রবিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

গণফোরাম এমপিদের শপথ নেওয়ার ইঙ্গিত ড. কামালের

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিদ্ধান্তসাপেক্ষে গণফোরাম ও ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংসদে যাবেন। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন।

গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভা শেষে গতকাল বিকালে রাজধানীর শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। নিজ দল গণফোরাম ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের বিজয় সম্পর্কে একাধিক প্রশ্নে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘তারা বিরোধী দল থেকে (নির্বাচিত) হয়েছেন। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে (নির্বাচিত) হয়েছেন। এটা বিরাট অর্জন। এ জন্য আমরা তাদের অভিনন্দন জানিয়েছি। তবে (সংসদে যাওয়ার বিষয়ে) আমরা সিদ্ধান্ত নেব। বিষয়টি সিদ্ধান্তসাপেক্ষ।’ এর আগের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেব। ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেব।’ পরে আবার বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, তারা প্রতিযোগিতার মধ্যদিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এ বিজয় ধরে রেখে তারা চেষ্টা করবেন (সংসদে) অর্থপূর্ণ ভূমিকা রাখতে।’ বিএনপি সংসদে না গেলে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত কেউ সংসদে গেলে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের ফারায় পড়ার আশঙ্কা আছে কি না- জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, ‘দ্বন্দ্ব হবে বলে মনে করি না।’ গণফোরাম সংসদে গেলে ঐক্যফ্রন্ট টিকবে কি না- জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা নীতিগতভাবে ঐক্যফ্রন্টকে টিকিয়ে রাখার পক্ষেই। সমস্যা হবে বলে মনে করি না।’ আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট আন্দোলনে আছে। আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে।’ ঐক্যফ্রন্ট গঠনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট করেছিলাম অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপে রাখতে। কিন্তু তারা আইনকে অমান্য করেছে।’ অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অনিয়মের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য নিয়ে মামলা করা যেতে পারে। আমরা তা ভাবছি। তবে রাজনৈতিক ব্যাপারে ঘন ঘন মামলা হয় না।’ সব জেনেও এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে কী লাভ হয়েছে- জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, ‘প্রমাণিত হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় না।’ জামায়াতের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ড. কামাল বলেন, ‘জামায়াত ফ্রন্টে নেই। তারা ২০ দলে আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক ডাকসু ভিপি, ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও ধানের শীষ প্রতীকে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য সুলতান মুহাম্মদ মনসুর, গণফোরাম নেতা ও উদীয়মান সূর্য প্রতীকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

লিখিত বক্তব্য পাঠের আগে সূচনা বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র। অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচন হয় না। ভোট দেওয়ার পদ্ধতির ওপর যদি আঘাত দেওয়া হয়, তখন সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হয়। সরকার একের পর এক সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এতে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু লিখিত বক্তব্যে ৩০ ডিসেম্বর জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচনকে কীভাবে অপ্রত্যাশিত প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত করা হয়েছে তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভোটের আগের রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মহাজোটের কর্মী বাহিনী একজোট হয়ে ঐক্যফ্রন্টের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হানা দেয়। আর পূর্বনির্দেশ মতো প্রিসাইডিং, পোলিং ও রিটার্নিং অফিসাররা নৌকা মার্কায় সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে রাখেন। প্রতিটি কেন্দ্রে শতকরা ৪০-৫০ ভাগ ব্যালটে সিল মারার নির্দেশ থাকলেও অধিকাংশ কেন্দ্রে শতকরা ৭০-৮০ ভাগ ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে আগের রাতেই নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অকার্যকর করে ফেলা হয়। নির্বাচনের দিন সামগ্রিক পরিস্থিতির এতই অবনতি ঘটে যে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ১১৩ জন প্রার্থী সকাল থেকে নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এই অগণতান্ত্রিক ও একদলীয় সশস্ত্র নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ২১ জন নিহত ও সহস্রাধিক আহত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সব শেষে বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশন ৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যাদের নির্বাচিত বলে ঘোষণা করেছে, তারা কেউই নির্বাচিত নন এবং যাদের গেজেট প্রকাশ করেছে, তারা কেউই জনগণের প্রতিনিধি নন। আমরা ইতিপূর্বে এ নির্বাচনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। চূড়ান্তভাবে অনতিবিলম্বে নির্দলীয় সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার করে গণফোরাম। এরআগে সকাল ১০টায় রাজধানীর শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভা শুরু হয়। সভায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া গণফোরামের প্রার্থীরা ছাড়াও কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলা নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর