টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন আগামীকাল। বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। আর এর মাধ্যমেই যাত্রা হবে নতুন সরকারের। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার পরপরই বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় কারা থাকবেন তাদের শপথ নেওয়ার জন্য আজ দুপুর থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ফোন করে আমন্ত্রণ জানানো হবে। নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ গ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনও কর্মব্যস্ত সময় পার করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা দাফতরিক কাজ শেষে করেছেন। প্রস্তুত করা হয়েছে গাড়ি ও গাড়ির চালক।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। নতুন সরকারের মন্ত্রিপরিষদে স্থান পাওয়া নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সরকার গঠন হতে যাচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামী লীগ। দলটি ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পায়। আর তারা জোটগতভাবে পেয়েছে ২৮৮টি আসন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র সাতটি আসন। নির্বাচনে জয়ের পর সংসদ সদস্যরা ইতিমধ্যেই ৩ জানুয়ারি শপথ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের জন্য শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। গত মেয়াদের মতো এবারও নবীন-প্রবীণ মিলিয়েই মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় নতুনদের প্রাধান্য দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৪ সালে সরকার গঠনের সময় প্রবীণ অনেক নেতাকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন তিনি। সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন সেভাবে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন। তবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংখ্যার কমপক্ষে ১০ ভাগের ৯ ভাগ এমপিদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাবেন। সর্বোচ্চ ১০ ভাগের ১ ভাগ টেকনোক্র্যাট হতে পারবেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবার চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জিতে ১২ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিপরিষদে এবার নতুন যুক্ত হচ্ছেন যারা সৎ, সাহসী, দক্ষ ও পরীক্ষিত। একই সঙ্গে যারা শিক্ষিত, তরুণ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির, কোথাও কোনো বদনাম নেই। সংসদ সদস্য হিসেবেও যাদের কোনো দুর্নাম নেই তারাও আছেন আলোচনায়। এমন কয়েকজন সংসদ সদস্য প্রথমবার নতুন মন্ত্রিসভায় যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। আবার একই সঙ্গে যারা দলের জন্য বিভিন্ন সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন অথচ তারা সংসদ সদস্য নন, এমন নেতাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিসভায় স্থান দিতে পারেন শেখ হাসিনা। মাঠ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নতুন সংসদ সদস্যও এবারের মন্ত্রিসভায় যুক্ত হবেন, যারা দলের ও সরকারের আগামী দিনের প্রতিনিধিত্ব করবেন। মোট কথা, সরকারের দক্ষ মন্ত্রী ও দক্ষ নেতা হিসেবে এদের গড়ে তুলতে চান প্রধানমন্ত্রী। তবে দলের ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতা এবার মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন। সূত্রমতে, রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

নতুন মন্ত্রিসভায় কতজন সদস্য থাকবেন তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। কেউ কেউ বলছেন, এটি ৬০ সদস্যের মধ্যে হতে পারে।