সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঐক্যফ্রন্টের বিজয় র‌্যালি

এ ধরনের নির্বাচন কখনো দেখিনি : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

এ ধরনের নির্বাচন কখনো দেখিনি : ফখরুল

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচনে সব রকমের পক্ষপাতিত্ব শুরু করছে সরকার। আমরা কখনো এ ধরনের নির্বাচন দেখিনি। নজিরবিহীনভাবে তারা বিরোধীদলের  নেতা-কর্মী এবং প্রার্থীদের  গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখার  চেষ্টা করছে। আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করছি, গ্রেফতার-নির্যাতন বন্ধ করুন। না হলে এর দায়দায়িত্ব সব কিছু আপনাদের নিতে হবে। এই  দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার দায়িত্ব নিতে হবে।’

গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চ থেকে ‘বিজয় র‌্যালি’ উদ্বোধন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মহান বিজয় দিবস’ উপলক্ষে এ র‌্যালির আয়োজন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বেলা পৌনে ১২টায় বিএনপির  কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে র‌্যালিটি শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে  শেষ হয়। র‌্যালিটি বিজয় দিবসের হলেও  নেতা-কর্মীদের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ লক্ষ করা যায়। রাজধানীর বিভিন্ন প্রার্থীর ছবি, পোস্টার আর বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে অংশ নেওয়ায় তা অনেকটা নির্বাচনী প্রচারে রূপ নেয়। এতে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর ঢল নামে।

 

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড ছাড়াও তাদের হাতে ছিল কারাবন্দী  চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি ও ভারপ্রাপ্ত  চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড। র‌্যালির সামনে পেছনে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসতে শুরু করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা। তবে রাজধানীর বেশ কয়েকটি আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মিছিল নিয়ে র‌্যালিতে যোগ দেন। ঢাকা-৬ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী কর্মী-সমর্থকদের মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে আসেন। তাদের ব্যানারে ছিল ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের ছবি। ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস ধানের ছড়া দিয়ে সাজানো একটি ট্রাকে চড়ে বিশাল মিছিল নিয়ে র‌্যালিতে অংশ নেন। বিজয়র্যালিতে ব্যান্ড দলও ছিল, যারা মুক্তিযুদ্ধের গান পরিবেশন করে। র‌্যালি যখন শান্তিনগরের কাছে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের সামনে পৌঁছায়, তখন সেখানে মাইকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রচার চলছিল।  সেখানে  মোতায়েন ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ। কলেজের সামনের রাস্তা বিএনপি নেতা-কর্মীরা ধানের শীষ প্রতীকে স্লোগান দিতে দিতেই পেরিয়ে যান। পরে শান্তিনগর  মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে শোভাযাত্রার সমাপ্তি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের এই বিজয় দিবস হওয়া উচিত ছিল আনন্দের, উৎসবের। ৪৭তম এই বিজয় দিবসে আমাদের আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা আজকে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত, আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত এই দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকবে কি টিকে থাকবে না। আমাদের কাছে আজ এই নির্বাচন  দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে যে, বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরতন্ত্রে থাকবে, নাকি গণতন্ত্রে থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বাধীনতার ফল ভোগ করবে, কি ভোগ করবে না।

নির্বাচনের প্রচারের সময় ঢাকা-৮ আসনে ধানের শীষ প্রার্থী মির্জা আব্বাসের ওপর হামলার ঘটনাকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, একজন প্রার্থীর ওপর এ ধরনের হামলা হওয়ার পরও নির্বাচন কমিশন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, সরকার কিছুই করে না। নোয়াখালী-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মাহবুবউদ্দিন  খোকনকে গুলি করা হয়েছে। তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। ঢাকা-৬ আসনের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরীর ওপরে হামলা হয়েছে, তাকে প্রচার করতে দেয়নি। ঢাকা-৪ আসনে সালাহউদ্দিন আহমেদের নির্বাচনী এলাকায় একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

র‌্যালিতে অংশ নিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এটা বিজয়ের দিন আর আমরা একটা লড়াইয়ের মধ্যে আছি। এই লড়াই ভোটের লড়াই। নতুন যখন নির্বাচন এলো তারা মনে করেছিল যে এই নির্বাচনটাতেও বোধহয় তারা ওয়াকওভার নিতে পারবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার ওয়াকওভার দেব না, আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি, প্রার্থী দিয়েছি এবং সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। র‌্যালিতে আরও ছিলেন বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির  হোসেন, মীর  নেওয়াজ আলী  নেওয়াজ, হারুনুর রশীদ, অর্পণা রায়, আনোয়ার  হোসেইন, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, শাহ নেসারুল হক, হেলাল খান, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, দেবাশীষ রায় মধু, প্রদীপ কুমার সরকার, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ প্রমুখ।

পরে নয়াপল্টন থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে নেতারা শেরেবাংলানগরে সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানের মাজারে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর