শিরোনাম
রবিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিজয় ধরে রাখা আরও কঠিন

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিজয় ধরে রাখা আরও কঠিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় সমাবেশ মঞ্চে হাত নেড়ে জনগণের অভিবাদনের জবাব দেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছে, তার মর্যাদা আমি রক্ষা করব। তিনি বলেন, বিজয় পাওয়া যত কঠিন, তা রক্ষা করে জনগণের জন্য কাজ করা আরও কঠিন। যে কঠিন কাজের দায়িত্ব পেয়েছি, তা পালন করতে হবে। গতকাল বিকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশে সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় বিজয় উদ্যাপন করতেই এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এ সমাবেশ ছিল স্মরণকালের বৃহত্তম। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি কী পেলাম না পেলাম, তার চেয়ে আমি কী দিতে পারলাম, সেটাই বড় কথা। দেশের জনগণ আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে ভোট দিয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশের মানুষ যেন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলতে পারে, সেভাবেই আমি কাজ করছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশ হবে বিশে^র মর্যাদাশালী দেশ, উন্নত দেশ। তিনি ওয়াদা করে বলেন, দুর্নীতি-জঙ্গি-মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ জাতিকে উপহার দেব। আমার গ্রাম হবে আমার শহর। গ্রামে শহরের সব সুযোগ সুবিধা থাকবে।

বেলা আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় জনসভা। এর আগে দেশের বরেণ্য শিল্পীরা মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেন। বিকাল ৩টা ৫ মিনিটে সমাবেশস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মঞ্চে উঠেই জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে তাদের অভিনন্দন জানান। বিকাল ৪টা ৩৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা শুরু করেন। মাত্র ১৯ মিনিটের বক্তৃতায় বিগত নির্বাচনে দেশবাসী নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান এবং নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় তাদের ধন্যবাদ দেন শেখ হাসিনা। সরকার পরিচালনায় কোনো দলমত দেখা হবে না জানিয়ে তিনি সবাইকে নিয়েই ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের কথা জানান।

বিজয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটকে বিজয়ী করেছে। এ বিজয় কেবল আওয়ামী লীগের নয়। এ বিজয় স্বাধীনতার পক্ষশক্তির, এ বিজয় জনগণের। তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়ে নির্বাচনকে অর্থবহ করেছে। নির্বাচনে জয়-পরাজয় একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। ঐক্যবদ্ধ শক্তি সব সময় বিজয় অর্জন করে এটা প্রমাণিত হয়েছে। আগামীতে সবাইকে নিয়েই চলা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন দায়িত্ব পেয়েছি জনগণের সেবা করার, দলমতনির্বিশেষে সবার জন্য আমাদের সরকার কাজ করে যাবে। প্রত্যেকের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করবে। রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, প্রতিটি নাগরিক আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সকলের তরে, সকলের জন্য আমরা কাজ করব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণ করা আমাদের কর্তব্য। বিজয় পাওয়া যত কঠিন, বিজয় রক্ষা করে জনগণের জন্য কাজ করা আরও কঠিন। সে কঠিন কাজের দায়িত্ব পেয়েছি, তা পালন করতে হবে, সেটাই আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। দেশকে সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করতে সবার সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এটাই মূল লক্ষ্য যে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের চেতনা নিয়ে একটি উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। ছাত্র-শিক্ষকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে আহ্বান জানাই, ‘আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। যাতে তারা একটি উন্নত ও সুন্দর সমাজ পায়।’ তিনি বলেন, তৃণমূলে মানুষের জীবন উন্নত করব। শিক্ষার আলো প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যাবে। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হবে, প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।

’৭৫-এর ১৫ আগস্টের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, খুনিরা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুর কোনো রক্ত বেঁচে থাকবে না, যাতে বাংলাদেশ আবার উঠে দাঁড়াতে না পারে। আমি আর আমার ছোট বোন ছয় বছর বিদেশে ছিলাম। সে সময় দেখেছি বাংলাদেশের সেই চিত্র। ছিন্নবস্ত্র, দেখেছি মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, পেটে ক্ষুধার জ্বালা। তখন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে স্বপ্ন নিয়ে আদর্শ নিয়ে বাবা দেশ স্বাধীন করেছেন, তিনি সেটা পূরণ করে যেতে পারেননি, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নিয়ে যখন উন্নয়নের পথে যাত্রা করেন তখনই সেই ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়েও প্রতিজ্ঞা করেছি। এ দেশকে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছি যে, বাংলাদেশে একটি মানুষও ক্ষুধার্ত থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, সবাই চিকিৎসা পাবে, তরুণরা কর্মসংস্থান পাবে। বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, লক্ষ্য।’

কবি সুকান্তের কবিতার পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। বলেন, ‘তবু যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি- নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম, মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, নাজমা আকতার, মোল্লা মো. আবু কাওছার, খগেন্দ্রনাথ রায়, রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। এর আগে দেশের বরেণ্য শিল্পী রফিকুল আলম, ফাহমিদা নবী, মমতাজ, আঁখি আলমগীর, জানে আলম, জলের গানের রাহুল রাহাসহ দেশবরেণ্য শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা জিতবে এবার নৌকা’ গানটি পরিবেশন করা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী হাতে তালি দিয়ে উৎসাহ দেন নেতা-কর্মীদের।

যা বললেন আওয়ামী লীগ নেতারা : আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, বিজয়ের মাসে আরেক বিজয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ অর্থনৈতিক মুক্তিকে শেখ হাসিনা সম্পন্ন করতে যাচ্ছেন। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের জন্য মানুষ অপেক্ষা করে ছিল। এবার সংসদ হবে জামায়াত ও খুনিমুক্ত।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, এ বিজয়কে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মানবতার বিজয় বলে ঘোষণা করা যেতে পারে। প্রেসিডিয়ামের আরেক সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বাংলার জনগণ মনে করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আগে নির্বাচনে বিজয়ে শেখ হাসিনার উদ্দেশে লেখা অভিনন্দনপত্র পড়েন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি বলেন, মৃত্যুর মিছিলে আপনি গেয়েছেন জীবনের জয়গান। কথা দিয়ে কথা রাখার রাজনৈতিক সংস্কৃতি আপনি ফিরিয়ে এনেছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনাকারী, হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে দুর্নীতি ও লুটপাটকারী এবং দেশের টাকা বিদেশে পাচারকারী বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানাচ্ছি।

আবদুর রহমান বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেই ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দিতে হবে।আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ রায় দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় সদস্য, সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, বাংলার মানুষ শেখ হাসিনাকে নৌকায় ভোট দিয়েছে, শেখ হাসিনার সততাকে ভোট দিয়েছে। শেখ হাসিনার উন্নয়নকে ভোট দিয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর