীতি করে তাদের বয়কটের আহ্বান           জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা ক্ষমতায় এলে দেশের অকল্যাণ হবে। স্বাধীনতার সুফল পেতে হলে নৌকায় ভোট দিন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশে উন্নয়ন হবে। স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় এলে দেশ পিছিয়ে যাবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যে সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন তাতে যুদ্ধাপরাধীদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার ছিল না। আজকে আমরা দেখি যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত তাদের পরিবারের সদস্যদের বিএনপিসহ যে ঐক্য করা হয়েছে তাতে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, যারা এত বড় অপরাধ করল, আর যে পাকিস্তানি বাহিনীকে আমরা পরাজিত করলাম তাদের এই দোসরদের যখন ধানের শীষে মনোনয়ন দেওয়া হয় তখন তারা কীভাবে এই নির্বাচন করবে? এ প্রশ্নের উত্তর তারা জাতির কাছে দিতে পারবে? কোথায় গেল সেই বিবেক? তারা রাজনীতিকে কোথায় নামিয়েছেন! তারা যদি ক্ষমতায় যান তাহলে দেশের মানুষের ভাগ্যে কী ঘটবে? যাদের অপরাধ প্রমাণিত, তাদের সঙ্গে ড. কামাল, সুলতান, মান্না, কাদের সিদ্দিকী কীভাবে হাত মেলান, এটাই আমার প্রশ্ন। শেখ হাসিনা বলেন, অপরাধী ছাড়া বিএনপিতে ভালো কোনো যোগ্য লোক নেই? নাকি অপরাধ করলেই বিএনপিতে যোগ্য হওয়া যায়? তিনি আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধী, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীর স্বজনসহ বাংলা ভাই ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকদের মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট। বক্তব্যের শুরুর দিকে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের কথা উল্লেখ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু করেছিলেন। আইয়ুব খানের আমল থেকেই দেখা যায় মিলিটারি ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য একটি দল গঠন করে এবং প্রহসনের নির্বাচন করে। বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানও তাই করেছিলেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যে সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন তাতে যুদ্ধাপরাধীদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার ছিল না। সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ। শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সন্তানদের মধ্যে ডা. নুজহাত চৌধুরী ও শমী কায়সার বক্তব্য রাখেন। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর শেখ হাসিনা সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশে নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের খোঁজখবর নেন। মিরপুর থেকে ধানমন্ডিতে যান প্রধানমন্ত্রী এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সদস্যরা তাদের স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিল্পী, প্রকৌশলী ও লেখকসহ দুই শতাধিক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে যায়। পাকিস্তানি সৈন্যরা বুদ্ধিজীবীদের ধরে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগসহ বিভিন্ন স্থানে হানাদার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যাযজ্ঞ চালায়। এর মধ্যে রায়েরবাজার ও মিরপুর ছিল উল্লেখযোগ্য। এরপর থেকেই দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এদিকে যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধী ও তাদের স্বজন, গ্রেনেড হামলায় জড়িত, দুর্নীতি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে যাদের বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে এমন প্রার্থীদের নাম উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে মাওলানা আবদুল হাকিম ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন। যিনি প্রথমে ছাত্রসংঘ ও পরবর্তীতে আলবদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে নিয়ে তিনি গ্রামের পর গ্রাম বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন। পাবনা-১ আসনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ডা. নজীবুর রহমান মনোনয়ন পেয়েছেন। অথচ মানবতাবিরোধী অপরাধে নিজামীর ফাঁসি হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পেছনে সবচেয়ে বড় হাত ছিল নিজামীর। কক্সবাজার-২ থেকে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আজাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। পিরোজপুর-১ আসনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম বিন সাঈদী। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পুরো বগুড়া এলাকায় যত রাজাকার-আলবদর বাহিনী গড়ে তোলা, লুটপাট, মেয়েদের ধর্ষণ এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যে জড়িত ছিল, মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মোমিন তালুকদারের স্ত্রী মাসুদা মোমিন তালুকদার বগুড়া-৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। খুলনা-৫ আসনে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর জেহাদী পার্টি নামে একটা বাহিনী করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অকথ্য অত্যাচারকারী, মেয়েদের ধর্ষণকারী, এমনকি সাংবাদিক হত্যার সঙ্গেও জড়িত পরওয়ার। তাকেও বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী করা হয়েছে। সাতক্ষীরায় গাজী নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-৪ ইসহাক চৌধুরী, যার ভাই বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী ভারতে বসে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল।   রংপুর-৩ আসনে রিটা রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় চার নেতা হত্যার আসামি স্বামী মেজর (অব.) খায়রুজ্জামানের স্ত্রী এই রিটা রহমান। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী তানিয়া জামানকে নেত্রকোনা-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা-৬ আসনে ড. মোশাররফ পাকিস্তানি এজেন্ট আইএসআইয়ের এজেন্টের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে চলেছে দেশের বিরুদ্ধে। আজ তারা এই দলের মনোনয়ন পায়। তিনি বলেন, বাংলাভাই ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টিসহ এর মদদদানকারীরা রাজশাহী-১ আসনে ব্যারিস্টার আমিনুল হক, রাজশাহী-২ মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী-৫ নাদিম মোস্তফা ও নওগাঁ-৬ আসনে আলমগীর কবির পেয়েছেন বিএনপির মনোনয়ন। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের পরিবারের সদস্যরাও ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন অভিযোগ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত খালেদা জিয়ার ক্যাবিনেটের প্রতিমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু। যিনি সাজাপ্রাপ্ত। তার আপন ছোটভাই সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী তানিয়া জামানকেও বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে। আমার প্রশ্ন— যারা এ ধরনের মানবতাবিরোধী কাজ করেছে, তাদের নির্বাচিত করে বিএনপি দেশটিকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়? শেখ হাসিনা এদের কাউকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আইএসআই ও মোসাদের সঙ্গে যারা ষড়যন্ত্র করে, তাদেরও ভোট দেবেন না।

সর্বশেষ খবর