বুধবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সুরের বুলবুল আর নেই

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

সুরের বুলবুল আর নেই

একদিকে গান তৈরি করে এদেশের অগণিত সুরপিয়াসীদের মনের খোরাক জুগিয়েছেন অন্যদিকে দেশের মানুষকে মুক্ত করতে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে। দেশকে স্বাধীন করে আবারও তার সুরে মনোনিবেশ। সেই সুরকে এদেশের অগণিত মানুষের হৃদয়ে চির জাগরূক রেখে অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন কিংবদন্তি সুরস্রষ্টা ও মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গতকাল ভোরে রাজধানীর আফতাব নগরের নিজ বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বরেণ্য সুরকার, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক জগতের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। তার অসামান্য সৃষ্টিকর্মের জন্য চিরদিন মানুষ তাকে স্মরণ করবে। মুক্তিযুদ্ধে ও সংগীতাঙ্গনে বুলবুলের অসামান্য অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার ইন্তেকালে দেশ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ও সুরকারকে হারাল। আরও শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ বুধবার সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মরদেহ।

 সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে সেখানে  বেলা ১১টা থেকে দুুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে সর্বস্তরের জনসাধারণ। সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে এ মুক্তিযোদ্ধা শিল্পীকে। এরপর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তারপর মরদেহ নেওয়া হবে এফডিসি প্রাঙ্গণে। এরপর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে। বর্তমানে তার মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়েছে।

গত বছরের ১৬ মে ফেসবুকে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল তার অসুস্থতার খবর জানিয়ে একটি পোস্ট দেন। তখন তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুরস্রষ্টা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরারোপিত গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সৈয়দ আবদুল হাদী, এন্ড্রু কিশোর, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সামিনা চৌধুরীসহ বিভিন্ন প্রজন্মের শিল্পী। তার উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- সব কটা জানালা খুলে দাও না, একতারা লাগে না আমার দোতারাও লাগে না, আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যেখানে, আমি তোমারি প্রেমের ভিখারি, ও আমার মন কান্দে, আইলো দারুণ ফাগুনরে, আমার একদিকে পৃথিবী একদিকে ভালোবাসা, আমি তোমার দুটি চোখে দুটি তারা হয়ে থাকবো, আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে, পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে যেন পেয়েছি, আম্মাজান আম্মাজান, ঈশ্বর আল্লাহ বিধাতা জানে, এই বুকে বইছে যমুনা, প্রেম কখনো মধুর, কখনো সে বেদনা বিধুর, অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে, মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে, সেই রেল লাইনের ধারে, সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য ইত্যাদি।

দেশের সংগীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে একুশে পদক লাভ করেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। এ ছাড়া সংগীতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা এবং পুরস্কার লাভ করেন।

২০১২ সালের আগস্টে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে পরের বছর খুন হন তার ছোট ভাই আহমেদ মিরাজ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর