রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মহান বিজয় দিবস আজ

মাহমুদ হাসান

মহান বিজয় দিবস আজ

মহান স্বাধীনতার সাতচল্লিশ বছর পর সম্ভাবনার সব দুয়ার খোলা আজ বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু মুজিবের বাংলাদেশ আজ তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অগ্রসরমান। আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক দুর্দশা ঘুচিয়ে উন্নয়নের সব সূচক ঊর্ধ্বমুখী করে বিশ্বের কাছে নতুন এক ভাবমূর্তি সৃষ্টি করেছে আজকের বাংলাদেশ। একদা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে এসে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার জন্য লড়াই করছে। এ দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে মোড় ফেরাতে পেরেছে ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ। দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব নির্ধারণী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতি আজ উদযাপন করছে স্বাধীনতার ৪৭ বছর। একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধীদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফেরার পথ রুখে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে জাতি আজ বিজয়ের আনন্দে চেতনাকে শানিত করবে। অনেক সাফল্য নিয়ে বাংলাদেশ উদযাপন করছে বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকী। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ নিয়ে, এর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক ট্যারা ট্যারা কথা বলা হয়েছিল। প্রথম তিন দশক কী প্রাকৃতিক, কী রাজনৈতিক অনেক ঝড়ঝঞ্ঝাট মোকাবিলা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সেই বাংলাদেশ আজ নিজ পায়ে চলার শক্তি অর্জন করেছে। নিজের ভালো ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। আর এসবের মাধ্যমে বাঙালি জাতি, বাংলাদেশের মানুষ প্রমাণ করেছে— আসলে সেদিন তারা আমাদের নিয়ে ফালতু কথা বলেছে। ভুয়া ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। যে জাতি মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করে, সেই বীর বিজয়ী জাতি কখনই কোনো কিছুতে পরাভূত হয় না, পরাভূত করা যায় না বীর বাঙালিকে। যে দেশকে একটি ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িত করা হয়েছিল, স্বাধীনতার ৪৭ বছরে সেই বাংলাদেশের অন্যতম সাফল্য হচ্ছে, তার প্রতি বিশ্বের ইতিবাচক আগ্রহ এবং উন্নয়নে অংশীদারিত্বের মনোভাব সৃষ্টির সক্ষমতা অর্জন। আর এ অর্জনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত আগামীর স্বপ্নে উজ্জীবিত করতে পেরেছেন। দেরিতে হলেও দেশের মানুষ লাভ করেছে সুখী সমৃদ্ধশীল হওয়ার ভিশন। এ ভিশন বাস্তবায়নে সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়াই হচ্ছে এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ও বাঙালির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেদিন বেশি দূরে নয়, বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হবে। ১৯৭১ সালের এ দিনটিতে ৩০ লাখ মানুষের আত্মাহুতি আর তিন লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে আসে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়। আমাদের স্বাধীনতা। সর্বস্তরের মানুষ আজ মেতেছে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকী উদযাপনে। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। যার উদ্যোক্তা বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ’৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলে পড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পূর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। জন্ম হয় নতুন জাতির। শুরু হয় সশস্ত্র প্রতিরোধ, মহান মুক্তিযুদ্ধ। এরপর দীর্ঘ নয় মাস সারা দেশে হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নারী নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। এক কোটি মানুষ জন্মভূমি ছেড়ে শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর হাতে মার খেয়ে একে একে অধিকৃত এলাকা ছেড়ে ঢাকায় এসে আশ্রয় নেয় দখলদার পাকিস্তানি সেনারা। ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানের ৯৩ হাজার সৈনিক মাথা নিচু করে আত্মসমর্পণ করে যৌথবাহিনীর কাছে। পাকিস্তানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় বাঙালির বিজয়। পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সকালে জাতির পক্ষ থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্মৃতি সৌধের বেদিমূলে দাঁড়িয়ে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে স্বাধীনতার অমর শহীদদের। সেই সঙ্গে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করা হবে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি বাঙালি জাতিকে দিয়ে গেছেন স্বাধীনতা। কিন্তু আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে পারিনি। আজীবন এ দুঃখ যাতনা বয়ে বেড়াতে হবে বাংলাদেশকে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন। বাণী দিয়েছেন বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় নেতারা। আজ সাধারণ ছুটি। বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ৮টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এছাড়া সকাল ১০টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয়র‌্যালী বের করবে ঐক্যফ্রন্ট।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর