মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

আইনি লড়াই ও আন্দোলনে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

সীমাহীন অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। একই সঙ্গে তারা পুনঃনির্বাচনের জন্য আইনি লড়াইয়ে যাওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুনঃনির্বাচনের দাবিতে আগামী ৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ সব বিরোধী দলের প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি প্রদান করবেন এবং এখান থেকেই তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। গতকাল (সোমবার) রাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের মতিঝিলের চেম্বারে অনুষ্ঠিত ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে ড. কামাল হোসেন একথা জানান।

অন্যদিকে, নতুন সংসদে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত সদস্যদের শপথ নেওয়ার ব্যাপারেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি গতকাল। তবে এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা এ নির্বাচনের ফলাফল পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছি। কাজেই এর বাইরে আর কোনো কথা থাকতে পারে না। ‘দ্যাটস এনাফ’। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চায় শপথ না নিতে, কিন্তু গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুজন চান শপথ নিতে। এ অবস্থায় বিষয়টি অমীমাংসিত রাখা হয়।

বৈঠক থেকে ড. কামাল হোসেন একটি বিবৃতি দেন। এতে তিনি বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে যে প্রহসনমূলক নাটক মঞ্চস্থ হলো, তা সমগ্র দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছেন। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কীভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, তা এদেশের মানুষসহ সমগ্র বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং তাদের আজ্ঞাবহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এই কথিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকারকে বিজয়ী দেখালেও প্রকারান্তরে হেরেছে বাংলাদেশ ও তার ১৭ কোটি মানুষ। এর মধ্যদিয়ে কবর রচিত হয়েছে আমাদের বহু আকাক্সিক্ষত গণতন্ত্রের। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কথিত নির্বাচনের ফলাফল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন প্রমুখ বৈঠকে অংশ নেন।

বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিল ‘আই-ওয়াশ’ : ফখরুল

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে যাদের কথা বলা হচ্ছে- তাকে ‘আই-ওয়াশ’ বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে  নির্বাচনোত্তর পর্যালোচনায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে বিদেশি অবজারভার আছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা দেখেছি যে আমেরিকান এনডিআইসহ অন্যান্য যেসব অবজারভার আসার কথা ছিল তাদের ভিসা দেওয়া হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোনো অবজারভার পাঠায়নি। তারা দুজনের একটা মনিটরিং টিম পাঠিয়েছে।

ভারতীয়রা কী পাঠিয়েছে অফিশিয়ালি আমি জানি না, কানাডিয়ানরাও কী পাঠিয়েছে আমরা জানি না। সুতরাং অবজারভার হিসেবে যাদের দেখানো হচ্ছে- এটা কমপ্লিটলি ‘আই-ওয়াশ’ করা হচ্ছে। মূল অবজারভার যারা নির্বাচন অবজারভার করেন তাদের আসতে না দিয়ে এটাই প্রমাণ করেছেন- তারা এই জিনিসটাকে আড়ালে রাখতে চেয়েছেন, গোপন রাখতে চেয়েছেন। তবে যারা এসেছেন তারা তাদের স্পন্সরড।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ‘কারচুপি ও ভোট ডাকাতির’ নানা অভিযোগ তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অনেকে বলছেন উৎসবমুখর নির্বাচনের কথা। এটা যারা নির্বাচন দেখেন নাই, যারা কোনো নির্বাচন কেন্দ্রে যাননি, তারাই বলছেন উৎসবমুখর নির্বাচন হয়েছে। অথচ সেখানে ভয়-ভীতির পরিবেশ ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর