বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সাক্ষাৎকারে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের এখন সোনালি অধ্যায়

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের এখন সোনালি অধ্যায়

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, বন্ধুত্বের বন্ধনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। দুই দেশের সম্পর্ক এখন সোনালি অধ্যায় পার করছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে যে অমীমাংসিত বিষয়গুলো ছিল তার সমাধান হয়েছে গত তিন-চার বছরে। এ সময়ে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব, আন্তঃসম্পর্ক এবং পারস্পরিক সহযোগিতার অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে।

গত সোমবার ঢাকায় ভারতের হাইকমিশন কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা এসব কথা বলেন। তার তিন বছর কর্মসময়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত গুরুত্বপূর্ণ কর্মপরিকল্পনা, চুক্তি এবং বিনিয়োগ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের অবস্থান জানিয়েছেন বিদায়ী এই হাইকমিশনার। নিচে সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো :

বাংলাদেশ প্রতিদিন : কেমন আছেন আপনি?

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা :  আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশের জন্য এখন আনন্দের সময়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তারা সরকার গঠন করবে। এ বিজয়কে আপনি কীভাবে দেখছেন?

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা : বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এর ফলে দেশে প্রগতিশীল গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করি। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর ৩১ ডিসেম্বর সকালে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার এই ঐতিহাসিক জয়ে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হ্যাটট্রিক জয়ে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি এ সময় একটি বিষয় উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছে। তিনি দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্কের ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে প্রতিবেশী দুই বন্ধু রাষ্ট্রই উপকৃত হতে পারে। এ জয়ে ভারতের জনগণ বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এখন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের কর্তব্য হবে বাংলাদেশের জনগণের এই মতামতকে মূল্যায়ন করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা। দেশকে এগিয়ে নিতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের তরুণ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরি বিষয়গুলোতে জোর দিতে হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনি বাংলাদেশের নবনির্বাচিত এই সরকারকে কীভাবে অভিনন্দন জানাতে চান?

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা : ফলাফল ঘোষণার পর আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন এবং শুভ কামনা জানিয়েছি। বাংলাদেশে আমার এই কর্মসময়ে পরিচিত বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যকে ব্যক্তিগতভাবে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। আমি মনে করি, এটি শুধু একটি বিজয় নয়, আরও বড় কিছু। এ নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। আমরা আনন্দিত যে, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর ফলাফল সবার সামনেই দৃশ্যমান। মানুষ চেয়েছে এমন একটা সরকার গঠিত হোক, যারা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে ভাববে এবং কাজ করবে। বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজন এখন শুধু দারিদ্র্যমুক্ত হওয়া নয়, আরও অনেক বেশি কিছু। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ হতে চলেছে। দেশে দারিদ্র্য ২০ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ এখন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, ডিজিটালকরণ থেকে শুরু করে সার্বিক উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপট থেকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই।’ কারণ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নীতি হচ্ছে ‘সবার সঙ্গে কাজ করা এবং সবাই মিলে বিকশিত হওয়া।’ এই উন্নয়ন শুধু ভারতের অভ্যন্তরে নয়, প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র থেকে শুরু সংশ্লিষ্ট সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাই, যাতে দুই দেশই উপকৃত হতে পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের প্রায় ৪ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার সীমান্ত এলাকা রয়েছে। প্রত্যেকটি দেশই চায় শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখতে, যদি পাশের দেশও তা বজায় রাখে। বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক ধারা, চলমান উন্নয়ন এবং শান্তি-শৃঙ্খলা অব্যাহত রাখতে ভোট প্রদান করেছে। তাই আমরা মনে করি, বাংলাদেশের এই প্রবহমান সমৃদ্ধি আমাদের জন্যও সুখবর বয়ে আনবে। এটা আমাদের ভাগ্যকেও এক সুতায় গেঁথে দিয়েছে। সব মিলিয়ে এ বিজয় আমাদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে কলকাতার কয়েকজন সাংবাদিক এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বলেছিলেন, যে দলই বিজয়ী হোক না কেন তারা অবশ্যই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে। ভারত কি চেয়েছিল এই দলই বিজয়ী হোক?  

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা : আমরা গণতন্ত্র দেখতে চাই। এটা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। কোন দল ক্ষমতায় আসবে বা নির্বাচনে বিজয়ী হবে এটা আমাদের ভাবনার বিষয় না। এ বিষয়টি নির্ভর করবে বাংলাদেশের জনগণের ওপর। জনগণ যাদের ভোট দেবে বিজয় তাদেরই হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশ-ভারত সুসম্পর্কের এই ধারাবাহিকতায় আপনারা বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিসা সেন্টার স্থাপন করেছেন। এটা সাফল্যজনক সুসম্পর্কের বার্তা বহন করে। আমরা এ সাফল্যের পেছনে থাকা অজানা গল্প জানতে চাই।

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা : এটা কোনো ব্যক্তিগত অর্জন নয়। টিমওয়ার্কের কারণে এই ভিসা সেন্টারের বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। আমাদের এখানে একদল দক্ষ কর্মকর্তা রয়েছে। এই ভিসা সেন্টার বাস্তবায়নে দিল্লিতে কর্মরত আমার সহকর্মী এবং বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ অনেক সহযোগিতা করেছে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ একবার আমাকে বলেছিলেন, ‘আপনি সবার আগে ভিসা ইস্যুর সমাধান করুন।’ যখন আমি বাংলাদেশে দায়িত্ব নিয়ে এলাম, তখন দেখলাম ভারতের ভিসার জন্য সাক্ষাৎকার প্রার্থী মানুষের দীর্ঘ লাইন। এ জন্য ক্যাপাসিটি, পলিসি এবং ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনলাম। এখন আর ভিসার জন্য সাক্ষাৎকারের সেই জটিলতা নেই। যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক ভিসা সেন্টারে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করে খুব দ্রুত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভিসা পেতে পারে। অনেকেই প্রথমবার ভারতে যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদন করতে আসেন। তারা যেন কোনো জটিলতার মুখে না পড়েন তা-ই ছিল আমাদের প্রথম লক্ষ্য। জটিলতামুক্ত ভিসা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে ধারাবাহিকতায় খুব সম্ভবত বিশ্বে সবচেয়ে বড় ভারতীয় ভিসা সেন্টার আমরা বাংলাদেশে স্থাপন করতে পেরেছি। প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ স্কয়ার ফিটের জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা এই ভিসা সেন্টারে ৪৮টি কাউন্টার রয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, চিকিৎসাযাত্রী, ব্যবসায়ী, নারী, পর্যটকদের জন্য আলাদা কাউন্টার রয়েছে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এখন ভিসা প্রদান করা হচ্ছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে মোবাইলের সাহায্যে আবেদনকারী ভিসা ফি পরিশোধ করতে পারবেন। খুব দ্রুত ঝামেলামুক্ত সুন্দর ব্যবহারে ভিসা আবেদনকারীকে সেবা দেওয়া হয়। মানুষ যেন ভালোভাবে সেবা পায়, এ জন্য আমরা স্টাফদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের সঙ্গে আউটসোর্স পার্টনার হিসেবে রয়েছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। ভিসা গ্রহণ করে ভারতে গেছেন এরকম প্রত্যেক বাংলাদেশি নাগরিককে সুষ্ঠু সেবা দিয়ে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারাই আমাদের সার্থকতা।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ চিকিৎসাসেবা, ভ্রমণ এবং কেনাকাটার জন্য প্রতিবছর ভারতে যায়। আপনারা তাদের কীভাবে গ্রহণ করেন?

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা : বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ থেকে বেশ বড় একটা জনগোষ্ঠী প্রতিদিন ভারত ভ্রমণে যায়। এটা শুধু এমন নয় যে, তাদের কলকাতা কিংবা বাংলাদেশের কাছাকাছি রাজ্যগুলোতে দেখা যায়। বাংলাদেশের মানুষ শ্রীনগর, মুম্বাই, চেন্নাই থেকে শুরু করে অন্য রাজ্যগুলোতেও ভ্রমণে যাচ্ছে। এতে দুই দেশের মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়ছে। ভালো সম্পর্ক মানে শুধু দুই দেশের সরকারের বন্ধুত্ব বজায় রাখা নয়, দুই দেশের মানুষের মধ্যে একটা আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। প্রতিবছর ৩০ লাখ বাংলাদেশি ভারত ভ্রমণে যায়। ভ্রমণকারীদের উৎসাহিত করতে আমরা চেষ্টা করছি দীর্ঘ সময়ে মাল্টিপল ভিসা দেওয়ার। আমি চেষ্টা করে মুক্তিযোদ্ধাদের পাঁচ বছরের মাল্টিপল ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া বয়স্ক নাগরিক, ব্যবসায়ী এবং ভ্রমণকারীদেরও দীর্ঘ সময়ের মাল্টিপল ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভারতের সংরক্ষিত এলাকা যেমন- সিকিম, লাদাখ, অরুণাচল প্রদেশে বাংলাদেশি ভ্রমণেচ্ছুদের অনুমতি প্রক্রিয়া খুব সহজ করা হয়েছে। আমরা প্রতিদিন প্রায় ৮৫ জনের আবেদন পাই, যারা এই এলাকাগুলোতে বেড়াতে যেতে ইচ্ছুক। আমার জন্মস্থান দার্জিলিং শহরে অনেক বাংলাদেশি ভ্রমণকারী দেখতে পাই, যারা স্থানীয়দের সঙ্গে ছবি তুলছে, পুরো এলাকা ঘুরে দেখছে। তার মানে বাংলাদেশের মানুষ ভারতে ঘুরে দেখতে এবং মানুষদের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করছে। দুই দেশের মানুষের সম্পর্ক উন্নয়নে আমি যতটুকু অবদান রাখতে পারি, সেই চেষ্টাই করেছি। আমি মনে করি, এখানেই আমার সার্থকতা। বাংলাদেশের নোয়াখালী, দিনাজপুর, সাতক্ষীরাসহ বেশ কিছু এলাকায় আমরা ভিসা সেন্টার স্থাপন করেছি। দুই দেশের সরকার যোগাযোগ প্রক্রিয়া সহজ করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। খুলনা-কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস চালু হয়েছে। প্রথম দিন আমি এই ট্রেনে ভ্রমণ করেছিলাম। ৫৬ বছর পরে কোনো ট্রেন বাংলাদেশ থেকে যাত্রী নিয়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। অনেকের চোখে আনন্দাশ্রু দেখেছিলাম। কারণ ১৯৬৫ সালের আগে বরিশাল এক্সপ্রেস বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিল এই ট্রেন লাইন ব্যবহার করে। ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসে ওয়ানস্টপ কাস্টম এবং সহজ ইমিগ্রেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে সীমান্তে থামার কোনো প্রয়োজন নেই। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভ্রমণ করছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ভ্রমণের কথা চিন্তা করে এই ট্রেনের টিকিট মূল্য ন্যূনতম রাখা হয়েছে।   

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দুই দেশের মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়াতে আপনারা কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন?

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা : মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়াতে এবং সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনকে জোরদার করতে কাজ করছি। গত তিন বছরে আমরা গান, নৃত্য, অঙ্কন, ইয়োগাসহ সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখার চর্চা বাড়াতে বেশ কিছু কোর্স চালু করেছি ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারে। ২১ জুন বিশ্ব যোগ দিবসে আমাদের আয়োজনে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক অংশগ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশে আমাদের সহযোগিতায় প্রায় ৪০০ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানের অধিকাংশেই অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশের শিল্পীরা। আমাকে যদি বলেন, কেন আমরা এই সহযোগিতা করছি? কারণ আমরা চাই দুই দেশের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন জোরদার ও সমৃদ্ধ হোক। সংস্কৃতি দুই দেশের মানুষকে আরও কাছে আনবে, বন্ধনকে আরও মজবুত করবে বলে আমি মনে করি। দুই দেশের নগরায়ণের ধারায় আন্তসম্পর্ক রয়েছে। কারণ দুই দেশর মধ্যে রয়েছে অভিন্ন নদী। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা থেকে শুরু করে ৫৪টি নদী ভারত-বাংলাদেশকে সংযুক্ত করেছে। এই নদীর তীরে উর্বর জমিতে বিকাশিত হয়েছে নগরায়ণ এবং সংস্কৃতির ধারা। রবীন্দ্র সংগীত বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। সম্প্রতি সাংস্কৃতিক সম্প্রীতিতে ছায়ানট ‘ঠাকুর অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে। এই অ্যাওয়ার্ডের জুরি বোর্ডে ছিলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উগ্রবাদ, মৌলবাদ এবং জঙ্গিবাদের হাত থেকে তরুণদের বিরত রাখতে সংস্কৃতির বিকল্প নেই। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে পয়লা বৈশাখ উদযাপনসহ অসংখ্য সর্বজনীন উৎসব রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়াতে জনগণের মধ্যে আন্তসম্পর্ক বাড়ানো প্রয়োজন। এতেই সরকারের কানেকটিভিটি উদ্যোগগুলো সফলতা লাভ করবে। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সম্পদ। তারা দুই দেশের প্রতিনিধি। মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়েছে। তাদের অনেকেই এখন বয়সের ভাড়ে ন্যুব্জ। আমরা ১০০ জন অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে ভারতের মিলিটারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে আমরা নতুনভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বৃত্তি প্রদান স্কিম চালু করেছি। এর আওতায় প্রায় ৩৮ কোটি রুপি বরাদ্দ রয়েছে। এর আগেও আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের বৃত্তি প্রদান করেছি। মুক্তিযোদ্ধারা শুধু তাদের উত্তরাধিকারী নয়, আগামী প্রজন্মের সবার গর্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের সম্মাননা দিয়েছেন। এই সম্মান আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের। ২০১৭ সালের এপ্রিলে আয়োজিত এই সম্মাননা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে গিয়েছিলেন। এ সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। ওই মুহূর্তটি আমাদের জন্য সম্মানের এবং গর্বের। এই রক্তের বন্ধন দুই দেশের মানুষকে কাছে এনেছে, আত্মার আত্মীয় করে তুলেছে। ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক এবং নগরায়ণের এই সংযোগ দুই দেশের মানুষের মেলবন্ধনকে জোরালো করেছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনার কর্মসময়ে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোন কোন সফলতা আপনি উল্লেখযোগ্য বলে মনে করেন?

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা : এই সময়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এটাকে অভিহিত করেছেন সোনালি অধ্যায় হিসেবে। গত বছর যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়েছিলেন তখন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছিলেন, কৌশলগত কারণে নয়, আত্মিক বন্ধনে দুই দেশের সুসম্পর্ক নজিরবিহীন অধ্যায় পার করছে। এই তিন বছরে ঐতিহাসিক সীমানা চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। ১৯৪৭ সাল থেকে এই বিষয়টি অমীমাংসিত অবস্থায় ছিল। বিশ্বের অসংখ্য দেশের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে সমস্যা রয়েছে। এত শান্তিপূর্ণভাবে এই সমস্যার সমাধান ভারত-বাংলাদেশ করতে পেরেছে, যা অন্যদের জন্য বিস্ময়ের। এটা সম্ভব হয়েছে দুই দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণে। এই সময়ে বাংলাদেশকে ভারত পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করেছে। ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য কিন্তু শুল্ক প্রদান করতে হয়। এতে করে ভারতীয় বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশাধিকার সহজ হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশি পণ্য রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ বেড়েছে বিশেষ করে এনার্জি খাতে। বর্তমানে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আমরা কাজ করছি, প্রাইভেট সেক্টরের বড় কোম্পানিগুলো কয়লা উৎপাদনে কাজ করছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আমাদের বিনিয়োগ রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের গবেষকরা এই প্লান্টের নিরাপত্তা বিষয়ে বাংলাদেশের সরকারকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে। এই তিন বছরে দুই দেশের মধ্যে ৯৯টি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। ২০১৫ সালের জুনে যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন, তখন থেকে এখন পর্যন্ত এই চুক্তিগুলো সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি, সাইবার সিকিউরিটি, কানেকটিভিটিসহ অসংখ্য বিষয় রয়েছে। ব্লু ইকোনমিতেও দুই দেশ কাজ করছে। বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১ শতাংশ সুদে। দুই দেশের সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এগুলো সম্ভব হয়েছে। আমরা মোংলা বন্দর, মোংলা-খুলনা রেলওয়ে সড়ক, পায়রাবন্দর, চট্টগ্রাম বে-টার্মিনালসহ যোগাযোগের সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতা করছি। আমরা মনে করি, যোগাযোগের বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন দুই দেশের কানেকটিভিটিকে আরও জোরদার করবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে ভারতের অভ্যন্তরে রেললাইন স্থাপনের কাজে আমরা সহযোগিতা করছি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশের এনার্জি খাতের উন্নয়নকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা : বাংলাদেশের এনার্জি খাত খুব দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। অনেকগুলো পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণে আমরা সহযোগিতা করছি। ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কাজ করছে। আমরা চাই দুই দেশের উন্নয়ন বেগবান হোক। খুলনা অঞ্চলে পাইপলাইনের মাধ্যমে এলএনজি সরবরাহের কাজ চলছে। আমাদের পাইপলাইন খুলনার কাছাকাছি চলে এসেছে। আপনাদের পাইপলাইনের সঙ্গে সংযুক্ত হলে এই অঞ্চলে আমরা এলএনজি সরবরাহ করতে পারব। এতে করে  মোংলা অঞ্চলকে কেন্দ্র করে শিল্পায়ন জোরদার হবে। একইভাবে আপনাদের বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে ভারতের উত্তরাঞ্চলে এলএনজি সরবরাহ করতে পারেন। আমরা বাংলাদেশের মাধ্যমে আমাদের উত্তরাঞ্চলে এলএনজি সরবরাহে আগ্রহী। আশা করি, বাংলাদেশের এনার্জি খাত-সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো আমাদের সহযোগিতা করবে। আমরা ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের কাজ করছি। এই গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারতের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুরের ডিপোতে পরিশোধিত ডিজেল আনা যাবে, যা দুই দেশের এনার্জি খাতে জরুরি। এ ছাড়া সৌর বিদ্যুতেও কাজ করতে আমরা আগ্রহী। আমরা ভারতের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ খাতকে গতিশীল করতে কাজ করতে চাইছি। প্রয়োজনে বাংলাদেশও যেন এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে সে রকম সুবিধার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আইটি সেক্টরে বাংলাদেশের উন্নয়নকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা : ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এই উদ্যোগটি তরুণদের ভীষণভাবে উজ্জীবিত করেছে। বাংলাদেশের আইটি সেক্টরকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের ১০টি হাইটেক পার্ক প্রকল্পে আমরা সহযোগিতা করছি। হাইটেক ভারতে মডেল হিসেবে সফলতার মুখ দেখেছে। সেই অভিজ্ঞতা এখানেও কাজে লাগানো হচ্ছে। এই হাইটেক পার্কের আওতায় বাংলাদেশের সব আইটি সেক্টর বিকশিত হবে। আমাদের আগ্রহ আছে ভারতের প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রাইভেট খাতের সমন্বয় করে কাজ করার। বাংলাদেশ সরকার আমাদের তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাজের সুযোগ দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে, ভেড়ামারা, মিরসরাই এবং মোংলা। এখানে আমরা বড় কোম্পানি গড়ে তোলার কাজ করতে পারব। এ ছাড়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল মেঘনা উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। সেখানে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ ধরনের কালি উৎপাদিত হবে। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের উন্নয়ন ঘটছে এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং সামাজিক মেলবন্ধন রয়েছে। এই সম্পর্ক আরও জোরদার করতে বাংলাদেশের কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা : আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাজ করছি। যেমন ঢাকায় ক্লাসিক সংগীতে বেঙ্গল ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হলো। এ ধরনের আয়োজন সিলেট, খুলনা, যশোর, কক্সবাজারসহ অন্য জেলাগুলোতেও আয়োজন করা উচিত। এতে করে দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক আবহ তৈরি হবে। বাংলাদেশের জনগণ ভারতেও এ ধরনের পরিবেশনায় অংশ নিতে পারে। দুই মাস আগেই ঢাকায় আমরা দিওয়ালি কনসার্টের আয়োজন করেছিলাম। সেখানে ভারতের স্বনামধন্য শিল্পী শঙ্কর-এহসান-লয় প্রথমবারের মতো ঢাকায় জনসম্মুখে কনসার্টে অংশ নিয়েছেন। আমাদের এই আয়োজনে সহযোগিতা করেছিল বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ এবং বেঙ্গল গ্রুপ। প্রায় ৫ হাজার মানুষ এই আয়োজনে অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে তরুণদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের আরও ৪টি জায়গায় আমাদের কনস্যুলেট রয়েছে। সেখানেও আমরা এ ধরনের আয়োজন করে থাকি। ভারতে গিয়ে সাংস্কৃতিক বিষয়ে পড়াশোনার জন্য আমরা আইসিসিআর স্কলারশিপ প্রদান করে থাকি। বাংলাদেশের প্রচুর শিক্ষার্থী এই স্কলারশিপ গ্রহণ করে বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতনসহ বিভিন্ন খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। এই ধারাকে এগিয়ে নিতে শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন স্থাপিত হয়েছে। এসব প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের জনগণের সাংস্কৃতিক উন্নয়নে নতুনভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের শিল্পীদের ভারতে বিভিন্ন প্রোগ্রামে পরিচিত করাতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, মুম্বাইসহ বিভিন্ন জায়গায় এসব প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিনির্মাণ হয়েছে। এই সম্পর্কের ধারা অব্যাহত রাখতে তরুণদের করণীয় বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা : মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে দেশকে স্বাধীন করেছেন। তাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে। ইতিহাসকে বিকৃত করা যাবে না, সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে দুই দেশের যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সম্মান দিতে হবে। ভারত বাংলাদেশের মানুষকে বন্ধু হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিল। সম্পর্কটা শুধুই বন্ধুত্বের। এই নির্বাচনেও দেখেছেন মানুষের ভোটে সরকার গঠিত হলো। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। মানুষ জানে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে কীভাবে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হয়। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন, এই ইতিহাস এখন তরুণরা জানে। ভারত বাংলাদেশের ১ কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল। কারণ আমরা মনে করি মানুষ মানুষের জন্য। আমরা এখন পর্যন্ত প্রমাণ রেখেছি যে ভারত বাংলাদেশের সবসময়ের বন্ধু। সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে মানুষ জানে কোথা থেকে সীমান্ত শেষ এবং শুরু। এর পাশাপাশি সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে করে বর্ডারে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। এর ফলে আপনারা দেখবেন দীর্ঘদিন বর্ডারে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তাদের সমস্যাগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধান করে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : রোহিঙ্গা ইস্যু এখন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের উদ্যোগকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের প্রতি অত্যন্ত মানবিকতা দেখিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের এই দীর্ঘ স্রোত দেখেও সীমান্ত বন্ধ করেননি তিনি। তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার অসামান্য অবদান রেখেছেন এই ইস্যুতে। এই মানুষগুলোকে আশ্রয় দেওয়া, তাদের জরুরি চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরাও বাংলাদেশের সঙ্গে খুব কাছে থেকে সহযোগিতা করছি। আমাদের সরকারও এই জনগোষ্ঠীর নিরাপদ স্থায়ী প্রত্যাবাসনে চেষ্টা করছে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ মিয়ানমার সফরের সময় এই জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নিতে তাদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন। আমরা ‘ইনসানিয়াত’ কর্মসূচির মাধ্যমে চারবার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা করেছি। তবে রোহিঙ্গা ইস্যু নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক। কারণ উগ্রবাদীরা এসব মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের কাজে লাগাতে পারে। এক সময় এখান থেকে মাথাচাড়া দিতে পারে মৌলবাদ এবং জঙ্গিবাদ। তাই এসব ক্যাম্পের নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি সচেতনতামূলক  কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য হুমকি নয়, ভারতের জন্যও। কারণ একমাত্র ভারতেরই বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। এটাকে শুধু দুই দেশের সমস্যা ভাবলে চলবে না, এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। তাই এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনার বাংলাদেশে তিন বছর কর্মসময়ে দেশের অধিকাংশ জেলা ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে আপনার স্মরণীয় বিষয় কিছু রয়েছে কি-না?

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা : আমি বাংলাদেশের যে প্রান্তেই গিয়েছি সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছি। বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তা আমার মনে দাগ কেটেছে। মানুষের সরলতা এবং বন্ধুত্ব আমার ভালো লেগেছে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সব জায়গাতেই আমি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ পেয়েছি। আমি বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪৫টি জেলাতে ভ্রমণ করেছি। সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, দিনাজপুর, চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়েছি। আমি নৌকা, রেল সব পথেই ভ্রমণ করেছি। আমি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছি। ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের যে ভালোবাসা তা আমাকে সিক্ত করেছে। এই দেশের শস্য শ্যামলা প্রকৃতি, বিভিন্ন রকমের স্থানীয় খাবার, সবজি, পদ্মার ইলিশ, বরিশালের মহিষের দুধের ঘন দই আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। সত্যিই এই দেশ সোনার বাংলা। আবার যদি কখনো সুযোগ হয় আমি অবশ্যই আমার এই ভালো লাগার টানে আসব। বাংলাদেশে আমার এই তিন বছরের কর্মসময় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিদায় বেলায় আমার অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

সর্বশেষ খবর