শুক্রবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
বাংলাদেশে রিজার্ভ চুরি

ফিলিপাইনে ব্যাংক কর্মকর্তা মায়ার জেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফিলিপাইনে ব্যাংক কর্মকর্তা মায়ার জেল

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের ব্যাংক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা মায়া সান্তোস দেগুইতোকে দোষী সাব্যস্ত করেছে দেশটির একটি আদালত।  ফিলিপাইনের দৈনিক স্টার গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দেয়। এতে বলা হয়, মাকাতি আঞ্চলিক আদালতের বিচারক সিজার উনতালান বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করেন। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বিষয়টি কোনো ব্যক্তিকে সাজা দেওয়ার বিষয় নয়। এর জন্য একটি সিস্টেম দায়ী। এর জন্য বিচারিক আদালত যা করে তার বিষয়ে আমরা কথা বলতে চাই না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন। স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই রায়ে বিচারক মুদ্রা পাচারের আট দফা অভিযোগে দেগুইতোকে দোষী সাব্যস্ত করায় প্রতিটি ধারায় তার ৪ থেকে ৭ বছরের কারাদ  হতে পারে। সেই সঙ্গে তাকে জরিমানা করার আদেশ দিয়েছে আদালত, যার পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। তিন বছর আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপাইনের মাকাতি শহরের আরসিবিসির জুপিটার শাখায়। এ ঘটনায় একমাত্র আসামি ছিলেন মায়া সান্তোষ দেগুইতো। এটি সে সময় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফিলিপাইনে ঢোকার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে দেশটির সিনেট (সংসদ) কমিটি তদন্ত শুরু করে। ওই ঘটনায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার পর আরসিবিসি তাদের শাখা ম্যানেজার দেগুইতোকে বরখাস্ত করে। আর ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার জরিমানা করে আরসিবিসিকে এবং একই সঙ্গে মায়া সান্তোষের বিরুদ্ধে সে দেশের ব্যাংকিং ও মানিলন্ডারিং আইন ভঙ্গের দায়ে মামলা হয়। এতে অর্থ পাচারে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার কওে দেগুইতো সিনেটের শুনানিতে বলেছিলেন, আরসিবিসির একেবারে উঁচু পর্যায়ের নির্দেশনাতেই সব হয়েছে। আর তাকে বানানো হচ্ছে বলির পাঁঠা। তবে মাকাতি আঞ্চলিক আদালতের বিচারক তার রায়ে বলেছেন, মুদ্রা পাচারে সংশ্লিষ্টতার যে অভিযোগ দেগুইতোর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

ফিলিপাইনের একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আরসিবিসির ওই শাখায় চারটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে আসা টাকা জমা করা এবং পরে তোলার ক্ষেত্রে দেগুইতোকে দায়ী করেছে আদালত। অবশ্য এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেগুইতোর আইনজীবী দিমিত্রিও কাস্টোডিও বলেছেন, তার মক্কেল ব্যাংকের ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন বলে ওই অপরাধের জন্য তাকে দায়ী করা যায় না। সরকার শুধু একজন নিচের দিকের কর্মকর্তার বিচার করছে। এ ঘটনার সঙ্গে আরও অনেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার দায় রয়েছে। আপিলের শুনানি  শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেগিতো জামিনে থাকবেন জানিয়ে এই আইনজীবী বলেছেন, জরিমানার টাকা দিতেও তাকে বাধ্য করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য এ ব্যাপারে ফেডারেল রিজার্ভ ও আরসিবিসির বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই মামলা করতে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর