শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

একজন সম্পাদককে হত্যার পরিকল্পনা জঙ্গিদের, আটক ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের (এবিটি) চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। র‌্যাব বলছে, টার্গেট করা ব্যক্তিদের হত্যা পরিকল্পনা কার্যকর করার লক্ষ্যে অর্থ সংগ্রহ করছিলেন গ্রেফতারকৃতরা। একটি জাতীয় পত্রিকার সম্পাদক তাদের টার্গেটে ছিলেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন মো. শাহরিয়ার নাফিস ওরফে মো. আম্মার হোসেন (২০), মো. রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী (২৪), মো. রবিউল ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলাম (২৪) ও মো. আবদুল মালেক (৩১)। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে র‌্যাব-১ এর একটি দল তাদের গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই, মোবাইল ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মুফতি মাহমুদ বলেন, এবিটির মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, ব্লগাররা ‘টার্গেট অ্যান্ড কিলিং-এর শিকার হয়েছেন। গ্রেফতার ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপে ছদ্মবেশ নিয়ে যুক্ত হয়ে, ওই গ্রুপের সদস্যদের চিহ্নিত করে হত্যার চেষ্টা করেছেন। একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত একটি লেখায় বিয়ে সংক্রান্ত হাদিস নিয়ে মন্তব্যের জন্য সম্পাদককে হত্যার পরিকল্পনা করেন তারা। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের তথ্যের বরাত দিয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, এবিটি প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানী কারাগারে বসেই এবিটি নিয়ন্ত্রণ করছেন। তবে বাইরে এটিবির নিয়ন্ত্রণ করছে কে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে এবিটির ৯২ জনের একটি সেল গঠন করা হয়েছে। নতুন করে তারা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা পটুয়াখালী জেলায় প্রশিক্ষণের জন্য জায়গা খুঁজছেন। অস্ত্র সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করছে। দেশ-বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। মুফতি মাহমুদ বলেন, তারা এখন গোপনে সংগঠনকে উজ্জীবিত করার কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের অন্যতম পরিকল্পনা হলো, তাদের সংগঠনের প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানীকে কারামুক্ত করা। যদি তারা তাদের নেতাকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত না করতে পারেন, তাহলে কারাগারে হামলা করে হলেও মুক্ত করবেন বলে জানান। জসিমউদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করার জন্য তারা ইতিমধ্যে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। এরই একাংশ গ্রেফতার হওয়া রাসেলের কাছে জমা ছিল। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি র‌্যাব রাজধানীর আশুলিয়ায় এবিটির সক্রিয় সদস্য মো. আবদুস ছোবহান ওরফে হাবিবকে (২৮) গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্য এবং মামলার ছায়া তদন্তের ওপর ভিত্তি করে র‌্যাব-১ এর একটি দল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় অভিযান চালিয়ে এবিটির সক্রিয় এই চার সদস্যকে আটক করে। এদের মধ্যে শাহরিয়ার নাফিস ও রবিউল ইসলামের গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার চর মুখশিয়া গ্রামে। মো. রাসেলের বাড়ি ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ফুলকাছিয়ায় এবং আবদুল মালেকের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনের হাছানগঞ্জ গ্রামে। র‌্যাব জানিয়েছে, শাহরিয়ার নাফিস সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে দুই বছর বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। পরে তিনি আবারও হাইস্কুলে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে অনলাইনে (ফেসবুক) আমান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে এবিটিতে যোগ দেন। এই আমানই হলেন শাহরিয়ারের নিয়ন্ত্রক। আমানের নির্দেশনায় তিনি ৪-৫টি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে প্রচার-প্রচারণা চালাতেন এবং জঙ্গি সদস্য সংগ্রহের কাজ করতেন। এভাবে শাহরিয়ার ৭-৮ জনকে এবিটিতে যুক্ত করান। শাহরিয়ার এবিটির টার্গেট কিলিং মিশনের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনলাইনে অ্যাকটিভিস্টদের ওপর নজরদারি করা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রেফতার শাহরিয়ার ছদ্মবেশে একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অ্যাকিটিভিস্ট গ্রুপে ঢুকে পড়েন। এরপর সংগঠনের সিদ্ধান্তে অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপের এক সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ওই মিশনে সংগঠন থেকে শাহরিয়ার ও অন্য দুই সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে একজন ধারালো অস্ত্রসহ এবং আরেক সদস্য বরগুনা থেকে বগুড়া যান। বগুড়ায় যাওয়ার পর তারা অনলাইনে ফোন করে ওই অ্যাকটিভিস্ট সদস্যকে দেখা করতে বলেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি দেখা না করায় তাদের মিশনটি সম্পন্ন হয়নি। পরে তারা বগুড়া থেকে নিজেদের গন্তব্যে চলে যান। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, মো. রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী ২০১৩ সালে মাধ্যমিক পাস করে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। তখন থেকে তিনি ফেসবুকে উগ্রবাদী পোস্ট ও ভিডিও দেখে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করতেন। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ফেসবুকের মাধ্যমে গ্রুপের নিয়ন্ত্রক আমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে আমান রাসেলকে জঙ্গি সংগঠনে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। বর্তমানে তিনি ছদ্মবেশে একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। রাসেল তার নিয়ন্ত্রকের নির্দেশনায় বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ ছাড়াও সদস্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। রবিউল ইসলাম ২০১০ সালে দাখিল পাস করে বগুড়া পলিটেকনিক্যাল থেকে ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডিপ্লোমা ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তিনি ২০১৮ সালে শাহরিয়ারের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। এ ছাড়া মো. আবদুল মালেক পেশায় প্রাইভেট গাড়ির চালক। তিনি ২০১৮ সালে রাসেলের মাধ্যমে এবিটিতে যোগ দেন।

সর্বশেষ খবর