মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
কেমন হবে এ সংলাপ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ চালনায় সহযোগিতা চাইবেন শেখ হাসিনা

রফিকুল ইসলাম রনি

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ চালনায় সহযোগিতা চাইবেন শেখ হাসিনা

আবার শুরু হচ্ছে সংলাপের রাজনীতি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ ৭৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৩০ ডিসেম্বর বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর আবারও এসব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সংলাপের টেবিলে চান প্রধানমন্ত্রী। আগামী ২২ থেকে ২৫ জানুয়ারি গণভবনে এ সংলাপ হতে পারে। এ জন্য চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ওই সংলাপে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের নেতাদের কথা শুনবেন প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনায় তিনি সবার সহযোগিতা চাইবেন। দল ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।  গত বছর ১ নভেম্বর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ নিবন্ধিত ৩৯ দল নিয়ে প্রায় ৭৫টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সংলাপে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতারাই বলেছিলেন সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে। তবে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংলাপ সফল হয়নি বলে মন্তব্য করে আরও আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা দাবি করে। ওই সংলাপের পর ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত সব দলই অংশগ্রহণ করে। ভোটে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ জয় পায়। আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৫৭ এবং মহাজোটগতভাবে ২৮৮ আসন পায়। ওই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে সম্প্রতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন ‘জাতীয় সংলাপ’ করার আহ্বান জানান। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগামী ২৮ জানুয়ারি সংলাপে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ‘জাতীয় সংলাপের’ আগেই বিগত সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে আবারও আলোচনার টেবিলে চান শেখ হাসিনা। গত ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় তিনি এমন আভাস দেন। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, হ্যাটট্রিক জয়ের পর সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় দেশকে এগিয়ে নিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশে চান প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য সবার মতামত নিয়েই সামনে এগোতে চান তিনি। এ ছাড়া ২০২০-২০২১ সালকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হবে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হবে। ‘জাতির পিতা সবার’ এই অভিপ্রায় থেকেই মুজিব বর্ষটাতে যেন সব দল অংশগ্রহণ করে সে আহ্বান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুটি কারণে সংলাপের আমন্ত্রণ জানাবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়া এবং নির্বাচনে অংশ নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করায় তাদের ধন্যবাদ জানানো হবে। দ্বিতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা চাইবেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবাষির্কী এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের সুর্বণজয়ন্তী পালন করা হবে। অন্যদিকে ২০২০-২০২১ সালকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সবাই মিলেই জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী পালন করি।’  এদিকে গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্টসহ যে ৭৫টা দল সংলাপে অংশ নিয়েছিল তাদের সঙ্গে নির্বাচন-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানাতে চান প্রধানমন্ত্রী। এখানে কোনো সংলাপের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি না। সংলাপ নয়, শুভেচ্ছা বিনিময় হবে।’ আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, স্বাধীনতা পক্ষের একটি শক্তিশালী বিরোধী জোট চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। ইতিমধ্যে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে গণভবনে এসেছিলেন, তাদের আবার আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। কবে নাগাদ আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ মাসেই হবে। সম্ভবত শেষ সপ্তাহে, সেভাবেই  প্রস্তুতি চলছে।’

সর্বশেষ খবর