শুক্রবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিএনপি নমিনেশন অকশন করে জয়ী হবে কীভাবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি নমিনেশন অকশন করে জয়ী হবে কীভাবে : প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট নমিনেশন নিয়ে ট্রেড (বাণিজ্য) করেছে, অকশন (নিলাম) করেছে। তারা কী করে আশা করে যে নির্বাচনে জয়ী হবে। তিনি বলেন, তাদের সব আন্দোলনই ব্যর্থ হয়েছে। আর যাদের আন্দোলন ব্যর্থ হয়, তারা নির্বাচনে জয়ী হতে পারে না।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি পালন করে। কেন্দ্রীয়ভাবে সকালে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের নেতা-কর্মীরা। শেখ হাসিনা বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের সময় বাংলাদেশকে অবশ্যই একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব। ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে উন্নত দেশ হবে। বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টেনে নিতে পারবে না। বাংলাদেশের মাটিতে যেন আর কখনো যুদ্ধাপরাধী, খুনি, সন্ত্রাসী, অগ্নিসন্ত্রাসী ফিরে আসতে না পারে সেজন্য দেশের মানুষকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা এবং ব্যাপক হারে মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে তাদের ভরাডুবি। একই আসনে সকালে একজন, দুপুরে একজন ও বিকালে অন্য জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তাদের অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের দুঃখের কথা জানিয়েছেন। একজন তো আমাদের দলে জয়েন করলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির যেসব প্রার্থী উইনেবল ছিলেন তারা কেউই মনোনয়ন পাননি। টাকা বেশি না দিতে পারায় তারা মনোনয়ন পাননি। সকালে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তার চেয়ে বেশি টাকা দেওয়ার পর দুপুরে আরেকজন মনোনয়ন পান। বিকালে তার চেয়ে বেশি টাকা পাওয়ায় সকাল ও দুপুরের প্রার্থী মনোনয়ন থেকে আউট হয়ে যান। এভাবে যে দল মনোনয়ন দেয় তাদের জনগণ কেন ভোট দেবে? তিনি বলেন, সিলেটে ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। যে বেশি টাকা দিয়েছে তাকেই নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে নমিনেশন দিলে তিনি হয়তো জিততে পারতেন। ধামরাইয়ে আতাউর রহমান খানের ছেলে জিয়াউর রহমান খান নমিনেশন পাবেন বলেই ধারণা ছিল। তিনি হয়তো জিততেনও। কিন্তু তাকে নমিনেশন দেওয়া হয়নি। নারায়ণগঞ্জে তৈমুর আলম খন্দকারকে নমিনেশন দেওয়া হয়নি, চট্টগ্রামে মোর্শেদ খানকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

 এরকম আরও অনেক জায়গায় তারা যে বেশি টাকা দিয়েছে তাকে নমিনেশন দিয়েছে। ধানের শীষ প্রতীকে জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জনকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তারা যুদ্ধাপরাধীদের ভোট দেবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য যারাই ক্ষমতায় ছিল, তাদের সময়ে এ দেশের মানুষের অনেক ভোগান্তি হয়েছে, তারা অনেক কষ্ট পেয়েছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে দেশ পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, মাত্র দশ বছরে আমরা যা পেরেছি, ২৮ বছরেও অন্যরা তা কেন পারেনি? কারণ তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নয়। যখনই জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন ক্ষমতায় এসেছে তখনই মানুষের উন্নতি হয়েছে এবং এই উন্নয়ন গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশের মানুষ পেটভরে ভাত খাবে, তাদের বাসস্থান হবে, চিকিৎসা, শিক্ষার সুযোগ হবে। উন্নত জীবন পাবে, এটাই ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য, একমাত্র উদ্দেশ্য। একটা দেশের যে জনগণ সব সময় বঞ্চিত ছিল, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি মহৎ আত্মত্যাগ করে গেছেন, সেই আত্মত্যাগ আমাদের ভুললে চলবে না। দেশের মানুষ যদি ভালো থাকে, দেশের মানুষ যদি সুন্দর জীবন পায় এর থেকে বড় সার্থকতা একজন রাজনীতিবিদের জীবনে আর কিছু হতে পারে না।

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। সভায় বক্তব্য রাখেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, আবদুল মতিন খসরু, মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে তাঁর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এর পরই আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

সর্বশেষ খবর