বুধবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভারতের গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিজয়কে স্বাগত

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি

ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে প্রকাশিত সব গণমাধ্যম বাংলাদেশে সংসদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল জয়কে স্বাগত জানিয়েছে। এইসঙ্গে প্রত্যেক সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় নিবন্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও উন্নত শিখরে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় নেত্রী। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি আশাতীত সাফল্য অর্জন করেছে। মাথাপিছু গড় জাতীয় উৎপাদন পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি এবং ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে চলেছে।’

এও লিখেছে, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের একটি অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তাঁর আমলেই সংবিধান সংশোধন করে গণতান্ত্রিক ভিত্তি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সেইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে তিনি অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্থানীয় সন্ত্রাসবাদীদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তাঁর আমলেই ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এক উন্নত পর্যায়ে। বিদ্যুৎ-শিক্ষা-পরিকাঠামো-রেল ও জলপথে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।’ তবে এ প্রবন্ধে সতর্ক করা হয়েছে যে তাঁর আমলের সাফল্যকে বানচাল করার প্রক্রিয়া চলবে। দ্য হিন্দুস্তান টাইমস শিরোনাম দিয়েছে- ‘হাসিনা দ্য আনচ্যালেঞ্জড লিডার’। এতে বলা হয়েছে, ‘বিরোধী বিএনপি নেতৃত্ব ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছে। তবে তাদের পাকিস্তানপন্থি জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করায় সেই আলোচনা আর ফলপ্রসূ হয়নি।’ দ্য হিন্দু পত্রিকা প্রথম সম্পাদকীয়টি করেছে শেখ হাসিনার বিজয়কে নিয়ে। তাদের বিশ্লেষণ হলো : ‘বিপুল আর্থিক উন্নতি এবং সামাজিক উন্নতিকে হাতিয়ার করেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনী এজেন্ডা তৈরি করে। বিরোধী দল নির্বাচনকে প্রহসন বললেও নিরপেক্ষ ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম, সার্ক মানবাধিকার গোষ্ঠী, যাদের মধ্যে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা রয়েছেন তাঁরা নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ বলে আখ্যা দিয়েছেন।’ সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘বিপুল জয়ের পরও হাসিনার সামনে প্রভূত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা দমন এবং সামাজিক মেরুকরণকে রোখা।’ এও বলা হয়েছে, ‘এরপর শেখ হাসিনা সুশাসন দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতে লোকসভা নির্বাচন আসন্ন হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে আর্থিক, নিরাপত্তা ও স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।’

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে নির্বাচন-পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথোপকথনের রিপোর্ট পাঠিয়েছে। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- ‘বিরোধীরা সংখ্যায় কম হওয়া কি সঠিক?’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু হয় না। ভারতের রাজীব গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখন প্রধান বিরোধী দল মাত্র দুটি আসন পেয়েছিল। আজ সেই বিজেপি ভারতের ক্ষমতায়।’ এও বলা হয়, ‘দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেন হাসিনা।’

দি ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনার তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার ফলে ভারতের “পড়শি প্রথম” নীতি আরও জোরদার হলো। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সুস্থিতি ভারতের পক্ষেও স্বস্তির। আর্থিকভাবে উন্নত বাংলাদেশ ভারতের পক্ষেও লাভদায়ক হবে। এর দ্বারা উভয় দেশ লাভবান হতে পারে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের শেখ হাসিনার জয় ভারতের নির্বাচনের মুখে এক স্বস্তিদায়ক ঘটনা। বিশেষ করে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা অর্জন করার অর্থ ভারতবিরোধী শক্তিগুলো মাথা চাড়া দিতে পারবে না।’

সর্বশেষ খবর