মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিএনপির বিপর্যয়ের যত কারণ

শপথ নেবেন না ধানের শীষ বিজয়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির বিপর্যয়ের যত কারণ

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ভরাডুবি হয়েছে বিএনপির। দুবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসা বিএনপি এবার দলীয়ভাবে মাত্র পাঁচটি আসন পেয়েছে। জামানত হারিয়েছে অধিকাংশ হেভিওয়েট প্রার্থীই।  দুর্নীতির মামলায় দলের প্রধান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে। নির্বাচনকেন্দ্রিক দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ ছিল না। তা ছাড়া ভোটেও অপ্রস্তুত ছিল দলটি। প্রার্থী নিয়ে হোমওয়ার্ক করতে না পারা দলটি প্রচারেও ছিল অনেকটা পিছিয়ে। ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলেন, মাত্র তিন মাসের সিদ্ধান্তে ভোটে আসে বিএনপি। এ সময়ে দল, জোট এবং ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে বেশি সময় নষ্ট করে বিএনপি। এ নিয়ে ছিল না কোনো হোমওয়ার্ক। মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ফ্রন্টের বাড়াবাড়ি ছিল। যে কারণে বাধ্য হয়ে জোট-ফ্রন্টকে ৬০টির বেশি আসন তাদের ছেড়ে দিতে হয়। আবার ধানের শীষের প্রার্থীশূন্য ছিল ১৬টির মতো আসন। ঋণখেলাপিসহ নানা কারণে প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাওয়া নেতারা বেখেয়াল ছিলেন। গত ৫ বছরেও ব্যবসায়ী সমাজ, সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিদের আস্থায় আনতে পারেনি বিএনপি। অতি জামায়াতপ্রীতি বা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মহল ভালোভাবে নেয়নি। এমনকি নতুন প্রজন্মের ভোটাররাও কট্টর জামায়াতবিরোধী।

বিশ্লেষকরা এও বলছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটে অংশ নিলে বিএনপিকে আজ এই বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতো না। ওই সময় অন্তত ৩৬টি জেলা প্রশাসন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। আওয়ামী লীগের অনেক এমপি প্রার্থীকে হেলিকপ্টারে করে যাতায়াত করতে হয়েছে। সচিবালয়ে, প্রশাসনে সর্বত্রই ছিল অস্থিরতা। কিন্তু বিএনপি ওই সময় নির্বাচনে না গিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনে যায়। দীর্ঘমেয়াদি এই আন্দোলনে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে ব্যবসায়ী সমাজসহ বিভিন্ন সেক্টরের লোকজন মুখ ঘুরিয়ে  নেয় বিএনপি থেকে। এ ছাড়া ওই সময় থেকেই বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা মামলায় জর্জরিত হয়ে পড়ে। সেই রেশ ছিল এ নির্বাচনেও। মামলায় জর্জরিত হয়ে মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মীই ভোটের মাঠে ছিলেন না।

জানা যায়, জামায়াতের হাতে ধানের শীষ প্রতীক তুলে দেওয়া নিয়েও অস্বস্তিতে পড়ে বিএনপি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বিদেশি এক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে বলেন, জামায়াতকে ধানের শীষ তুলে দেওয়ার বিষয়টি জানতে পারলে ঐক্যফ্রন্ট করতাম না। এ নিয়ে বিশিষ্টজনেরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। দেশি-বিদেশি কূটনীতিকরাও ঐক্যফ্রন্টকে এ নিয়ে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির ভিতরে-বাইরেও নানা সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ২০-দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ধানের শীষে কোনো জামায়াতের প্রার্থী নেই। সমালোচকরা বলছেন, ঢাকা-১৫ আসনে যার হাতে ধানের শীষ তুলে দেওয়া হয়েছে, তিনি নিজেই জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোট চেয়েছেন। অন্যরাও জামায়াতের পদধারী নেতা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, পরাজয়ের মূল কারণ ছিল সরকারি দলের নজিরবিহীন ‘ভোট কারচুপি’। ভোটের আগের রাত থেকেই তারা কেন্দ্র দখল করে ভোট কারচুপি করেছে। ভোট শুরু হওয়ার পর থেকেই বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। অনেকে কেন্দ্রে এজেন্টও পাঠাতে পারেনি। মামলা-হামলাসহ গ্রেফতার আতঙ্ক তো ছিলই। তাছাড়া সরকারি দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রকাশ্যে সহযোগিতা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বাচন কমিশনসহ স্থানীয় প্রশাসন এমনকি রিটার্নিং কর্মকর্তারাও এতে নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। ভোটের মাঠকে উৎসবমুখর না করে ভীতিকর অবস্থা তৈরি করা হয়। ভোটাররা নির্ভয়ে কেন্দ্রে যেতে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষের নিরঙ্কুশ জয় হতো বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিএনপিকে হারানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১০ হাজারেরও উপরে নতুন করে মামলা দেওয়া হয়েছে। তাই এ নির্বাচন কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে আমরা পুনঃনির্বাচন দাবি করছি।’

সূত্র মতে,  প্রচারণাতেও বিএনপি ভালো করতে পারেনি। তাদের আধুনিক ডিজিটাল প্রচারণা ছিল না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পিছিয়ে ছিল দলটি। তা ছাড়া তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের কাছে টানতে কোনো কর্মসূচি বিএনপি দিতে পারেনি। পেশাজীবীদের মাঝেও বিএনপি সাড়া ফেলতে পারেনি। পরিকল্পিত গোছালো কোনো কাজ চোখে পড়েনি।

জানা যায়, বিএনপিতে মনোনয়ন দেওয়া এমন কিছু নেতা রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে দেড় শ থেকে দুই শতাধিক মামলার খড়গ ছিল। এ কারণে ভোটের মাঠেও তারা অনুপস্থিত ছিলেন। রাজধানীতে এমন প্রার্থীও ছিলেন যিনি এক দিনের জন্য প্রচারেও নামতে পারেননি। তা ছাড়া রাজধানীতে বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিল অপেক্ষাকৃত দুর্বল। ঢাকা-১৬ আসনে বিএনপির প্রার্র্থী করা হয় আহসান উল্লাহ হাসানকে। তিনি থাকেন উত্তরা এলাকায়। ভোটের মাঠে তাকে মাত্র একদিন দেখা গেছে। ঢাকা-১২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব। দুই শতাধিক মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে প্রার্থী হলেও তাকে এক দিনও প্রচারে নামতে দেখা যায়নি। ঢাকা-১৫ আসনে জামায়াত নেতা ডা. শফিকুর রহমানের হাতে ধানের শীষ তুলে দেয় বিএনপি। তাকেও দেখা যায়নি ভোটের প্রচারে।

এ ছাড়া ঢাকা-১৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী করা হয় জেএসডি নেতা শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনকে। ‘অখ্যাত’ এই জেএসডি নেতা বিএনপি নেতা-কর্মীদের কাছেও ছিলেন অপরিচিত। অন্যদিকে ব্যতিক্রম ছিল কিছু আসনে। ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন স্থানীয় নেতা নবীউল্লাহ নবী। তিনি প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে নানা প্রতিকূল পরিবেশেও ভোটের মাঠে ছিলেন সক্রিয়। যার ফল তিনি পেয়েছেন। ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপির অধিকাংশ প্রার্থী জামানত হারালেও তিনি ৬৮ হাজারের মতো ভোট পান। বিএনপির অধিকাংশ প্রার্থীর আসনে পোলিং এজেন্ট না থাকলেও নবীউল্লাহ নবী পোলিং এজেন্ট দিয়েছিলেন। যদিও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে শেষ পর্যন্ত তারও এজেন্ট ধরে রাখা কষ্টকর হয়। এ ছাড়াও ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী মির্জা আব্বাস, ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস, ঢাকা-৪ আসনের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা-২ আসনের প্রার্থী ইরফান ইবনে আমান অমি, ঢাকা-৩ আসনের প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ভোটের মাঠে নানা প্রতিকূল পরিবেশেও মাঠে দেখা যায়, যা অন্যদের দেখা যায়নি।

সূত্র মতে, ঢাকাসহ সারা দেশেই প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল ছিল বিএনপির। এ ছাড়া মনোনয়নের চিঠি বেচা-কেনার অভিযোগও ছিল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপনের মতো হেভিওয়েট নেতাদের ভোটের বাইরে রাখা হয়েছে। ঢাকার দুর্বল প্রার্থীদের বাদ দিয়ে এসব আসনে হেভিওয়েটদের জায়গা করে দেওয়া উচিত ছিল মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

ঢাকার বাইরেও এমন অনেক স্থানে প্রার্থী নির্ধারণ করতে পারেনি বিএনপি। পিরোজপুর-২ আসনে ধানের শীষ তুলে দেওয়া হয় লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে। তিনি পান মাত্র ৬ হাজার ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী জেপির আনোয়ার  হোসেন মঞ্জু ভূমিধস জয় পান। তিনি পেয়েছেন ১,৮৯,৪৮৩ ভোট।  ময়মনসিংহ-৮ আসনে (ইশ্বরগঞ্জ) ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন গণফোরামের এ এইচ এম খালেকুজ্জামান। ওই আসনে ২০ দলীয় জোটের আরেক শরিক দল ডিএল সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনিও নির্বাচন করেন। ফলে দুজনেরই ভরাডুবি হয়। এ প্রসঙ্গে সাইফুদ্দিন মনি জানান, তিনি এলাকার স্থানীয়। তাকে মনোনয়নবঞ্চিত করা হয়েছে। এ কারণেই তিনি প্রার্থী হয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চাঁদপুর-১ আসনে বিএনপির যোগ্য প্রার্থী ছিলেন দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আ ন ম এহছানুল হক মিলন। সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সফলও ছিলেন তিনি। বর্তমানে কারাবন্দী। ব্যক্তি বিশেষের অপছন্দের কারণে তাকে মনোনয়ন দেয়নি। দেওয়া হয় মোশাররফ হোসেন নামে এক মালয়েশিয়া প্রবাসী আদম ব্যবসায়ীকে। তার বিপরীতে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। আওয়ামী লীগের এই নেতা ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৬৬ ভোট। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মোশাররফ  হোসেন পেয়েছেন মাত্র ৭ হাজার ৯০৪ ভোট। বিশ্লেষকরা বলছেন, যেসব আসনে প্রার্থী মাঠে ছিল সেখানে বিএনপি মোটামুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। রংপুর বিভাগে বেশকিছু সংসদীয় আসনে বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পেরেছিল। রংপুর বিভাগে পঞ্চগড়-১ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মজাহারুল হক প্রধান। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ব্যারিস্টার মুহম্মদ নওশাদ জমির পেয়েছেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৯ ভোট।

পঞ্চগড়-২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৯৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ফরহাদ হোসেন আজাদ পেয়েছেন ১ লাখ ১১ হাজার ২৯৫ ভোট। ঠাকুরগাঁও-১ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেন। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ২৪ হাজার ৭৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পেয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৯০৯ ভোট। ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে বিএনপির জাহিদুর রহমান বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ৮৭ হাজার ১৬৫ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদুল হক মোটরগাড়ি প্রতীকে ৮৪ হাজার ১০৯ ভোট পেয়েছেন। দিনাজপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোরঞ্জন শীল গোপাল বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ৭৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের মোহাম্মদ হানিফ (ধানের শীষ) পেয়েছেন ৭৮ হাজার ৯২৮ ভোট।

দিনাজপুর-২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মো. সাদিক রিয়াজ পিনাক পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৮২২ ভোট। দিনাজপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৩ হাজার ৮৬৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আখতারুজ্জামান মিয়া পেয়েছেন ৬১ হাজার ৭০৬ ভোট। দিনাজপুর-৫ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এ জেড এম রেজওয়ানুল হক পেয়েছেন ১ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৭ ভোট। দিনাজপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগের শিবলী সাদিক ২ লাখ ৮১ হাজার ৮৯১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের আনোয়ারুল ইসলাম (ধানের শীষ) ৬৯ হাজার ৭৬৯ ভোট পেয়েছেন। নীলফামারী-১ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফতাব উদ্দিন সরকার। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৮৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রফিকুল ইসলাম পেয়েছেন ৮৮ হাজার ৭৯১ ভোট।

নীলফামারী-২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান নূর। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মনিরুজ্জামান মন্টু পেয়েছেন ৮০ হাজার ২৮৩টি। লালমনিরহাট-২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নূরুজ্জামান আহমেদ। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ৬৪৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রোকন উদ্দীন বাবুল পেয়েছেন ৭৩ হাজার ৫৩৩ ভোট। লালমনিরহাট-৩ আসনে বিজয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু পেয়েছেন ৮৯ হাজার ১১৯ ভোট। রংপুর-৩ আসনে বিজয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ । তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৯২৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রিটা রহমান পেয়েছেন ৫৩ হাজার ৮৯ ভোট। রংপুর-৪ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের টিপু মুনশি। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৭৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মোহাম্মদ এমদাদুল হক পেয়েছেন ১ লাখ ৪ হাজার ১৭০ ভোট। রংপুর-৫ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের এইচ এন আশিকুর রহমান। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাহ সোলায়মান আলম ফকির পেয়েছেন ৬৩ হাজার ৪৬৯ ভোট।

কুড়িগ্রাম-১ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আছলাম হোসেন সওদাগর। তিনি পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫১১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাইফুর রহমান রানা পেয়েছেন ৫১ হাজার ভোট। কুড়িগ্রাম-২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির পনির উদ্দিন আহমেদ। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির (গণফোরাম) আমসা-আ-আমিন পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৪৮০ ভোট। কুড়িগ্রাম-৩ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের এম এ মতিন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৯০১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তাসভীর উল ইসলাম পেয়েছেন ৬৯ হাজার ২১৫ ভোট। কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের জাকির হোসেন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৪৭০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আজিজুর রহমান পেয়েছেন ৩৪ হাজার ২১৭ ভোট।

সূত্র মতে, প্রার্থীদের মধ্যে যারা মাঠে ছিলেন তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। যারা মাঠে থাকেননি তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকতে পারেননি।

শপথ নেবে না ধানের শীষের বিজয়ীরা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ী প্রার্থীরা শপথ নেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’ হয়েছে অভিযোগ করে ঘোষিত ফলাফল বাতিল ও অবিলম্বে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছে দলটি।

গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায়’ আগামী দিনে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

সদ্য অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও জোটের সাতজন প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। তাদের মধ্যে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ছয়জন ও গণফোরামের উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে একজন রয়েছেন।

এর আগে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিকাল ৪টা থেকে  দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনে নজিরবিহীন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করা হয়েছে। এই কলঙ্কজনক নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন করতে হবে। এটা অনতিবিলম্বে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করতে হবে। দাবি আদায়ে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনের কর্মসূচি থাকবে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব। 

সূত্র জানায়, নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে এবং নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের দিন প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার পরও কেন্দ্র থেকে সঠিক নির্দেশনা না পাওয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। একপর্যায়ে এসব বিষয় নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনাও ঘটে। তবে নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে একাধিক নেতা মত দেন। তারা বলেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আসল চেহারা উন্মোচিত হয়েছে। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, অনেকে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তকে ভুল বলেছিলেন। আমার বিশ্বাস এখন তারাই বলবে ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়েই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দলীয় সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, তা একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, বৈঠকে ধানের শীষের বিজয়ীদের প্রসঙ্গ উঠলে এ নিয়ে সব নেতাই কথা বলেন। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তারা সবাই তাদের নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতি তুলে ধরেন। পরে ধানের শীষের বিজয়ীদের শপথ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত হয়। 

সর্বশেষ খবর