সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
কী আছে ভোটের ইশতেহারে

উন্নয়ন ধারাবাহিকতার স্বপ্ন দেখাবে আওয়ামী লীগ

ঘোষণা দেওয়া হবে আগামীকাল

রফিকুল ইসলাম রনি

উন্নয়ন ধারাবাহিকতার স্বপ্ন দেখাবে আওয়ামী লীগ

একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী ইশতেহারে         উন্নয়ন-সমৃদ্ধির ধারাবাহিকতার স্বপ্ন দেখাবে আওয়ামী লীগ। গত ১০ বছরের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার পাশাপাশি এ ধারা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় নিয়ে দেশবাসীকে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাবে দলটি। হ্যাটট্রিক বিজয়ের মিশন নিয়ে আগামীকাল সকাল ১০টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮’ ঘোষণা করবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ইশতেহারে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকারকে সাতটি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এবার প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে— যুব সমাজের ব্যাপক কর্মসংস্থান, গ্রাম ও শহরের সমউন্নয়ন, সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি, পুষ্টিকর খাবারের নিশ্চয়তা, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূল, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, সর্বস্তরের মানুষের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা প্রভৃতি।    

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘দিন বদলের সনদ’। ২০১৪ তে ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। আর এবারের ইশতেহারে থাকবে ‘সাফল্য ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’। ইশতেহার প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা জানা গেছে, নির্বাচনী ইশতেহার হবে ৬৪ পৃষ্ঠার। এটি বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় হবে।

ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী বিশিষ্টজনের সমন্বয়ে গঠিত ‘ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি’ ভোটার টানার যুগোপযোগী একটি ইশতেহার প্রণয়ন করে দলীয় সভানেত্রীর হাতে জমা দিয়েছেন। এবারের ইশতেহার হবে ভোটার টানার নতুন চমক। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় সভানেত্রী জাতির সামনে ইশতেহার ঘোষণা করবেন।’  ইশতেহার উপ-কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, আজকের বাংলাদেশ আগামীতে কোথায় থাকবে, কী কী পদক্ষেপ ও পরিকল্পনার কর্মসূচিতে এগিয়ে যাবে সেই রূপরেখা রয়েছে ইশতেহারে। এতে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনসহ জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় করে ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবার্ষিকী পালনের অঙ্গীকারও রয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। প্রজন্ম পরম্পরার ভাবনা মাথায় রেখে ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। ডেল্টা প্ল্যানে ব্লু-ইকোনমির যথোপযুক্ত ব্যবহার করে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার ও দিকনির্দেশনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইশতেহারে প্রাধান্য পাওয়া বিষয়গুলোকে মোট সাতটি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। অঙ্গীকারে শুরু হয়ে পটভূমি, তৃতীয় ভাগে থাকছে আওয়ামী লীগ সরকারের গত দুই মেয়াদের সাফল্যের চিত্র। এরপর দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চিত্র জাতির সামনে তুলে ধরা হয়েছে। পঞ্চম অধ্যায়ে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের অবস্থান গত ১০ বছরে কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা স্থান পেয়েছে। এরপর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। উপরের ছয় অধ্যায়ের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে জাতির কাছে নৌকায় ভোট চেয়ে ইশতেহার ৬৪তম পৃষ্ঠায় শেষ হয়েছে। এবারের ইশতেহারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বিশেষ উদ্ধৃতি রয়েছে। এটি হলো, ‘এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের মানুষ যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে তারা চাকুরি না পায় বা কাজ না পায়।’ 

আওয়ামী লীগের বিশেষ অঙ্গীকার হিসেবে ২১টি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো— ‘আমার গ্রাম-আমার শহর : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ’, ‘পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা’, ‘তারুণ্য ও শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি : তরুণ-যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা’, ‘সকল স্তরে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা’, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ’, ‘নারীর ক্ষমতায়ন’, ‘লিঙ্গ সমতা ও শিশুকল্যাণ’, ‘সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূল’, ‘মেগা প্রজেক্টসমূহের দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন’, ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা’, ‘সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি’, ‘দারিদ্র্য নির্মূল, ‘সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি’, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা’, ‘সার্বিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার’, ‘আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা’, ‘দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন’, ‘ব্লু-ইকোনমি তথা সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন’, ‘নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা’, ‘প্রবাসীকল্যাণ কর্মসূচি’, ‘টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’। 

সূচিপত্রের অধ্যায়গুলোর মধ্যে আছে—৩ অধ্যায়ে আছে সরকার পরিচালনায় দুই মেয়াদে (২০০৯-২০১৮) সাফল্য ও অর্জন এবং আগামী পাঁচ বছরের (২০১৯-২০২৩) লক্ষ্য ও পরিকল্পনা, ৩.১ অধ্যায়ে—গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ, ৩.২ অধ্যায়ে—আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা, ৩.৩ অধ্যায়ে— দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন, ৩.৪ অধ্যায়ে—জনবান্ধব পুলিশ প্রশাসন গড়ে তোলা, ৩.৫ অধ্যায়ে— দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, ৩.৬ অধ্যায়ে—সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদক, ৪ অধ্যায়ে—সামস্টিক অর্থনীতি; উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, ৩.১.১ অধ্যায়ে—কৌশল ও পদক্ষেপ, ৪.১ অধ্যায়ে—অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ প্রকল্প (মেগাপ্রজেক্ট), ৪.২ অধ্যায়ে— ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ, ৪.৩ অধ্যায়ে—তরুণ যুব সমাজ; ‘তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’, ৪.৪ অধ্যায়ে—দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস, ৪.৫ অ্যধায়ে—কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি; খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের নিশ্চয়তা, ৪.৬ অধ্যায়ে—বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ৪.৭ অধ্যায়ে—শিল্প উন্নয়ন, ৪.৮ অধ্যায়ে—শ্রমিক কল্যাণ ও শ্রমনীতি, ৪.৯ অধ্যায়ে—স্থানীয় সরকার; জনগণের ক্ষমতায়ন, ৪.১০ অধ্যায়ে—শিক্ষা, ৪.১১ অধ্যায়ে—স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবারকল্যাণ, ৪.১২ অধ্যায়ে-যোগাযোগ, ৪.১৩ অধ্যায়ে-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি; ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণ, ৪.১৪ অধ্যায়ে—সমুদ্র বিজয় : ব্লু-ইকোনমি; সমুদ্র বিজয় : উন্নয়নের দিগন্ত উন্মোচন, ৪.১৫ অধ্যায়ে—জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা, ৪.১৬ অধ্যায়ে—শিশুকল্যাণ, ৪.১৭ অধ্যায়ে—প্রতিবন্ধী ও প্রবীণকল্যাণ, ৪.১৮ অধ্যায়ে—নারীর ক্ষমতায়ন, ৪.১৯ অধ্যায়ে—মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন, ৪.২০ অধ্যায়ে—সংস্কৃতি, ৪.২১ অধ্যায়ে—ক্রীড়া, ৪.২২ অধ্যায়ে—ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায়, ৪.২৩ অধ্যায়ে—গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্য প্রবাহ, ৪.২৪ অধ্যায়ে—প্রতিরক্ষা; নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা সুরক্ষা, ৪.২৫ অধ্যায়ে—পররাষ্ট্র, ৪.২৬ অধ্যায়ে—এনজিও, ৪.২৭ অধ্যায়ে—মুজিববর্ষ পালন; উন্নয়ন অগ্রযাত্রার শপথ গ্রহণ, ৪.২৮ অধ্যায়ে—২০৩০ সালে এসডিজি বাস্তবায়ন, ৪.২৯ অধ্যায়ে—ব-দ্বীপ বা ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০, ৫ অধ্যায়ে—জননেত্রী শেখ হাসিনার সম্মোহনী নেতৃত্বের বিশ্বজনীন স্বীকৃতি, ৬ অধ্যায়ে—ভবিষ্যৎ দিকদর্শন এবং ৭ অধ্যায়ে—দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান।

সর্বশেষ খবর