সোমবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

চিরনিদ্রায় সৈয়দ আশরাফ জানাজায় জনসমুদ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

চিরনিদ্রায় সৈয়দ আশরাফ জানাজায় জনসমুদ্র

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় গতকাল সৈয়দ আশরাফের জানাজায় মানুষের ঢল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশবাসীকে কাঁদিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলাদেশের রাজনীতির শুদ্ধ পুরুষ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ও ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে পৃথক নামাজে জানাজা শেষে তাকে গতকাল বাদ আসর বনানী করবস্থানে দাফন করা হয়। বিদায় সৈয়দ আশরাফ। রাজনীতির এই মহাতারকা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শেষ বিদায় জানাতে শোকাহত জনতার ঢল নেমেছিল তিনটি জানাজাতেই। যেদিকে দৃষ্টি গেছে শুধু মানুষ আর মানুষ। সবার চোখে-মুখে ছিল শোকের ছায়া। এই নেতার জানাজায় মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে, তিনি দলীয় হয়েও ছিলেন নির্দলীয়, এক দলের হয়েও ছিলেন সর্বদলীয়। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে কয়েক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে ইন্তেকাল করেন। শনিবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ দেশে আনা হয়। জাতীয় ও দলীয় পতাকায় মোড়া কফিনে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ গতকাল সকাল ১০টার দিকে নেওয়া হয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। নির্ধারিত সময়ের আগেই দক্ষিণ প্লাজায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে তা কানায় কানায়

পরিপূর্ণ হয়। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীর জানাজায় অংশ নিতে সকাল ১০টা ২৬ মিনিটে নির্ধারিত স্থানে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে ১০টায় শুরু হয় জানাজা। এতে ইমামতি করেন জাতীয় সংসদ ভবন মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু রায়হান। শেষ বিদায়ের আগে একাত্তরের রণাঙ্গনের এই বীর যোদ্ধার প্রতি ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় সম্মান। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। এরপর কফিনে ফুল দিয়ে এই আওয়ামী লীগ নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্রমান্বয়ে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর দলীয় নেতাদের নিয়ে প্রিয় রাজনৈতিক সহকর্মীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ১৪ দল, পরিবারের সদস্য, পার্লামেন্ট মেম্বার ক্লাবের সদস্যগণ, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। এরপর কিছু সময় জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই দেশপ্রেমিক নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। জানাজার আগে সৈয়দ আশরাফকে নিয়ে স্মৃতিচারণ ও তার জীবনী পাঠ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন তার ছোট ভাই সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। এ সময় সৈয়দ আশরাফের একমাত্র সন্তান সৈয়দা রীমা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার জানাজায় আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী অংশ নিয়ে স্মরণ করেন তাদের ‘দুঃসময়ের কা ারিকে’। সততা, নির্লোভ মানসিকতা আর রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া আশরাফ শেষযাত্রায় শ্রদ্ধা পেয়েছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছ থেকেও। মৃত্যু পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আশরাফকে কিশোরগঞ্জের মানুষ তাদের জনপ্রতিনিধি করে সংসদে পাঠিয়েছে পাঁচবার। দক্ষিণ প্লাজায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ছাড়াও জানাজায় অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী,  তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম, এ কে এম রহমতুল্লাহ, শ. ম. রেজাউল করিম, এস এম কামাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম আমিন, গোলাম রাব্বানী চিনু, রিয়াজুল কবির কাওছার, সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রমুখ। ১৪-দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে ইসমাইল হোসেন, ডা. শাহাদাৎ হোসেন, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, জাতীয় পার্টির এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মশিউর রহমান রাঙ্গা, যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার জানাজায় অংশ নেন। এ ছাড়া শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় আওয়ামী লীগ ও জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী, অসীত বরণ রায়, ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু, বীরেন সিকদার, দিলীপ বড়ুয়া, ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া,  পঙ্কজ দেবনাথ। জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ বেগম, যুব মহিলা লীগ সভাপতি নাজমা আকতার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, ছাত্রলীগের রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, গোলাম রাব্বানী। সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে লিয়াকত সিকদার, সাহাবুদ্দিন ফরায়েজী, সাইফুজ্জামান শিখর, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, সাইফুর রহমান সোহাগ, এস এম জাকির হোসাইন প্রমুখ।  

এরপর হেলিকপ্টারে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জে। মরদেহের সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ আশরাফের মেয়ে সৈয়দা রিমা ইসলাম, ভাই সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম, সৈয়দ শরিফুল ইসলাম, বোন লিপি নূর, রূপা নূর, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ ১২ জন। 

‘পরম আপনজন’ : জীবনে অনেকে অনেক কিছু সঞ্চয় করেন, তবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নিজের অজান্তেই সঞ্চয় করেছিলেন মানুষের ভালোবাসা। তাই তো সংসদ ভবনে তার প্রথম জানাজায় নামল হাজারো মানুষের ঢল। সংসদ ভবনে সৈয়দ আশরাফের আসার কথা ছিল একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য। সেই সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে ঠিকই এলেন, কিন্তু নিয়তি যে সহায় ছিল না। শেষবারের মতো এলেন শেষ বিদায় নিতে। জানাজায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন রাজনীতিক তার স্মৃতিচারণ করেন।

জানাজা শুরুর আগে সৈয়দ আশরাফের ছোট ভাই সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম তার প্রয়াত ভাইয়ের জন্য দোয়া কামনাসহ কোনো অপরাধ বা ভুলত্রুটি করে থাকলে মাফ করে দেওয়ার আবেদন জানান। সৈয়দ আশরাফের কাছে কারও কোনো দেনা থাকলে তারা তা পরিশোধ করবেন বলে জানান। 

জানাজার আগে আওয়ামী লীগের পক্ষে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে বাঙালি মেধাবী ও প্রজ্ঞাবান একজন রাজনীতিবিদকে হারিয়েছে। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কা ারি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় চরম বৈরী পরিবেশে দলের হাল ধরে তিনি জাতিকে পৌঁছে দিয়েছেন মুক্তির বন্দরে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন মুজিব আদর্শের ত্যাগী, নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক। বিশ্বাস-অনুভূতির গভীর স্পর্শে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পরম আপনজন। আজও মহাসিন্ধুর ওপার থেকে ভেসে আসে তার সে অমর বাণী- ‘আওয়ামী লীগ তো আওয়ামী লীগই, এটা একটা দল, এটা কোনো দিনও ভাবি নাই। আওয়ামী লীগ একটা অনুভূতির নাম।’ তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চর্চার অগ্রদূত’ সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে আত্মপ্রচার, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, ভেদ-বৈষম্য কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। উদারনৈতিক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়, শ্রদ্ধাভাজন। দল-গোষ্ঠীর মতাদর্শের ঊর্ধ্বে সবার কাছে তিনি ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক মহৎপ্রাণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নীতি আদর্শ, বিনয়ী ও মার্জিত চিত্তের গুণাবলি আমাদের জন্য চিরপাথেয় হয়ে থাকবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, তিনি অনেক সুন্দর মানুষ  ছিলেন, যার অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘তার (সৈয়দ আশরাফ) জীবনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, তিনি ছিলেন সৎ, নিরহংকারী, বিনয়ী, আচার-আচরণ ছিল তার মার্জিত। তিনি সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করতেন। তার কমিটমেন্ট ছিল ডিপ, অ্যাবাইডিং অ্যান্ড প্যাসনেট টু দি পিপল অব দি কান্ট্রি, টু আওয়ার লিডার শেখ হাসিনা। সৈয়দ আশরাফ সব সময় বলতেন, ঐক্যবদ্ধ থাকলে আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। তার মৃত্যু শুধু আওয়ামী লীগকে নয়, ঐক্যবদ্ধ করেছিল সব দলের সব পথের মানুষকে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে থাকায় সে সূত্রে যতক্ষণ দেখেছি, আশরাফ ভাই বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন সজ্জন এবং নিরহংকারী ব্যক্তি অনেক কম আছে।

বনানীতে দাফন : তিন দফা জানাজা শেষে বাদ আসর ঢাকার বনানীতে চিরনিদ্রায় শয়ন করানো হয় সৈয়দ আশরাফকে। তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বনানী কবরস্থানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা। ছিলেন সৈয়দ আশরাফের পরিবারের সদস্যরাও।  

দোয়া ও মিলাদ মাহফিল মঙ্গলবার : সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পবিত্র আত্মার মাগফিরাত কামনায় আগামী ৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। বিকাল ৫টায় রাজধানীর ২১ বেইলি রোডের তার সরকারি বাসভবনে এ মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। 

শোলাকিয়ার জানাজায় লাখো মানুষের ঢল : কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সব মানুষের প্রিয় নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে চোখের জলে শেষ বিদায় জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জবাসী। কেউ ডুকরে কেঁদেছেন, কেউ লুকিয়ে চোখের জল ফেলেছেন, কেউ বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কেবলই হা-হুতাশ করেছেন। গতকাল শোলাকিয়া ঈদগাহে সৈয়দ আশরাফের মরদেহকে ঘিরে এমনই ছিল শোকাতুর পরিবেশ। ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে তার মরদেহ কিশোরগঞ্জে নিয়ে আসা হয়। বেলা ১টার দিকে মরদেহ আনা হয় শোলাকিয়া ঈদগাহে। এ সময় তার স্বজন ও দলীয় নেতা-কর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বেলা সোয়া ১টায় অনুষ্ঠিত হয় নামাজে জানাজা। এর আগেই বৃহত্তম ঈদগাহ ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অনেকেই ঈদগাহে জায়গা না পেয়ে পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের খতিব মাওলানা খলিলুর রহমান জানাজায় ইমামতি করেন। জানাজা শেষে সর্বস্তরের লাখো মানুষ প্রিয় নেতাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ফুলে ফুলে ভরে যায় কফিন। এরপরও দলে দলে মানুষ আসতে থাকে শোলাকিয়া ময়দানে। উপচে পড়া ভিড় সামলাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।

জানাজার আগে পুলিশের একটি সুসজ্জিত দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট ভাই সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু মুসল্লিদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সৈয়দ আশরাফের পরিবারের অন্য সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসন থেকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ দীর্ঘ সময়ে এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে সর্বস্তরে। সবাই তাকে খাঁটি দেশপ্রেমিক সৎ, নির্লোভ, পরোপকারী, স্বল্পভাষী ও স্পষ্টবাদী চরিত্রের মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।  প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ট্রেন, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে ছুটে আসেন অনেকে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি, রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি, আফজাল হোসেন এমপি, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপিসহ দলের ঊর্ধ্বতন নেতারা জানাজায় অংশ নেন। অসুস্থ শরীর নিয়ে জানাজায় উপস্থিত হন মুক্তিযুদ্ধের সময় তার রণাঙ্গনের সাথী নূরুল ইসলাম খান পাঠান বীরপ্রতীক।

বিদায় জানাল ময়মনসিংহবাসী : ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, পরম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আবেগ দিয়ে ময়মনসিংহবাসী শেষ বিদায় জানিয়েছেন আজীবন গণতন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে। অনন্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এই নির্লোভ নেতার নিথর দেহ দেখতে আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দানে দলমত নির্বিশেষে সবাই ভিড় জমান সকাল থেকে। শেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দিয়ে তাকে বিদায় জানান হাজারো মানুষ।

গতকাল ঘড়ির কাঁটায় যখন বেলা আড়াইটা তখনই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ বহনকারী কপ্টারটি সার্কিটের হাউসের মাটি স্পর্শ করে। এরপরই লাশবাহী একটি গাড়িতে তুলে মরদেহটি নিয়ে যাওয়া হয় আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দানে। সেখানে পৌঁছার পরই রীতি অনুযায়ী এই মুক্তিযোদ্ধার জন্য পুলিশের একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপরই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ঈদগাহ ময়দান। ইমামতি করেন ঈদগাহ মসজিদের খতিব আবদুল্লাহ আল মামুন। পরে ফুলে ফুলে ভরে উঠে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিনটি।

জানাজা শেষে আত্মগর্বী, উদ্ধত ও নিভৃতচারী, মৃদুভাষী, বিনয়ী ও সজ্জন মানুষটির জন্য চোখের পানি ঝরাতে দেখা গেছে অগণিত মানুষকে। মুক্তবুদ্ধির ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শিরোধার্য করা এই নেতার জন্য ডুকরে কাঁদতেও দেখা গেছে অনেক সুভাশীষকে। পরে  বেলা সাড়ে ৩টায় প্রয়াত আশরাফের মরদেহ নিজ শহর থেকে বিদায় দেয় ময়মনসিংহবাসী।

জানাজায় ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহমী  গোলন্দাজ বাবেল, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মাহমুদুল হাসান, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট  মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শাহীনুর রহমান, শহর ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি আবদুুল্লাহ আল মামুন আরিফ, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রকিবুল ইসলাম রকিবসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর