সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচন না হওয়ার আশঙ্কা আছে

ড. কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আসন্ন সংসদ নির্বাচন হবে কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। আর সে আশঙ্কা সরকারই তৈরি করেছে। কারণ ক্ষমতাসীনরা জনমত বুঝে গেছে। সেজন্য জোর করে ক্ষমতায় থাকার সব ধরনের চেষ্টা তারা করছে। নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয় তার জন্য ক্ষমতাসীনরা যা যা করার দরকার তার সবই করছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীসহ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা, তাদের ওপর হামলাসহ গণহারে গ্রেফতার করছে। ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীনদের অব্যাহত হামলার ঘটনায় নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়ে এ শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনের জামান টাওয়ারে ঐক্যফ্রন্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। নির্বাচনের প্রচারণায় বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর হামলা, গুলিবর্ষণসহ নানা ঘটনা তুলে ধরা হয় এ সংবাদ সম্মেলনে। সংবাদ সম্মেলনে আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর পূর্বাণী হোটেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা হবে বলে জানান ফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা। এ সময় জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, জগলুল হায়দার আফ্রিক, নুরুল হুদা মিলু চৌধুরী, বিকল্পধারার অধ্যাপক নুরুল আমিন পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দেশে বিদ্যমান পরিবেশ-পরিস্থিতিতে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চলছে বলে আপনারা আশঙ্কা করছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বানচালের ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে দেওয়া হবে না, তারা (সরকার) জনমত বুঝতে পারছে। আপনারাও এটা জানার চেষ্টা করলে জানতে পারবেন জনমত কোন দিকে আছে— সরকারের পক্ষে আছে, না বিরোধী দলের পক্ষে আছে। তা আপনারা খোঁজখবর নিয়ে জেনে নিন। আমরা শুধু আপনাদের তথ্যগুলো দিচ্ছি। কিন্তু এ (বানচালের) ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। সেটা আপনারা দেখুন।’ ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘আজকে বিজয় দিবস। এ বিজয় দিবসের সঙ্গে নির্বাচনেরও কাজ চলছে। আমাদের স্বাধীন দেশের সংবিধানে নির্বাচিত সংসদের বিধান রয়েছে। দেশের মালিক জনগণ। ১৭-১৮ কোটি মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন ভোটের মাধ্যমে। সে কারণে নির্বাচনের গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য। আপনারা (গণমাধ্যম) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন, যাতে স্বাধীনভাবে, সুষ্ঠুভাবে জনগণ নির্বাচনে ভোট দিতে পারে। আপনারা সবাই থাকবেন।’

দেশের এই সংবিধানপ্রণেতা বিভিন্ন ঘটনার অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, ‘দেখুন, দুঃখজনক হলেও সত্য আপনারাই তথ্য দিচ্ছেন পত্রপত্রিকায় দেখছি যে, ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যারা মিছিল করছেন তাদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। প্রার্থীদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে এবং ভোটের প্রচারণায় প্রার্থীরা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনার পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এটা কারও খেয়ালখুশির ব্যাপার নয়।

সংবিধানে আছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা। যারা নির্বাচনে বাধার সৃষ্টি করে, আক্রমণ করে, অন্যভাবে সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করে এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা। এটা হলো সংবিধানের কর্তব্য। সেই কর্তব্য পালন করার ব্যাপারে আমরা ঘাটতি দেখছি। অন্যদিকে আমরা দেখছি বিরোধী দলের প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে। অবাক কাণ্ড, যারা শিকার হচ্ছেন আক্রমণের, তাদেরই গ্রেফতার করা হচ্ছে, আর যারা আক্রমণ করছে তারা বহালতবিয়তে আছে।’

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন সামনে। অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে এসব ঘটনা যদি ঘটতে থাকে স্বাভাবিকভাবে আশঙ্কা হবে ভোটের দিন কী হবে। আপনারা সবাই জনগণের হয়ে পাহারা দেবেন ভোটের দিন সে রকম কোনো কিছু যাতে না ঘটে। ভোটাররা যাতে তাদের অধিকার ফিরে না পায়, স্বাধীনভাবে যাতে তারা ভোট দিতে না পারে, সেজন্য অন্যভাবে তারা (ক্ষমতাসীনরা) জাল ভোট দিয়ে থাকে। আমাদের পাশাপাশি থেকে আপনাদেরও এসব অবলোকন করতে হবে।’

আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন। আর মাত্র ১৩ দিন বাকি। এখন যদি প্রার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ হয়, গতকালকে নোয়াখালীতে মাহবুব উদ্দিন খোকনের ওপর পাঁচটা গুলি করা হয়েছে, সিরাজগঞ্জে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী ধানের শীষের প্রার্থী রুমানা মাহমুদের ওপর গুলি হয়েছে, ঢাকায় সুব্রত চৌধুরীর ওপর হামলা হয়েছে। ঢাকা-৮, ঢাকা-৯, ১০ আসনসহ বিভিন্ন আসনে হামলা হয়েছে। আমি উত্তরায় সেদিন মাজারে গিয়েছিলাম সেখানে হামলা হয়েছে। এখন ১৩ দিন আগে যদি গুলি হয় তাহলে এর পরে কী চালাবে? ট্যাংক চালাবে? কামান চালাবে? এ কী অবস্থা! পৃথিবী কোথায়, জাতিসংঘ কোথায়, কমনওয়েলথ কোথায়? আমরা তো মানুষ। একাত্তর সালে বর্বর পাকিস্তানিরাও এ রকম করেনি।

কিন্তু ক্ষমতাসীনরা জনগণকে ভোটের মাঠে নামতে দেবে না, কর্মীদের নামতে দেবে না, প্রার্থীদের নামতে দেবে না, এটা কী! আমরা তো নির্বাচন করতে চাই। ভয় দেখালে ভয় পাওয়ার লোক আমরা নই। ওরা তো গুলি চালাচ্ছে। আমরা আমাদের কর্মীদের সংযত থাকতে বলছি, সহনশীল থাকতে হবে, সাহসের সঙ্গে থাকতে হবে। আমরা যদি একবার জনগণকে বলি এ হামলার মোকাবিলা কর, জনগণ যদি মোকাবিলা করতে যায় পরিণতি কী হবে তা একটু চিন্তা করুন। আমি বলতে চাই, আজ জনগণ জয়লাভ করতে চাচ্ছে। জনগণকে যদি জয়লাভ করতে না দেন আর একাত্তর সালে জনগণ যদি অস্ত্র দিয়ে জবাব দিয়ে থাকে, এখন অস্ত্র ছাড়া ব্যালটের মাধ্যমে জনগণ জবাব দেবে। সরকারকে বলব, এখনো সময় আছে আপনারা সংযত হোন। আপনারা হামলা-মামলা বন্ধ করুন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে দিন।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘নির্বাচনে যেসব সহিংসতা হচ্ছে সবকিছু সরকারের মদদে করা হচ্ছে। ওরা নিরস্ত্র জনগণের ওপর সশস্ত্র হামলা করছে। আমরা শুধু বলতে চাই, আমরা একটা যুদ্ধের মধ্যে আছি। তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে তারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাহলে আমরাও যুদ্ধ করব। ৩০ ডিসেম্বর আমরা ব্যালটের মাধ্যমে এর জবাব দেব।’

ঢাকাসহ সারা দেশে ধানের শীষের প্রার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার নানা অভিযোগও তুলে ধরে নেতারা জানান, গতকাল সাতক্ষীরা থেকে ধানের শীষের প্রার্থী গাজী নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

 

সর্বশেষ খবর