সোমবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ব্যাংক খাত রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে

ড. নাজনীন আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংক খাত রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো এবং অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেছেন, খেলাপি ঋণ কমাতে হলে সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এ জন্য ব্যাংকিং খাতকে পুরোপুরি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকে একই ব্যক্তি ব্যাংকের মালিক, একই ব্যক্তি ঋণগ্রহীতা, আবার তিনিই ঋণখেলাপি। কিন্তু তাকে কিছু বলা যাবে না। এই প্রথা বন্ধ করতে হবে। বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদের মেয়াদ কমিয়ে আনতে হবে। সেই সঙ্গে একই পরিবারের সদস্য এবং তাদের আত্মীয়স্বজন মিলে চার-পাঁচটি ব্যাংকের মালিকানায় থাকেন, এ ধরনের নিয়ম বন্ধ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে ইন্ডিপেনডেন্ট ডিরেক্টরের সংখ্যা বাড়াতে হবে। শনিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, শুধু তা-ই নয়, এই বৃহৎ খেলাপিরাই আবার সরকারের বড় বড় পদে দায়িত্ব পালন করেন। এটাও বন্ধ করতে হবে। সেটি করতে পারলে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাম্প্রতিক সময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনায় কোনো ধরনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নেই। কেননা যারা ব্যাংকের মালিক, তারাই ঋণগ্রহীতা, আবার তারাই ঋণখেলাপি- এ প্রথা বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ পলিসিগত সিস্টেমকে শক্তিশালী এবং উন্নত করতে হবে। যারা ঋণখেলাপি বা অনিয়মকারী হিসেবে ধরা পড়ছেন, তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। শুধু কিছু লোককে ধরে জেলে রাখলেই ঋণ অনিয়মের বিচার হয়ে যায় না। পুরো ব্যবস্থায় যারা অনিয়ম করেছেন তাদের সবাইকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। কারও ক্ষেত্রেই শিথিলতা দেখানোর সুযোগ নেই। এ ছাড়া যে কোনো ঋণের বিপরীতে মর্টগেজ বা ঋণ গ্যারান্টির কাগজপত্র অধিক যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ-সংক্রান্ত রিট বা আইনি জটিলতা নিষ্পত্তির জন্য হাই কোর্টে পৃথক বেঞ্চ গঠন করতে হবে। সেই সঙ্গে এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। সর্বোপরি ব্যাংকগুলো ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ ও আমানতের ক্ষেত্রে ছয় শতাংশের যে নিয়ম চালু করেছে, তাতে সাধারণ গ্রাহকরা তেমন কোনো উপকার পাননি। বরং বড় বড় ঋণখেলাপি, বেসরকারি ব্যাংকের মালিক, এমনকি অতি ধনিক শ্রেণির গ্রাহকরাই এতে উপকৃত হয়েছেন। ফলে এই প্রথাও ব্যাংকিং খাতে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর