বুধবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

উৎসবমুখর ধানমন্ডি উপচে পড়া ভিড়

নারী আসনে প্রথম দিনেই আওয়ামী লীগের ৬২৪ ফরম বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক

উৎসবমুখর ধানমন্ডি উপচে পড়া ভিড়

উৎসবের ঢল নেমেছিল গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে। সংরক্ষিত নারী আসনে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে সারা দেশ থেকে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী নারীনেত্রীরা ভিড় জমান এখানে। দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী, নিবেদিতপ্রাণ, পরীক্ষিত কর্মীর পাশাপাশি হাইব্রিড, প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির অভিনেত্রী ও হালের আলোচিতরাও ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে লাইন ধরে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এদের অনেকেই গত সংসদ নির্বাচনে দলের সরাসরি মনোনয়ন চেয়েছিলেন। ওই মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে এবার টার্গেট সংরক্ষিত আসনে দলের মনোনয়নে সংসদে যাওয়া। মনোনয়নপত্র বিতরণের প্রথম দিনই ৬২৪টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী থেকে শুরু করে জেলার প্রবীণ নারীনেত্রীরাও এসেছিলেন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা, উৎসবমুখর পরিবেশে সেলফিতে মেতেছিলেন কেউ কেউ। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্তরাও দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে ‘অগ্রিম বিনিয়োগ’ করছেন। তারা দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে ফেসবুকে আত্মপ্রচারে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগ ও গণভবনের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রিসভার মতোই সংরক্ষিত আসনে এবার মনোনয়নে চমক দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার কারও তদবির সহ্য করবেন না তিনি। নিজস্ব উইংয়ে সম্ভাব্য নারীনেত্রীদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছেন। গুড লিস্টে থাকাদের সম্ভাব্য তালিকাও তৈরি করেছেন তিনি। কোনো হাইব্রিড, নব্য লীগারকে তিনি স্থান দেবেন না সংরক্ষিত নারী আসনে। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, ত্যাগী, নিবেদিতপ্রাণ কর্মী, দেশের পরিচিত, সমাজের আলোকিত মুখকে বিবেচনায় নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। ভেতর থেকে গেট আটকানো। পূর্বনির্ধারিত সময় সকাল ১০টায় দলের মনোনয়নপত্র বিতরণের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্বোধনের পর গেট সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। কার্যালয়ের সামনে ভিড় সামলাতে দলের স্বেচ্ছাসেবীর পাশাপাশি বিপুল নারীপুলিশ মোতায়েন করা হয়। ধানমন্ডি কার্যালয়ের দুই ভবনে চারটি করে মোট আটটি বিভাগের ফরম বিক্রি করা হয়। সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মনোনয়নপ্রত্যাশীরা লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম কেনেন।

ফরম সংগ্রহ করতে আসা বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া তারকাদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী থেকে শুরু চতুর্থ শ্রেণির অভিনেত্রীরাও সংগ্রহ করেছেন দলের মনোনয়ন ফরম। আবার একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত নারীনেত্রী ও এক-এগারোর সময়ের দীর্ঘদিনের জেলহাজত বাসকারী নারীও ছিলেন। এ ছাড়া হালের আলোচিত ব্যবসায়ীরাও ভিড় করেন দলীয় কার্যালয়ে। নব্য হাইব্রিডদের যেমন দেখা গেছে, তেমনি চোখে পড়েছে ২০০১ সালে জোট সরকারের ক্যাডারদের হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হওয়া সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পূর্ণিমা রানী শীল, এক-এগারো সময়েন শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ মিছিলে থাকা পুলিশের হাতে গ্রেফতার স্মৃতিকণা বিশ্বাসকেও। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে আসা সবারই প্রত্যাশা, দলের সভানেত্রী যোগ্যতা ও কাজ অনুযায়ী মনোনয়ন দেবেন।

যারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন : গতকাল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা নারীদের মধ্যে ছিলেন ফরিদুন্নাহার লাইলী, মাহমুদা বেগম ক্রিক, নাজমা আকতার, ফারহানা ডলি, ডা. সেলিনা আকতার, নুসরাত ফারহানা ইলোরা, নীলিমা আকতার, নার্গিস রহমান, ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন, নুরনাহার কাকলী, কানিজ ফাতেমা আহম্মেদ, শামসুন্নাহার রত্না, পূর্ণিমা রানী শীল, সুমনা আকতার লিলি, জেদ্দা পারভীন রিমি, জান্নাত আরা হেনরি, নাসরিন আকতার, খাজিদা আকতার শিল্পী, মলো রানী সরকার, ডা. পূরবী রানী দেবনাথ, রাবেয়া আজিজ, শাহীন সুলতানা শান্তা, তাহমিনা সুলতানা, শান্তা আকতার, নাছিমা আকতার ডলি, হোসনে আরা, জাহানারা ইসলাম, সীমা ইসলাম, ছানোয়ারা সুলতানা, সখিনা সিদ্দিক, শিরিন ইসলাম, নিলুফার আনজুম, দীপিকা রানী সমাদ্দার, রোকেয়া বেগম, কাজী আছিয়া জয়নুল, শিরিন বেগম, নাহিদা আলম, হাসিনা দৌলা, নুরজাহান বেগম, মাহফুজা সুলতানা, রোজিনা নাসরিন, ইসরাত জাহান, রাবেয়া বেগম, আজিমুন নাহার, নীলুফার আঞ্জুম পপি (প্রয়াত শাকিলের স্ত্রী), আদিবা আঞ্জুম মিতা, ডেইজি সরোয়ার, পারভীন খায়ের, খোদেজা নাসরিন, নার্গিস মাহাতাব, নাদিরা পারভীন লাকি, খালিদা আকতার শিল্পী, কামরুন নাহার সুমি, বনশ্রী বিশ্বাস, জেসমিন শারমীন নিঝুম, শারমিন সুলতানা লিলি ও লতিফা বেগম। আলোচিত অভিনেত্রীদের মধ্যে রয়েছেন সারাহ বেগম কবরী, আনোয়ারা, সাহানুর, ফাগ্লুনী হামিদ, জ্যোতিকা জ্যোতি, দিলারা ইয়াসমিন প্রমুখ।

১৭ ফেব্রুয়ারি সংরক্ষিত নারী আসনের তফসিল : একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের তফসিল আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য সংরক্ষিত ৫০ আসনের বরাদ্দ বিষয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল  ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের দল ও জোটগত অবস্থান জানাতে ইসি চিঠিও দিয়েছে। দলগুলোর আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে কমিশনকে অবহিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরে কমিশন ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। আর ১৭ ফেব্রুয়ারি নারী আসনের তফসিল ঘোষণা হবে। সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এসব তথ্য জানান।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, ভোটে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি, জাতীয় পার্টি ২২টি, বিএনপি ৬টি, গণফোরাম ২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, জাসদ ২টি, বিকল্পধারা ২টি, তরিকত ফেডারেশন ১টি, জেপি ১টি আসন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি আসন পেয়েছেন। বিএনপি ও গণফোরাম এখনো শপথ না নিলেও তাদের অবস্থান জানার পর করণীয় নির্ধারণ করবে ইসি।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটের জন্য একটি দিন রাখা হলেও ফল জানা যায় তার আগেই। ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের বিপরীতে দল ও জোটগতভাবে সমানসংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ জন্য প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার দিনই তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে কমিশন।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, সরাসরি ভোটে জয়ী দলগুলোর আসনসংখ্যার অনুপাতে নারী আসন বণ্টন করা হয়। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ ৪৩টি, জাতীয় পার্টি ৪টি, বিএনপি ১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটভুক্ত হয়ে ১টি সংরক্ষিত আসন পেতে পারে। একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে আগামী ৩০ জানুয়ারি। কাজ দ্রুত শেষ হলে এ অধিবেশনেই সংরক্ষিত নারী এমপিরা যোগ দেওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ২৯৮ আসনে নির্বাচিতদের নাম-ঠিকানাসহ গেজেট প্রকাশিত হয়েছে ১ জানুয়ারি। স্থগিত থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের ফলও ইসিতে এসে গেছে। এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে আটকে যাওয়া গাইবান্ধা-৩ আসনের ভোট হবে ২৭ জানুয়ারি।

সর্বশেষ খবর