নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘আমি মোটেই মনে করি না নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে কিছু আছে। এ কথাটা এখন একটা অর্থহীন কথায় পর্যবসিত হয়েছে। এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন এই নির্বাচন কমিশনার। গতকাল বিকালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শেষে পৌনে ৬টার দিকে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের সামনে একটি লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এর আগে নির্বাচন কমিশনে ইভিএম নিয়ে বিরোধিতা করে নোট অব ডিসেন্ট ও সভা বর্জন করে আলোচিত হন এ নির্বাচন কমিশনার। উল্লেখ্য, গত শনিবার সংবাদ সম্মেলনে সিইসি বলেছিলেন, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়েছে। প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। সিইসির এমন বক্তব্যের দুই দিন পরে গতকাল নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ভিন্নমত পোষণ করে জানালেন, মোটেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রয়েছে বলে মনে করেন না তিনি। সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় নিজ কক্ষে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, সকালে আমাকে চারজন সাংবাদিক কিছু প্রশ্ন করেন। আমি তাদের প্রশ্নগুলো লিখে দিতে বলেছি। এখন লিখিতভাবে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। আর কোনো প্রশ্ন আমি নেব না বা উত্তর দেব না।

প্রশ্ন : আপনার মতো নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে কি?

প্রশ্ন : সিইসি বলেছেন—নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে। আপনি তার বিরোধিতা করছেন?

উত্তর : আমি কখনই তার বক্তব্যের বিরোধিতা করি না। তিনি তার কথা বলেন। আমি প্রয়োজনে আমার ভিন্ন মত প্রকাশ করি। আপনারা তো সাংবাদিক আপনারা দেশের সব খবর রাখেন। সব কিছু দেখেন। আপনারা নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করুন, নির্বাচনে এখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে কিনা, তাহলে উত্তর পেয়ে যাবেন।

প্রশ্ন: সারা দেশ থেকে বিরোধী দলের প্রচারে বাধা দেওয়ার নানা অভিযোগ আসছে। এ অবস্থায় অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন কি সম্ভব?

উত্তর : আমি আশাবাদী মানুষ। এখনো যে সময়টুকু আছে তাতে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির বিচারকদের আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করা উচিত। আমি মনে করি, সেনাবাহিনী মাঠে নামলে পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জকভাবে পাল্টে যাবে।

প্রশ্ন : সিইসি বলেছেন সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হবে আপনিও কি তাই মনে করেন?

উত্তর : সব দল অংশগ্রহণ করলেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা হয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া একটি প্রাথমিক প্রাপ্তি। আসল কথা হচ্ছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হচ্ছে কিনা এবং বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে কিনা। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য না হলে অংশগ্রহণমূলক হলেও কোনো লাভ নেই।

প্রশ্ন : নির্বাচনে জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আছে?

উত্তর : নির্বাচন আমরা সরাসরি করি না। রিটার্নিং অফিসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আছে। তাদের বাহিনীর সদস্যরা কতটা তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে তা তারা বলতে পারবেন।

প্রশ্ন : বর্তমান অবস্থায় আপনার কি কোনো মেসেজ আছে?

উত্তর : আমার বক্তব্য হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। প্রার্থী, ভোটার এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ আইনের বাইরে যাবেন না। আইনকে নিজস্ব ধারায় চলতে দিন। নির্বাচনে আচরণবিধি মেনে চলুন। নির্বাচনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে সহায়তা করুন।