শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে গড়িমসি চলবে না

অভিমত আইনজ্ঞদের

আরাফাত মুন্না

হাই কোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় সম্প্রতি এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে তলব করেছে হাই কোর্ট। এদিকে তলব করেও আদালতে আনা যায়নি যমুনা ব্যাংকের এমডিকে। শেষে আগামী ধার্য তারিখে তিনি নিজে না এলে তাকে গ্রেফতারের আদেশ দিতে বাধ্য হয়েছে হাই কোর্ট। শুধু এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বা যমুনা ব্যাংকের এমডিই নয়, জনদুর্ভোগ দূর, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও পরিবেশসহ বিভিন্ন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগ কার্যকর নির্দেশনা দিয়ে আসছে। দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এসব নির্দেশনা অধিকাংশক্ষেত্রেই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বছরের পর বছর থাকছে উপেক্ষিত। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন কতটা গুরুত্বপূর্ণ? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিন কথা বলেছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও দেশের সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে। আইনজ্ঞরা মনে করেন, আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করার ধারা থেকে নিজ উদ্যোগেই সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক। তাই উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে গড়িমসি করা চলবে না। চূড়ান্ত আদেশ পাওয়ামাত্র তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। আদেশ না মেনে কারও পার পাওয়ার সুযোগ নেই বলেও মনে করেন তারা।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, হাই কোর্টের কোনো আদেশ বা রায় বিপক্ষে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তা মানতে চান না। কীভাবে এ আদেশ এড়ানো যায় সেই ফাঁক-ফোকর খুঁজতে থাকেন। কখনো কখনো একের পর এক সময় আবেদন দিয়ে কালক্ষেপণ করতেও দেখা গেছে। এসব ঘটনা নতুন নয়। তারা বলেন, এসব ঘটনায় অন্য পক্ষকে আবার আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় আদালত অবমাননার মামলা করার জন্য। এসব কারণে এক দিকে যেমন আদালতের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হয়। সেই সঙ্গে দেশে মামলাজটও বাড়ে।

এ বিষয়ে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উচ্চ আদালত দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের অভিভাবক। তাই এই আদালতের আদেশ না মানার কোনো সুযোগই নেই। কেউ যদি স্বাভাবিকভাবে আদেশ না মানেন, সে ক্ষেত্রে তাকে আদেশ মানতে বাধ্য করতে হবে। প্রয়োজনে আদালত অবমাননার অপরাধে তার শাস্তিও হতে পারে। মূল কথা হচ্ছে আদালতের আদেশ সবাইকেই মানতে হবে। উচ্চ আদালতের আদেশ মানতে বা বাস্তবায়নে গড়িমসি করা চলবে না। জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেউ যদি মনে করেন আদালতের আদেশ না মেনে তিনি পার পেয়ে যাবেন, তাহলে সেটা ভুল। আদালতের হাত অনেক লম্বা। আদেশ না মানলে কোনো অবস্থাতেই ছাড় পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, এইতো রবিবার হাই কোর্টের আদেশে মুক্তি পেল জাহালম। এখানে আদালত কিন্তু দুদকের বিরুদ্ধে আদেশ দিয়েছে। জাহালমকে তৎক্ষণাৎ মুক্তি দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, কেউ যদি আদালতের আদেশ না মানেন, আর সেটা যদি আদালতের নজরে আনা হয়, তাহলে আদালত অবশ্যই অ্যাকশনে যাবে। এ বিষয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়িত না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। আদালতের যে কোনো নির্দেশ অক্ষরে-অক্ষরে পালন করা সবার কর্তব্য। কিন্তু দুঃখজনক হলো, সরকারের বিভিন্ন আমলা বা কর্মকর্তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে চান না। সে ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে আদেশ বাস্তবায়নে লেগে থাকতে হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলাও করতে পারেন।

সর্বশেষ খবর