বুধবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সারা দেশ ধ্বংস করে টেকনাফে কেউ ইয়াবা খায় না

নিজামুল হক বিপুল, টেকনাফ থেকে ফিরে

টেকনাফের সীমান্ত দিয়ে লাখ লাখ পিস ইয়াবা ঢুকলেও সেই ইয়াবা সেবন করেন না সেখানকার সিংহভাগ মানুষ। তারা শুধু সেবনকারীদের সেবা দেন আর কাঁচা টাকা লুটে নেন। স্থানীয় লোকজন এবং পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, টেকনাফের লোকজনের কাজই হচ্ছে সীমান্ত দিয়ে আসা ইয়াবার চালান দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া। সেই কাজটুকু তারা করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর ধরে।

টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়ন, সাবরাং, হ্নীলা ইউনিয়ন এবং টেকনাফ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা             ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একযুগেরও বেশি সময় ধরে টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে যে ইয়াবা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তার এক শতাংশও টেকনাফের লোকজন সেবন করেনি। টেকনাফ মডেল থানার একজন কর্মকর্তা জানালেন, এখানে সেবনকারীর সংখ্যা খুবই কম। এখানে সবাই ইয়াবার ব্যবসায়ী। বাংলাদেশে ইয়াবার যে বাজারজাত হচ্ছে, এর মূল ট্রানজিট পয়েন্ট হচ্ছে টেকনাফ।সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া গ্রামের আবুল কালাম বলেন, টেকনাফের দুর্নাম শুধু ইয়াবা ব্যবসার জন্য। এখানে খুব কম লোকই ইয়াবা সেবন করে। সবাই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। রাতারাতি ধনী হওয়ার জন্য তারা এই ব্যবসাকে লুফে নিয়েছে। টেকনাফ সদরের সিএনজি অটোরিকশাচালক আলম বলেন, টেকনাফের এমন কোনো গ্রাম নেই, বাড়ি নেই, যেখানে ইয়াবা ব্যবসায়ী পাওয়া যাবে না। কিন্তু ইয়াবা সেবনকারী খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। তিনি বলেন, প্রতিটি বাড়িতেই ইয়াবার কারবারি আছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেনও বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বললেন, টেকনাফের লোকজন ইয়াবা সেবন করে না। এরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এখন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যারা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, আমরা তাদের সবাইকে ব্যবসা ছেড়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা তো চাই সবাই আত্মসমর্পণ করুক।’ পুলিশ সুপার বলেন, ‘তারা যদি আত্মসমর্পণ করে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে বলে, আমরা ভালো হতে চাই, আমরা আর ইয়াবা ব্যবসা করব না, টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের কাউকে ব্যবসা করতে দেব না, যারা ব্যবসা করে তাদের প্রতিহত করব, তাহলে তো এটা অনেক বড় অর্জন।’ কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানালেন, ইতিমধ্যে তারা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য পেয়েছেন। অনেক নতুন নতুন ব্যবসায়ীর নাম পেয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান চলবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ইয়াবা ব্যবসা হয়তো পুরোপুরি বন্ধ করা বেশ কঠিন হবে। শূন্যের কোঠায় হয়তো নামিয়ে আনা যাবে না, তবে এই ব্যবসা বন্ধে পুলিশ সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।

ইয়াবা বন্ধে চাই সীমান্তে কঠোর অবস্থান : টেকনাফের যেসব পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা আসছে সেগুলোতে কঠোর নজরদারির কথা বলছেন টেকনাফের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তারা বলছেন, সীমান্তরক্ষা বাহিনী যদি চায় টেকনাফ দিয়ে ইয়াবা বা কোনো অবৈধ কিছু ঢুকবে না, তাহলেই ইয়াবা আসা বন্ধ হয়ে যাবে। টেকনাফ মডেল থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইয়াবা বন্ধের জন্য এত যুদ্ধ করার প্রয়োজন হতো না, যদি সীমান্ত সিল করে দেওয়া যেত। সীমান্তের ফাঁক গলেই ইয়াবা দেশে ঢুকছে। নাজিরপাড়ার একজন যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, বিজিবির স্থানীয় সোর্সদের সঙ্গে ইয়াবা কারবারিদের দহরম-মহরম। এ সুযোগ কারবারিরা নিয়ে থাকে। ফলে অনেক চেষ্টার পরও ইয়াবা পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে পুরোপুরি একমত কক্সবাজার জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তার মতে, বিজিবি চাইলে ইয়াবা আসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর