শুক্রবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সাজা দিলে দেন আদালতে আর আসব না : খালেদা জিয়া

‘ভোট নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে বলেছেন, ‘এই আদালতে আমি আর আসব না। এখানে আমার আইনজীবীদের বসার জায়গা নাই। এভাবে যদি ট্রায়াল চলে তাহলে আমি আর আসতে পারব না। আমাকে যা সাজা দেওয়ার দিয়ে দেন। নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানিতে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের উদ্দেশে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে মামলাটির বিচার চলছে। পরে দিনের কার্যক্রম শেষে আগামী ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন বিচারক। সাংবাদিকরা নির্বাচন নিয়ে খালেদা জিয়ার মন্তব্য জানতে চাইলে, কোনো মন্তব্য নেই বলে জানান সাবেক প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বেলা সোয়া ১২টার দিকে হুইল চেয়ারে সাদা শাড়ি ও গোলাপি ওড়না পরে আদালতে আসেন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি বলেন, রাস্তা ছেড়ে দেন। এত লোক কেন? জজের সামনে এত লোক তো থাকার কথা নয়। এত লোকই যদি থাকে তাহলে জায়গা এত ছোট কেন? এরপর বিচারক এজলাসে উঠতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় সে সময় আসামি পক্ষের আইনজীবী মওদুদ আহমদসহ সিনিয়র আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। বিচারক এজলাসে আসেন ১২টা ১৫ মিনিটে। এরপরই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল শুনানি শুরু করেন। এ সময় মওদুদ আহমদ বিচারকের উদ্দেশে বলেন, আমরা বারবার বলেছি এই জায়গায় অ্যাকোমোডেশন করা হয় না। এখানে কষ্ট হয়। মওদুদের কথা কেড়ে নিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এত লোক থাকলে তাদের বসতে দিতে হবে। আমি বলতে চাই, এরকম সংকীর্ণ জায়গায় কোর্ট চলতে পারে না। আর যদি এই জায়গায় কোর্ট চলে তাহলে আমি আর আসব না। যা সাজা দেওয়ার দিয়ে দেবেন। আমার আইনজীবীরা আসতে পারে না। এর আগেও আমি বলেছি এ কথা। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জবাবে আদালত বলেন, আগামী কোর্টে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হবে। তখন খালেদা জিয়া আবারও বিচারককে বলেন, ব্যবস্থাই শুধু করার কথা বলা হয় কিন্তু করা হয় না। এর উত্তরে বিচারক বলেন, আমি নতুন এসেছি। আমার প্রথম কোর্ট। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা করব। শুনানিতে এফবিআইয়ের প্রতিবেদন ও আসামি পক্ষের দরখাস্ত আদালতে নথিভুক্ত করা হয়। নতুন বিচারক আসায় রাষ্ট্রপক্ষের চার্জ শুনানি নতুন করে শুরু হয়। আদালতের কার্যক্রম শেষে খালেদা জিয়া তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে প্রায় ১০ মিনিট কথা বলেন। এরপর তাকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে যাওয়ার সময় এক সাংবাদিক নির্বাচন নিয়ে কিছু বলার আছে কিনা তা জিজ্ঞাসা করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’ এরপর খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশ হুইল চেয়ারে নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি ওই পুলিশ কর্মকর্তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘এই আস্তে টান দাও। দেখছ না আমি কথা বলছি। আমার পা ভাঙলে তোমাকেই দায় নিতে হবে।’ ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৫ মে, খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

 মামলায় অভিযোগে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

সর্বশেষ খবর