শনিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

নকল ওষুধ ঠেকাতে ছয় জেলায় হচ্ছে মিনি ল্যাব

মাহবুব মমতাজী

ওষুধ প্রশাসন নকল ওষুধ ঠেকাতে ছয়টি জেলায় আন্তর্জাতিক মানের মিনি ল্যাবরেটরি স্থাপন করবে। স্থাপন কাজের সার্বিক তত্ত্বাবধান করবে গ্লোবাল প্রোগ্রাম টাইটেল প্রোমোটিং দ্য কোয়ালিটি অব মেডিসিন (পিকিউএম)। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেট ফার্মাকোপিয়া (ইউএসপি) কারিগরি সহায়তা এবং ওষুধের মান নিশ্চিতকরণে সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্র।

বর্তমানে ওষুধ প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মাত্র দুটি ল্যাব রয়েছে। এর মধ্যে ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে (এনসিএল) ৮৫৪টি দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির ৪০ হাজার ২৮৫টি পণ্য তদারকি এবং মান পরীক্ষা করা হয়। পাশাপাশি আমদানিকৃত অসংখ্য ওষুধের মান পরীক্ষার কাজ করাতে হয় সেখানে। বহু ধরনের ওষুধের মান মাত্র দুটি ল্যাবে পরীক্ষা করতে প্রতিনিয়ত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। মিনি ল্যাবগুলো চালু হলে এ কাজ তাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। এর কর্মকর্তারা বলছেন,      মিনি ল্যাবগুলোতে মাত্র তিন ঘণ্টায় ওষুধের মান পরীক্ষা করা সম্ভব। অথচ একই কাজ করতে এনসিএল ল্যাবে অপেক্ষা করতে হতো কয়েক সপ্তাহ। জানা যায়, গত বছরের অক্টোবরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল এবং রংপুরে মিনি ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ল্যাব বসানোর জন্য জমির অনুসন্ধান চলবে। এসব ল্যাব পরিচালনায় ইউএসএইড অর্থায়ন করবে ৫ বছর। আর ল্যাবগুলো পরিচালনার জন্য এরই মধ্যে ওষুধ প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। পিকিউএম-বাংলাদেশের টেকনিক্যাল ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম খান এ প্রতিবেদককে বলেন, ল্যাবগুলোর পরিচালনায় থাকবে ওষুধ প্রশাসন। আমরা কারিগরি সহায়তা দিয়ে ওষুধের মান ঠিক রাখা এবং স্থানীয় বাজারের নকল ওষুধ ছড়িয়ে পড়ছে কিনা তা মনিটিরিং করব। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে জানানো হয়, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী এবং যেসব ওষুধ বাজারে বিক্রি হয় বেশি সেগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে মান পরীক্ষার জন্য নেওয়া হবে মিনি ল্যাবগুলোতে। এ ছাড়া নতুন এবং দামি ওষুধ, দুর্গম এবং রোগের প্রাদুর্ভাবপূর্ণ এলাকায় ব্যবহৃত হওয়া ওষুধেরও নমুনা সংগ্রহ করা হবে। কারণ মানহীন এবং নকল ওষুধে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব হয় না। বরং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সাধারণ রোগীদের মধ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে মৃত্যুহার বাড়ার পাশাপাশি অধিক পরিমাণে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারেরও সম্ভাবনা থাকে। অধিদফতরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. রুহুল আমিন এ প্রতিবেদককে জানান, ওষুধের মান সুরক্ষার জন্য এটি আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে বরিশাল ও রাজশাহীতে দুটি ল্যাব চালু করব। এর জন্য অর্গানোগ্রাম করাও হয়েছে। গত সপ্তাহে ১৫ জন করে লোক নিয়োগেরও ফাইল অনুমোদন দিয়ে অর্থ ছাড় করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। এটি বাজারে ওষুধের সঠিক মান মূল্যায়ন এবং নকল ওষুধের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার একটি পদক্ষেপ। মিনি ল্যাবটি বাংলাদেশের নতুন ধারণা। এটিই প্রথম মাঠ পর্যায়ের ওষুধের বিশ্বাসযোগ্য পরীক্ষাগার। মিনি ল্যাবগুলো ওষুধের বাজারে নজরদারিতে এক ধরনের নতুন গতিশীলতা সৃষ্টি করবে। ওষুধ প্রশাসনের ২০১৭-১৮ সালের এক রিপোর্টে দেখা যায় যে, প্রতিষ্ঠানটি ২২১টি অভিযোগের বিপরীতে এক কোটি ৬৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা জরিমানা করে এবং এর মধ্যে ৪২ লাখ ৬০ হাজার ১৭০ টাকার অবৈধ নকল ওষুধ জব্দ করা হয়।

সর্বশেষ খবর