শনিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফোনের অপেক্ষায় নেতারা

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তুত, জেলায় জেলায় মন্ত্রী করার দাবি, মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী উপমন্ত্রীর সংখ্যা ৬০-এর বেশি হতে পারে

রফিকুল ইসলাম রনি

ফোনের অপেক্ষায় নেতারা

এমপিদের শপথ গ্রহণ শেষ। প্রস্তুতি চলছে এখন মন্ত্রিসভা গঠনের। টানা তৃতীয় মেয়াদে নতুন মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন, সে তালিকা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ল্যাপটপে। দলের নেতারা এখন শুধু একটি ফোনের অপেক্ষায়, ‘যে ফোনে বলা হবে শপথ নেওয়ার জন্য...টার সময় বঙ্গভবনে আসতে হবে স্যার।’ শুধু দলীয় নেতাই নন, জোটের শরিক দলের নেতারাও আশায় আশায় প্রহর গুনছেন। ফোনকলের অপেক্ষায় থাকা বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপচারিতায় এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। সেই নেতারা জানান, সব এমপি এখন ঢাকায়। শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামে দলীয় প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন অনেকেই। এজন্য গণভবনে দৌড়ঝাঁপ বাড়িয়েছেন কেউ কেউ। সবাই চায় মন্ত্রী হতে। জেলায় জেলায় নেতা-কর্মী, সমর্থকরা চান তাদের এমপিকে ‘মন্ত্রী’ হিসেবে দেখতে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে জোর প্রচারণা। দলীয় কার্যালয় কিংবা চায়ের আড্ডায় সবখানে একই আলোচনা-এবার মন্ত্রী হচ্ছেন কারা?

এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী উপমন্ত্রীদের ফাইল তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। গাড়ি প্রস্তুত পরিবহনপুলে। প্রস্তুতি শেষপর্যায়ে বঙ্গভবনের। আগামী সোমবার গঠিত হচ্ছে নতুন মন্ত্রিসভা। এবারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে পারেন ৬০ জনেরও বেশি। একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যরা গত বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ করেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাতজন এমপি এখনো শপথ নেননি। ওইদিন জাতীয় সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চতুর্থবারের মতো সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। বিকালে সংসদ নেতা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যান। সংসদ নেতাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আগামী সোমবার বিকালে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা শপথ গ্রহণ করবেন। এবারের মন্ত্রিসভায় যারা থাকবেন তাদের তালিকা চূড়ান্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নবম সংসদে (২০০৮-২০১৪) এবং দশম জাতীয় সংসদ (২০১৪-২০১৮) বলবৎ থাকার সময় যারা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দেন তারা এবারও থাকছেন মন্ত্রিসভায়। আবার যারা বিতর্কিত হয়েছেন এবং দক্ষতা দেখাতে পারেননি, তারা যত বড় নেতাই হোন ‘কাজ’ হবে না।

সূত্রমতে, এবার ভূমিধস বিজয়ী আওয়ামী লীগের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক বেশি। সেই প্রত্যাশা পূরণে দেশবাসীকে নতুন চমক দিতে চান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেজন্য সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি মন্ত্রিসভা উপহার দিতে চান তিনি। সংসদীয় রীতি অনুযায়ী সংসদ নেতাই ঠিক করবেন কে কে হবেন মন্ত্রী। সে জন্য তিনি তালিকা প্রস্তুত করেছেন। এ প্রসঙ্গে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগের পথচলা। তবে বিশাল জয়ের সঙ্গে বিশাল চমকও থাকতে পারে। বিশাল বিজয়ের সঙ্গে বিশাল প্রত্যাশা। জনগণেরও এখানে একটা প্রত্যাশা রয়েছে। সেই প্রত্যাশার প্রতিধ্বনি তো করতে পারেন একজনই (শেখ হাসিনা)।

এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের চমকের ঘোষণার পর নবনির্বাচিত এমপিদের প্রত্যাশাটা বেড়ে গেছে। তারা মন্ত্রী হিসেবে নাম লেখাতে চান। এ জন্য দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন নানাভাবে। অন্যদিকে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েকগুণ। এমপিরা তাদের নাম ‘মন্ত্রী তালিকা’য় আছে কি না নানাভাবে খোঁজখবর নিচ্ছেন। কেউ কেউ গণমাধ্যমে কর্মরত সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের শরণাপন্ন হচ্ছেন।

জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে জিতে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর ৬ জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফা এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি তৃতীয় দফা সরকার গঠন করেন তিনি। দশম জাতীয় সংসদকালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভা হয়েছিল। পরে কয়েক দফা রদবদল এনে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৩। এবারের নতুন মন্ত্রিসভায় পুরনোদের অনেকেই বাদ পড়ছেন। এদের বেশির ভাগ পরিচিত মুখ। বয়স, শারীরিক অসুস্থতা, দুর্নীতির অভিযোগ এবং অদক্ষতার কারণে তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। এ তালিকায় প্রভাবশালী একাধিক মন্ত্রী রয়েছেন। তারুণ্যনির্ভর মন্ত্রিসভা গঠন প্রক্রিয়ায় পুরনোদের অনেকেই ছিটকে পড়বেন। নতুনদের স্থান দিতে নতুন মন্ত্রিসভা থেকে ছিটকে পড়তে পারেন  জেলা কোটায় স্থান পাওয়া কয়েকজন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর