বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

কেমন হবে মন্ত্রিসভা

থাকবে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়, বিতর্কিতদের ঠাঁই হবে না, দল ও সরকার আলাদা

রফিকুল ইসলাম রনি

সবার দৃষ্টি এখন মন্ত্রিসভার দিকে। কেমন হবে এবারের মন্ত্রিসভা? কারা থাকছেন নতুন মন্ত্রিসভায়? রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে আমলাপাড়াসহ চায়ের কাপে, সর্বত্র আলোচনায় টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে যাওয়া আওয়ামী লীগ সরকারে কারা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। নবনির্বাচিত এমপিদের মধ্যেও কৌতূহল- কে ডাক পাচ্ছেন বঙ্গভবনে? দল ও সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এবারের নতুন মন্ত্রিসভায় চমক দেখাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিতর্কিত, বয়সের ভারে ন্যুব্জদের স্থান হবে না মন্ত্রিসভায়। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য একটি মন্ত্রিসভা উপহার দেবেন তিনি। দল ও সরকার আলাদা রাখতে মন্ত্রিসভায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা কম থাকবেন বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভায় কাকে রাখবেন, কাকে রাখবেন না, সে হোমওয়ার্ক শেষ করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার গুডবুকে স্থান পাওয়ারাই এবার ডাক পাচ্ছেন বঙ্গভবনে।

জানা গেছে, আজ বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনে পূর্ব ব্লকের (নিচতলা) প্রথম লেভেলে নবনির্বাচিত এমপিদের শপথ গ্রহণ হবে। এ শপথবাক্য পাঠ করাবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। দুপুর ১২টায় আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হবে। এরপর শুরু হবে মন্ত্রিসভার গঠন প্রক্রিয়া। পরে সংসদীয় দলের নেতা শেখ হাসিনাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন রাষ্ট্রপতি। ৬ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠনের জোর সম্ভাবনা রয়েছে। ওই দিন আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে শপথ পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি। এরপর শপথ নেবেন নবগঠিত মন্ত্রিসভার সদস্যরা। এর আগে মন্ত্রিসভার তালিকা রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

৩০ ডিসেম্বর রবিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। মহাজোটগতভাবে আওয়ামী লীগ ২৮৮ আসন এবং এককভাবে ২৫৯ আসন পায়।

আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, এবারের মন্ত্রিসভায় চমক দেবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বিগত মন্ত্রিসভার কমপক্ষে আটজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বয়সের কারণে বাদ পড়বেন। এ ছাড়া কপাল পুড়বে যারা নিজেদের কর্মকা-ের কারণে বিতর্কিত হয়েছেন, দলকে দাঁড় করিয়েছেন কাঠগড়ায়। তাদের নতুন মন্ত্রিসভায় রাখছেন না প্রধানমন্ত্রী। এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন জেলার অনেক প্রবীণ নেতা, যারা তিন থেকে চারবার এমপি হয়েছেন। অন্যদিকে চমক হিসেবে স্থান দেওয়া হবে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত এমপিদেরও। বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ দু-একজন টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী শপথ নেবেন। অতীতের মতো মহাজোটের কয়েকজন মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করছেন। জাতীয় পার্টি এবার মন্ত্রিসভায় থাকবেন কিনা তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। তবে আজ-কালের মধ্যেই জাতীয় পার্টি তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবে। জানা গেছে, মন্ত্রিসভায় শুধু নতুন মুখ নয়, অনেক মন্ত্রীর দফতর রদবদল হওয়ারও জোর সম্ভাবনা রয়েছে। দু-একজন প্রতিমন্ত্রী এবার পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে যেভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল, মন্ত্রিসভা গঠনেও নির্বাচিত এমপিদের মধ্য থেকে সব শ্রেণি-পেশার সমন্বয়ের প্রয়াস থাকবে। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ব্যক্তি ছাড়াও আইনজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, কৃষিবিদ, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, চিকিৎসক সব মিলিয়েই মন্ত্রিসভা গঠন করার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী চান সংসদ ও মন্ত্রিসভায় সব শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিত্ব থাকুক।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ৯ জানুয়ারি এমপিদের শপথ অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনাকে সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগদানের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়। ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের নিয়োগের অবসান ঘটানো হয়। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে নিয়োগ প্রদান করেন। একই তারিখে মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠিত হয়। বিদায়ী মন্ত্রিসভায় ৫৩ জন সদস্য ছিলেন। এবার আকার কিছুটা ছোট করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

এদিকে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কবে নাগাদ মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে, তা দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার। সেখানে অনুপ্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। তবে তিনি কারও সঙ্গে পরামর্শ করলেও করতে পারেন। নতুন সরকার আগামী ১০ তারিখের মধ্যে শপথ নিচ্ছে এ বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদের আকার বাড়বে কিনা এটিও প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর