মঙ্গলবার, ৮ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

চারবারের রেকর্ড গড়লেন শেখ হাসিনা

রফিকুল ইসলাম রনি

টানা তৃতীয়বার এবং এর আগে ১৯৯৬ সালে একবার মোট চারবার প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হয়ে রেকর্ড গড়লেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। বঙ্গভবনে তাকে শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এই শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে সর্বশেষ রেকর্ডটি গড়েন তিনি। বাংলাদেশে পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এবং চারবার প্রধানমন্ত্রী থাকার নজির আর কারও নেই। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল তাঁর নতুন মন্ত্রিসভার ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। তাঁর জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রায় ৩৮ বছর ধরে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দলীয়  প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ওই বছরের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিজয়ের পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট আবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে ১২ জানুয়ারি টানা দ্বিতীয় ও মোট তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ গত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিপুল বিজয়ে সোমবার চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন শেখ হাসিনা। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তাঁর দল আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা অর্জন করে। সবচেয়ে বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী থাকা ও জাতীয় সংসদের নেতা থাকার রেকর্ড গড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের নারী নেত্রীদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি দিন সরকারপ্রধান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের কাতারে শেখ হাসিনার অবস্থান মেয়াদের দিক দিয়ে তৃতীয়। নতুন মেয়াদ পূরণ করলে তিনিই হবেন বিশ্বের নারী নেত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা সরকারপ্রধান। 

দেশের তিনটি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন শেখ হাসিনা। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদে, ১৯৯১ সালে পঞ্চম এবং ২০০১ সালে অষ্টম সংসদে। ১৯৭৫ সালে তিনি স্বামীর কর্মস্থলে বিদেশে চলে যান। সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। ওই বছরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে ঘাতকের দল। বিদেশে থাকায় দুই বোন প্রাণে বেঁচে যান। দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। পাঁচ বছরের মাথায় সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের সময়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বসেন বিরোধীদলীয়  নেতার আসনে। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে মিলে একনায়ক এরশাদ সরকারের পতন ঘটায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে গিয়ে আবার বিরোধী দল হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তার সেই সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির কথা বলা হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করলে তৃতীয়বারের মতো বিরোধীদলীয় নেত্রী হন শেখ হাসিনা। ওই সরকারের সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। প্রাণে বেঁচে গেলেও তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শ্রীলঙ্কার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সিরিমাভো বন্দরনায়েকে আধুনিক বিশ্বের প্রথম নারী সরকারপ্রধান ছিলেন। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি তিন দফায় ১৭ বছর ২০৮ দিন দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী। ঘাতকের হাতে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত ইন্দিরা দুই দফায় মোট ১৬ বছর ১৫ দিন ভারত সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা এ পর্যন্ত মোট ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। গতকাল তিনি শপথ নিয়েছেন আরও পাঁচ বছরের জন্য। এই মেয়াদ পুরো হলে সবাইকে ছাড়িয়ে যাবেন তিনি।

সর্বশেষ খবর