শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
রিজার্ভ চুরি

অর্থ আদায়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থ আদায়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মামলা

তিন বছর আগে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিউইয়র্কের  ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের আশায় ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার রাতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটন সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে দায়ের করা এ মামলায় রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) এবং ওই ব্যাংকের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ডজনখানেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে (মামলার নম্বর ১৯-০০৯৮৩)। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এ মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ল ফার্ম কোজেন ও’কনর।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নিউইয়র্কে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কয়েক বছর ধরে জটিল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আসামিরা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়। রিজার্ভের অর্থ চুরির কাজে অজ্ঞাতনামা উত্তরকোরীয় হ্যাকারদের সহায়তা নেয় আসামিরা। নেস্টেগ ও ম্যাকট্রাকের মতো ম্যালওয়্যার পাঠিয়ে হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট নেটওয়ার্কে ঢোকার জন্য পথ বের করে। পরে নিউইয়র্ক ফেড থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়া হয় নিউইয়র্ক ও ফিলিপাইনের আরসিবিসির অ্যাকাউন্টে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ওই অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর আরসিবিসি এবং এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। কী ধরনের অপরাধ হচ্ছে জেনেও তারা অ্যাকাউন্ট খোলা, বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর এবং পরে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়গুলো ঘটতে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে আরও জানা গেছে, মামলা করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কয়েক দিন আগে নিউইয়র্কে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ, একই ইউনিটের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আবদুুর রব এবং অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন রয়েছেন ওই দলে।

ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ এই সাইবার জালিয়াতির ঘটনা জানাজানি হলে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। বাংলাদেশের মানুষ বিষয়টি জানতে পারেন ঘটনার এক মাস পর, ফিলিপাইনের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে। বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল। বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফিলিপাইনে ঢোকার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে দেশটির সিনেট কমিটি তদন্ত শুরু করে। ওই ঘটনায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার পর আরসিবিসি তাদের শাখা ম্যানেজার মায়া সান্তোস দিগুইতোকে বরখাস্ত করে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার জরিমানা করে আরসিবিসিকে। ওই সময় করা মামলায় ফিলিপাইনের আদালত গত ১০ জানুয়ারি আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দিগুইতোকে মুদ্রাপাচারের আট দফা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলাতেও তাকে আসামি করা হয়েছে।

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি। এদিকে তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ গত তিন বছরেও আদালতে প্রতিবেদন দিতে পারেনি।

সর্বশেষ খবর