সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
ভোট করতে পদ ছাড়তে হবে জনপ্রতিনিধিদের

৮৭ উপজেলায় ১০ মার্চ ভোট সংরক্ষিত ৪ মার্চ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পঞ্চম উপজেলা পরিষদের নির্বাচন আগামী ১০ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে। চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে এ ভোট হবে। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সভা শেষে এ তথ্য জানান ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি জানান, কমিশন সভায় এবার পাঁচ ধাপে ভোট করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগের ১২ জেলার ৮৭ উপজেলায় প্রথম ধাপে ১০ মার্চ ভোট হবে। পরে দ্বিতীয় ধাপ ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপ ২৪ মার্চ, চতুর্থ ধাপ ৩১ মার্চ ও পঞ্চম ধাপের ভোট হবে ১৮ জুন। দেশের ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে অন্তত ৪৮০টির ভোট এ পাঁচ ধাপে শেষ করা হবে। ইসি সচিব জানান, প্রথম ধাপের ভোটে অংশ নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১১ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই ১২ ফেব্রুয়ারি, প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৯ ফেব্রুয়ারি এবং ভোট ১০ মার্চ। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (দেশের অর্ধেক উপজেলায়) এবং জেলা নির্বাচন অফিসারকে (অর্ধেক উপজেলায়) রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। স্থানীয় সরকারের দলীয় প্রতীকের এ নির্বাচনে সব দলকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। এর আগে সিইসি কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে বিকালে কমিশনের সভা হয়। পরে ইসির সিদ্ধান্ত ব্রিফিংয়ে জানান সচিব। চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। এ তিনটি পদে দল মনোনীতরা দলীয় প্রতীকে ও অন্যরা স্বতন্ত্রভাবে ভোট করার সুযোগ পাবেন। প্রথম ধাপের যেসব উপজেলায় : রংপুর বিভাগ- পঞ্চগড় জেলার সদর, আটোয়ারী, বোদা, দেবীগঞ্জ ও তেঁতুলিয়া। কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী, উলিপুর, নাগেশ্বরী, রাজারহাট, রাজীবপুর, সদর, চিলমারী ও রৌমারী। নীলফামারী জেলার সদর, ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, সদর, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী। ময়মনসিংহ বিভাগ-জামালপুর জেলার সদর, সরিষাবাড়ী, মেলান্দহ, ইসলামপুর, বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ। নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা, দুর্গাপুর, খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ,  কলমাকান্দা, কেন্দুয়া, মদন, পূর্বধলা ও সদর। সিলেট বিভাগ-সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, সদর, দিরাই, জামালগঞ্জ, শাল্লা, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর। হবিগঞ্জ জেলার সদর, বাহুবল, মাধবপুর, চুনারুঘাট, নবীগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং ও লাখাই। রাজশাহী বিভাগ-সিরাজগঞ্জ জেলার সদর, বেলকুচি, চৌহালী, কাজীপুর, রায়গঞ্জ, শাহজাদপুর, তাড়াশ ও উল্লাপাড়া। জয়পুরহাট জেলার সদর, পাঁচবিবি, আক্কেলপুর, কালাই ও ক্ষেতলাল। নাটোর জেলার সদর, বাগাতীপাড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, লালপুর ও সিংড়া। রাজশাহী জেলার তানোর, গোদাগাড়ী, পবা, মোহনপুর, বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, চারঘাট ও বাঘা উপজেলা। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের পদ ছাড়তে হবে : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের পদ ছাড়তে হবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। সে ক্ষেত্রে উপজেলার যে কোনো জনপ্রতিনিধি (চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্য বা পৌর মেয়র-কাউন্সিলর) ভোটে অংশ নিতে হলে পদ ছাড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে স্বপদে থেকে ভোট করতে পারবেন না জনপ্রতিনিধিরা। সে ক্ষেত্রে পদত্যাগ করে ভোটে অংশ নিতে পারবেন। তবে পদত্যাগপত্র গ্রহণের বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগের এখতিয়ার বলে উল্লেখ করেন সচিব। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, যেদিন তিনি পদত্যাগ করবেন, ওই দিন থেকেই তা পদত্যাগপত্র গ্রহণ হবে।’ এ বিষয়ে শিগগিরই মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা পাঠানো হবে বলে জানান ইসির যুগ্ম-সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান। উপজেলার রিটার্নিং অফিসার : ইসির যুগ্ম-সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান জানান, যেসব জেলায় এডিসি (জেনারেল) রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকবেন, সেখানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হবে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা; যেখানে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হবেন রিটার্নিং অফিসার, সেখানে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হবেন সহকারী রিটার্নিং অফিসার। সদর উপজেলায় দুজন করে সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দায়িত্ব পাবেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের মার্চ-মে মাসে ছয় ধাপে উপজেলা নির্বাচন হয়েছিল। আইনে মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পর ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে এক দিনেই ভোট হয়েছিল। ২০১৪ সালে ছয় ধাপে ভোট করেছিল তৎকালীন ইসি। এবার উপজেলা ভোটেও ব্যবহৃত হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন। জেলার সদর উপজেলায় পুরোপুরি ইভিএম ব্যবহার করা হবে। সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পর দলীয় প্রতীকে উপজেলা ভোটেও অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ইসি সচিবের ভাষ্য, স্থানীয় সরকারের এই ভোটে কে এলো আর কে এলো না, তা ইসির বিবেচ্য বিষয় নয়। সংরক্ষিত নারী আসনের তফসিল ঘোষণা : ভোটের জন্য ৪ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করে একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল ১১ ফেব্রুয়ারি; ১২ ফেব্রুয়ারি বাছাই এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি। তিনি বলেন, ভোটের প্রয়োজন না হলে ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বিষয় নিষ্পত্তি করতে পারব।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, এ নির্বাচনে ভোটের জন্য একটি দিন রাখা হলেও ফল জানা যায় তার আগেই। ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের বিপরীতে দল ও জোটগতভাবে সমান সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয় বলে প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার দিনই তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হতে পারে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, সরাসরি ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন সংখ্যার অনুপাতে নারী আসন বণ্টন করা হয়। সংসদের সাধারণ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনের ভোটার হন। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ ৪৩টি, জাতীয় পার্টি ৪টি, বিএনপি একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটভুক্ত হয়ে একটি সংরক্ষিত আসন পেতে পারে। তবে বিএনপির সদস্যরা এখনো শপথ না নেওয়ায় একটি আসনের ভোট স্থগিত থাকবে বলে জানান ইসি সচিব। একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছে ৩০ জানুয়ারি। কাজ দ্রুত শেষ হলে এ অধিবেশনেই সংরক্ষিত নারী এমপিরা যোগ দেওয়ার সুযোগ পেতে পারেন।

সর্বশেষ খবর