মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মানুষ উন্নয়নের সুফল পেয়েছে বলেই ভোট দিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচন খুবই শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এর আগে কখনো এতটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়নি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। দেশের মানুষ উন্নয়নের সুফল পেয়েছেন বলেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। অন্যদিকে নিজেদের দুর্নীতি-সন্ত্রাসের কারণে নির্বাচনে বিএনপি সাতটি আসন পেয়েছে। ভরাডুবি হয়েছে। জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে তাদের জবাব দিয়েছে।’ গতকাল বিকালে গণভবনে ৩০ দেশের পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। ভারত, নেপাল, জাপান, ওআইসি, কমনওয়েল্থ, বিবিসি, এপি, রয়টার্সের মোট ৪৩ জন সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরিচিতি পর্বে তারা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম, আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আক্তার, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মোহাম্মদ-এ আরাফাত। সভায় বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকরা নির্বাচনে বিএনপির সাতটি আসন পাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে প্রশ্ন করেন। এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয় ও বিএনপি-জামায়াত জোটের শোচনীয় পরাজয়ের কারণগুলোও তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে বিএনপি সাতটি আসন পেয়েছে তাদের নিজেদের কারণে। নির্বাচনে অংশ নিলেও তাদের প্রধান কে হবেন তা তারা দেখাতে পারেনি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকালে আপনারা দেখবেন, কংগ্রেসও গত নির্বাচনের আগে দেখাতে পারেনি তাদের প্রধান কে হবেন। তারা মানুষকে ওইভাবে আকৃষ্ট করতে পারেনি। ঐক্যফ্রন্টের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। ভোটে পরাজয়ের কারণগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপি তাদের জোটে মানবতাবিরোধীদের নমিনেশন দিয়েছে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী কর্মকাে র জন্য জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই দলের ২৫ জনকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট মনোনয়ন দিয়েছে, এজন্য তাদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। আর বিএনপির মূল লিডাররা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত এবং আদালতের রায়ে অভিযুক্ত। তাদের একজন কারাগারে ও অন্যজন পলাতক। সুতরাং তাদের মূল নেতৃত্বের অভাব ছিল। পরাজয়ের এটিও একটি কারণ।

মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিএনপির অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ব্যাপক মনোনয়ন-বাণিজ্য করেছে। তারা টাকার বিনিময়ে, অর্থাৎ যে টাকা বেশি দিয়েছে তাকেই নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়নি তারা। একেকটা আসনে চারজন, পাঁচজন ও তিনজন করে নমিনেশন দিয়েছে। এতে কেউ আর ওইভাবে মাঠে কাজ করেনি। কে কী করবে না করবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে কেউ কাজ করেনি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, নির্বাচন হলে মানুষ চিন্তা করে, কে প্রধানমন্ত্রী হবে। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট কাউকে সেভাবে জাতির সামনে দেখাতে পারেনি। ফলে তারা ওইভাবে ভোটারদের আকর্ষণও করতে পারেনি। আইনজীবী হিসেবে কামাল হোসেন খুবই ভালো। কিন্তু তিনি যখন তার দল গণফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন, তখন থেকেই তার নির্বাচন পরিচালনা করার ভালো অভিজ্ঞতা নেই, জেতারও কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তিনি বলেন, ‘বিএনপি আমলে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলা ইত্যাদি কারণে মানুষ তাদের রিজেক্ট করেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করেছি, তারা (বিএনপি-জামায়াত ও ঐক্যফ্রন্ট) নির্বাচনী কোনো কাজ করেনি। কয়েকজনের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও অনেকেই অ্যাকটিভিটি না করে প্রোপাগান্ডা ছাড়া সে রকম কিছু করেনি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই নির্বাচনটা খুবই শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এর আগে কখনো এতটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়নি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। এই নির্বাচনে আমাদের জনগণ অবাধে ও ভীতিহীনভাবে ভোট দিতে পেরেছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়েছে নির্বাচনে। এতে আমাদের দলের কিছু কর্মীও মারা গেছে। এজন্য আমরা দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ করছি।’ এ সময় আওয়ামী লীগ আমলে দেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশজুড়ে অবকাঠামো, কর্মসংস্থান ছাড়াও ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। বিগত বছরগুলোয় মানুষ অধিকতর ভালো জীবন যাপন করেছে। এজন্য তারা আমাদের ভোট দিয়েছে।’ এ সময় তিনি বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষার প্রসার, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নসহ বিভিন্ন সুবিধার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এজন্য তরুণরাও আকৃষ্ট হয়ে আমাদের ভোট দিয়েছে।’ গণতন্ত্র ও নির্বাচনের নানা বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও নির্বাচনী ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য নির্বাচন কমিশনকে একটি সাংবিধানিক সংস্থায় পরিণত করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র অগ্রসর হচ্ছে। অতীতে মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতায় বসেছে। বিএনপির জন্ম ক্যান্টনমেন্ট থেকে। আমিই একমাত্র ব্যক্তি, যে কিনা ক্যান্টনমেন্ট থেকে না এসে দেশ পরিচালনা করছি। গণতন্ত্র ছাড়া কোনো দেশ উন্নতি করতে পারেনি। আমি সব সময়ই চিন্তা করেছি, জনগণ ভোট দিলে (ক্ষমতায়) থাকব, অন্যথায় থাকব না।’ বিরোধীদের নিরাপত্তা বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হই তখন সব মানুষেরই প্রধানমন্ত্রী। সবাইকে সুরক্ষা দেওয়া আমার দায়িত্ব। ভোটের অধিকার মানুষের। ভোট দেওয়ার সময় মানুষ যাকে ইচ্ছা তাকে দেবে। কিন্তু ভোটের পর সবাই সমান।’ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ভিসা জটিলতা, ভিসা না দেওয়া, তাদের আসতে না দেওয়া বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকেই রাজনৈতিক দলের সদস্য। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের কারণে তাদের আসতে দেওয়া হয়নি।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, ‘আনফ্রেল বাংলাদেশের নির্বাচনের আগের দিন একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাদের বিবৃতির ভাষা মর্যাদাহানিকর। তাদের বিবৃতি ভুল তথ্য ও অনুমাননির্ভর। আনফ্রেলের লোকাল চ্যাপ্টার হচ্ছে অধিকার। অধিকারের চেয়ারম্যান আদিলুর রহমান। আনফ্রেল ভিন্ন একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে অ্যাডভোকেসি করছিল। তারা ভুল জায়গায় অ্যাডভোকেসি করেছে। সাংবিধানিক ধারা অনুসারে, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বর্তমানে বা পূর্বে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন কেউ পর্যবেক্ষক হতে পারবে না।’

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আপনার প্রত্যাশা কী- এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ করছি। তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আমার প্রত্যাশা, তাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া। তারা কত দিন অন্য একটি দেশে শরণার্থী হিসেবে জীবন যাপন করবে? আন্তর্জাতিক মহলের উচিত তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখা। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা ও একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি।’

সর্বশেষ খবর