রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিশৃঙ্খল বিএনপির ১১ অঙ্গ সংগঠন

► ছাত্রত্ব না থাকায় ডাকসু নির্বাচনে প্যানেল দিতে হিমশিম ছাত্রদলের
► আংশিক কমিটিতেই স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদল
► ২১ বছর ধরে কমিটি নেই কৃষক দলের
► গ্রুপিংয়ে মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা ও মৎস্যজীবী দল
► শুধু মিলাদ মাহফিলেই ওলামা দল নেতারা

মাহমুদ আজহার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্যানেল দিতে গিয়ে ‘চরম বেকায়দায়’ পড়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সংগঠনের ৭৩৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে তিন শতাধিক ছাত্রই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু সবাই নির্ধারিত বয়সসীমার ঊর্ধ্বে (আদু ভাই)। সবমিলিয়ে ৫০ জন নেতা খুঁজে পাওয়া গেছে তাও তারা ‘অখ্যাত’। ডাকসু কেন্দ্রীয় কমিটিসহ হলে প্যানেল দিতে প্রয়োজন অন্তত ২৩৬ জন নেতার। এ জন্য এখন হন্যে হয়ে ছুটছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও রকিবুল ইসলাম বকুল। সম্প্রতি এই দুই নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্রদলের সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে অধিকাংশ নেতাই ছিলেন নির্ধারিত বয়সসীমার ঊর্ধ্বে। ছাত্রদলের সাবেক এই দুই নেতা চরম হতাশ। এ নিয়ে গতকালও সাবেক ছাত্রনেতারা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে বৈঠক করেন। সেখানে ডাকসু প্যানেল নিয়ে আলোচনা হলে হতাশার চিত্র ফুটে ওঠে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজিব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে তা পূর্ণাঙ্গ করে ৭৩৬ সদস্যের ঢাউস কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় ছাত্রদল সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র সহসভাপতিকে বিএনপির নির্বাহী কমিটিতেও ঠাঁই দেওয়া হয়। ছাত্রদলের শীর্ষ অবস্থানে থাকাবস্থায় ওই তিন নেতা বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ায় তারা এমপি প্রার্থী হওয়ার জন্য তোড়জোড় করেন। বিএনপি অবশ্য তাদের মনোনয়ন দেয়নি।

এখন সংগঠনটির কমিটি আড়াই বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। তাদের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে তাদের কার্যকর কোনো ভূমিকা ছিল না। মাঠেও তাদের নামতে দেখা যায়নি। এমনকি বেগম খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তো নেই, নয়াপল্টনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও অধিকাংশ সময় থাকে তালাবদ্ধ। মামলার অজুহাতে শীর্ষ নেতারা দুই বছর ধরে আড়ালে আবডালে থাকেন। সাধারণ ছাত্রছাত্রী তো দূরের কথা সংগঠনের নেতারাও তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ কিংবা কথা বলার সুযোগ কম। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। তাছাড়া এই কমিটি গঠনের পর থেকেই কমিটির ভিতর থেকেই একটি গ্রুপ বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। একইভাবে পদবঞ্চিত আরেকটি গ্রুপও এই কমিটি বাতিলের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে বিক্ষোভ করে আসছে। বর্তমান নেতৃত্ব ঢাকা কলেজে ৭৭৬ সদস্য বিশিষ্ট, বাংলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজে ছয় শতাধিক নেতাদের সমন্বয়ে কমিটি ঘোষণা করে। এ নিয়েও ক্ষুব্ধ সংগঠনের ভিতরে-বাইরে। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে ঢাউস কমিটির নেতাদের খোঁজেও পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ ছাত্রদল নেতাদের একাংশের।

জানা যায়, ছাত্রদলের এই বেহাল অবস্থায় ডাকসু নির্বাচনের পর নতুন কমিটি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। সেখানে কেউ কেউ ডাকসুর আদলে নেতৃত্ব গঠন করার কথা বলছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন মোকাবিলা করতে প্রয়োজন সিনিয়র-জুনিয়রদের সমন্বয়ে কমিটি। তবে ডাকসু নির্বাচনের পর ছাত্রদলের কমিটি হবে এটা অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানা গেছে।

জানা যায়, শুধু ছাত্রদলই নয়, বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় সবগুলোরই বেহাল অবস্থা। কয়েকটি সংগঠন মেয়াদোত্তীর্ণ। সংগঠনগুলোতে নেই চেইন অব কমান্ড। অঙ্গ সংগঠনগুলোয় নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। কয়েকটি সংগঠনে কেউ কারও নেতৃত্ব না মানায় অসন্তোষ ও বিরোধ বাড়ছে। এসব সংগঠনের শীর্ষ পদে থাকা অনেক নেতার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। কারাগারে যাওয়ার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অঙ্গ সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন। কয়েকটি সংগঠনের আংশিক কমিটিও ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও কোনো সুফল আসেনি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে কোনো কোনো সংগঠন। জেলা-থানা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে যুগ যুগ ধরে কোথাও কোথাও কমিটি নেই। বিএনপির সঙ্গে নেই সমন্বয়। আবার কোথাও কোথাও একই ব্যক্তি বিএনপিসহ অন্তত কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্বেও রয়েছেন।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার পর সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়া। এরপর ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি কমিটি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলের কমিটি গঠন করা হয়। সবগুলোই ছিল আংশিক কমিটি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি : ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সভাপতি ও কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা বিএনপির ৭০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। একইভাবে এম এ কাইয়ুমকে সভাপতিও আহসান উল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা বিএনপির ৬৬ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ঘোষণার সময় বিএনপির হাইকমান্ড থেকে বলা হয়েছিল, এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। কিন্তু দেখতে দেখতে দুই বছর চলে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতারা। অবশ্য তারা এক বছরের মাথায় থানা ও ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা দিয়েছে। কমিটি গঠনের পর পুরনো কোন্দল নতুন করে বেড়েছে। ত্যাগীদের একটি অংশকে পদ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়েও পদবঞ্চিতদের বড় একটি অংশই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভূমিকাও দৃশ্যমান ছিল না।

যুবদল : দুই বছর ধরে আংশিক কমিটিতেই আটকে রয়েছে বিএনপির অন্যতম অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার প্রক্রিয়াই শুরু করতে পারেননি দায়িত্বশীল নেতারা। নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, হচ্ছে হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু এক মাসের মধ্যে কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা পেড়িয়ে দুই বছরেও হয়ে ওঠেনি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি যুবদলের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও মহানগর দক্ষিণের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। মহানগর উত্তর যুবদল সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর ও দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মজনু। এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ থাকলেও তা হয়নি। এ নিয়ে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু জেলে রয়েছেন। সভাপতি সাইফুল আলম নীরব মামলা-হুলিয়া নিয়ে আত্মগোপনে। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু একদিনের জন্যও প্রচারণায় মাঠে নামতে পারেননি তিনি। এ নিয়ে মাঠের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রক্রিয়া রয়েছে। তবে তিনি বলছেন, তার বিরুদ্ধে দুই শতাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশি গ্রেফতার এড়াতে কৌশলে তাকে প্রচারণা চালাতে হয়েছে। অবশ্য বর্তমান নেতৃত্বে এরই মধ্যে জেলা পর্যায়ে কমিটি ঘোষণা করেছে।

স্বেচ্ছাসেবক দল : ২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত কমিটিতে শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি ও আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ ছাড়া সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও সাদরাজ্জামানকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ইয়াসিন আলীকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। কমিটিকে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় অনুমোদনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয় বিএনপির হাইকমান্ডে থেকে। কিন্তু আড়াই বছরের বেশি সময়েও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি স্বেচ্ছাসেবক দল। অবশ্য তারা জেলা পর্যায়ে কমিটি ঘোষণা করেছে।

শ্রমিক দল : বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ২০১৪ সালের ১৯ ও ২০ এপ্রিল দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের তিন দিন পর আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি, নুরুল ইসলাম খান নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক ও জাকির হোসেনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৩৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রায় তিন বছর ধরে কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গ্রুপিং ও কোন্দল বেড়েছে। দলের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। তবে আনোয়ার হোসেন বলেন, অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের চেয়ে শ্রমিক দল একটু ব্যতিক্রম। ২০০৬ সালে সংশোধন করা শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিক দলকে চলতে হয়। প্রতি বছর অডিটের মাধ্যমে শ্রমিক দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে হয় শ্রম অধিদফতরে।

কৃষক দল : বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে সম্মুখ সারিতে থাকত জাতীয়তাবাদী কৃষক দল। প্রয়াত বিএনপি মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াসহ দলের অনেক নেতা এক সময় কৃষক দলের সক্রিয় নেতা ছিলেন। সর্বশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে কৃষক দলের কমিটি হয় ১৯৯৮ সালের ১৬ মে। এরপর ২০ বছর ধরে কৃষক দলের কোনো কমিটি নেই। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৯ বছর কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলের পর তিনি মহাসচিব হলে কৃষক দল ছেড়ে দেন। কিন্তু টানা ২৮ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন শামসুজ্জামান দুদু। তিনি এখন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানও। মাঠপর্যায়ে কৃষক দলেরও একই অবস্থা। বিগত আন্দোলন সংগ্রামেও কৃষক দলের কোনো ভূমিকা দৃশ্যমান ছিল না। কৃষকদের দাবি-দাওয়া নিয়েও তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

ঝিমিয়ে থাকা সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বলছেন, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি জরুরি। নইলে এই সংগঠনটির অস্তিত্ব থাকবে না।

মহিলা দল : জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের বর্তমান সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা কামাল, যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান। নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন নেতারা। তবে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে কিছুটা দৃশ্যমান ছিল মহিলা দল। তবে অনেকেই কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো কোনো নেত্রীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছেন।

জাসাস : বর্তমান কমিটির সভাপতি ড. অধ্যাপক মামুন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক হেলাল খান। এই কমিটি গঠনের পর বিক্ষোভ শুরু হয়। বিএনপির আন্দোলনে অঙ্গসংগঠন জাসাস এক সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকত। প্রতিটি আন্দোলন কর্মসূচিতে জাসাসের শিল্পীরা সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করতেন। তবে জাসাস এখন একেবারেই নীরব। নেতা-কর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ ও গ্রুপিং চলছে বলে জানা গেছে।

মুক্তিযোদ্ধা দল : গ্রুপিং ও কোন্দলের কারণে অকেজো হয়ে পড়েছে মুক্তিযোদ্ধা দল। এ সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে নানামুখী মেরুকরণ চলছে। একটি অংশ দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতকে মেনে চলছে। অন্য অংশ দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের অনুসারী। এই কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝিমিয়ে পড়া নেতা-কর্মীরা নতুন নেতৃত্ব দাবি করছেন।

ওলামা দল : জাতীয়তাবাদী ওলামা দলও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে। দীর্ঘদিন ধরে ওলামা দলের সভাপতি মাওলানা আবদুল মালেক ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক। বিএনপির দিবসভিত্তিক কর্মসূচিতেই তাদের দেখা মেলে। মিলাদ মাহফিল আর সভাসমাবেশে কোরআন তেলাওয়াতই তাদের কাজ। আলেম-ওলামাদের নিয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচি নেই বললেই চলে। পদ-পদবি নিয়ে এই সংগঠনেও গ্রুপিং লবিং চলছে। নতুন কমিটি গঠনের দাবিও সংগঠনের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের।

তাঁতী দল : ২০০৮ সালের ২২ মে তাঁতী দলের কমিটি গঠন হয়। এরপর আর কাউন্সিল হয়নি। এই কমিটির অবস্থাও বেহাল। বর্তমান সভাপতি হুমায়ুন ইসলাম খান পরপর দুবার সভাপতি হন। সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হতে চান সভাপতি। তাঁতী দল পুনর্গঠনের দাবি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের।

মৎস্যজীবী দল : ২০১১ সালের ২ ডিসেম্বর জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তিন সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটির সভাপতি হন রফিকুল ইসলাম মাহতাব, সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা মিলন মেহেদী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল। আট বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। গত বছরের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর মৎস্যজীবী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়ালকে কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করায় তিনি এক নেতার এক পদ নীতি অনুসরণ করে মৎস্যজীবী দল থেকে পদত্যাগ করেন। সভাপতি ও সম্পাদকের মধ্যে কাজে সমন্বয় নেই বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর