মঙ্গলবার, ৮ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

নতুন সরকারের যাত্রা শুরু

বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রীর শপথ, শপথ নিলেন ২৪ মন্ত্রী ১৯ প্রতিমন্ত্রী ৩ উপমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন সরকারের যাত্রা শুরু

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গতকাল শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ -বাসস

টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করল আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রী। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার কিছু পরে বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ গ্রহণ করেন। তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রথমে শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ নেন। এরপর পর্যায়ক্রমে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলো নতুন সরকারের। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।

বিকাল ৩টা ৩৭ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনের দরবার হলে লাল গালিচায় মোড়া মঞ্চে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ৫৬ অনুচ্ছেদের তিন দফা অনুযায়ী প্রথমে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে শপথবাক্য পাঠ করান। শেখ হাসিনা এই নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস তৈরি করলেন। তিনি মোট চারবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন। শপথবাক্য পাঠ শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী করমর্দন করেন। অতিথি-দর্শক এলাকায় প্রথম সারিতেই বসা ছিলেন ছোট বোন ও বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। প্রধানমন্ত্রী সেদিকে যাওয়ার আগেই শেখ রেহানা উঠে দাঁড়ান এবং বড় বোনকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। বোনকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন প্রধানমন্ত্রী। দুই বোন পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে রাখেন। এ সময় পুরো দরবার হলে পিনপতন নীরবতা। সবাই দাঁড়িয়ে যান। এ সময় আওয়ামী লীগের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে চুমু খান। পরে প্রধানমন্ত্রী নিজের আসনে বসে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান দেখেন। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়। নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবন থেকে ফেরার সময় রাস্তার দুই পাশে সমবেত জনতা তাঁকে একনজর দেখার জন্য রাজউক এভিনিউ ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে ছিলেন। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়লাভ করে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট। ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ, তার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরা এবং জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা শপথ নেন। ওই দিনই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি তাঁকে সরকার গঠনের আহ্বান জানান।  

শপথ নেওয়ার জন্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা গতকাল দুপুরের পর থেকেই বঙ্গভবনে আসতে শুরু করেন। তারা একে অপরের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন, মেতে ওঠেন হাস্যরসে। দরবারের প্রবেশমুখেই ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি সবার সঙ্গে কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তিন স্তরের নিরাপত্তা পেরিয়ে তাঁদের দরবার হলে প্রবেশ করতে হয়। সেখানে প্রায় এক হাজার অতিথি বসার ব্যবস্থা ছিল। গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিপরিষদের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে আগে মন্ত্রী ছিলেন বা জ্যেষ্ঠ নেতা এমন ৩৬ জন বাদ পড়েছেন। বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরাও। মন্ত্রিসভায় নতুন এসেছেন ৩১ জন। এর মধ্যে ২৭ জন একেবারেই নতুন।

এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি জোটের বর্জনের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়। ১২ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। ওই সময় শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। ওই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী ছিলেন। পরে কয়েক দফা মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হলে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়ায় ৫২ সদস্যের। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে টেকনোক্র্যাট তিন মন্ত্রীকে বাদ দেওয়া হয়।

গতকাল শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে শেখ রেহানা ছাড়াও তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক স্ত্রী পেপপিকে নিয়ে এসেছিলেন নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে। প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই এমপি শেখ হেলাল উদ্দিন ও শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলও শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা নতুন সরকারের অভিষেকে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিদায়ী মন্ত্রিসভার সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা, ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ছিলেন- বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, একুশে টিভির সিইও মনজুুরুল আহসান বুলবুল এবং চ্যানেল আইয়ের বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, ফরিদুর রেজা সাগর, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ুন। সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খান প্রমুখ।

মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ওবায়দুল কাদের, কৃষি মন্ত্রণালয় মো. আবদুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসাদুজ্জামান খান, তথ্য মন্ত্রণালয় ড. হাছান মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় আনিসুল হক, অর্থ মন্ত্রণালয় আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এম এ মান্নান, শিল্প মন্ত্রণালয় নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় গোলাম দস্তগীর গাজী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় জাহিদ মালেক, খাদ্য মন্ত্রণালয় সাধন চন্দ্র মজুমদার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নুুরুজ্জামান আহমেদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় শ. ম. রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় মো. শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, ভূমি মন্ত্রণালয় সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয় মো. নূরুল ইসলাম সুজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় মোস্তাফা জব্বার।

১৯ জন প্রতিমন্ত্রী : শিল্প মন্ত্রণালয় কামাল আহমেদ মজুমদার, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ইমরান আহমদ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় জাহিদ আহসান রাসেল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় নসরুল হামিদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মো. আশরাফ আলী খান খসরু, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মন্নুজান সুফিয়ান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মো. জাকির হোসেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মো. শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ জুনাইদ আহমেদ পলক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ফরহাদ হোসেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্বপন ভট্টাচার্য, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জাহিদ ফারুক, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় মো. মুরাদ হাসান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় কে এম খালিদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ডা. মো. এনামুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় মো. মাহবুব আলী এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।

তিনজন উপমন্ত্রী : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় হাবিবুন নাহার, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ কে এম এনামুল হক শামীম এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

সর্বশেষ খবর