বুধবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

উপজেলা নিয়ে জাতীয় পার্টির আগ্রহ নেই

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ বা আগ্রহ কোনোটাই নেই জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মাঝে। দুটি কারণে তারা এই নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছেন না। প্রথমত, তৃণমূলের দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থা। দি¦তীয়ত, কেন্দ্র থেকে কোনো খোঁজ না নেওয়া। পার্টির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, প্রথম পর্যায়ে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে। এই ভোট সুষ্ঠু না হলে পরবর্তী ধাপে আর অংশ নেবে না।  তবে কেন্দ্রীয়ভাবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আগামীকাল ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বনানীর কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হবে। এ বাবদ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৫ হাজার টাকা ও ভাইস চেয়ারম্যানদের ফি বাবদ ৩ হাজার (মহিলা/পুরুষ) টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পঞ্চম উপজেলা পরিষদে এবার পাঁচ ধাপে ৪৮০টি উপজেলায় ভোট হবে। প্রথম ধাপে ভোট গ্রহণ হবে ১০ মার্চ।

জানতে চাইলে পার্টির পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, জাতীয় পার্টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা আশা করব সরকার এবং নির্বাচন কমিশন উপজেলা পরিষদের ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবে।

জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টির তৃণমূলের কার্যক্রম। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলেই সীমাবদ্ধ দলটির কার্যক্রম। তা ছাড়া জেলা পর্যায়ে দলের সাংগঠনিক অবস্থাও দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।

১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যত  ভোট পেয়েছিল সেটি পরবর্তীতে ক্রমাগত কমেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মহাজোটের বাইরে জাতীয় পার্টির উন্মুক্ত ১৪৭ প্রার্থীর প্রায় সবার অভিযোগ কেন্দ্র থেকে কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি। প্রার্থীরা খোঁজ করেও কাউকে পাননি। জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থীরা সহজেই বিজয়ী হয়েছে। তৃণমূলের প্রার্থীদের আশঙ্কা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যে প্রার্থীই নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে থাকবেন তারাই জয় ছিনিয়ে নেবে। জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করানোর জন্য পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করবেন। আর প্রথম ধাপে ভোট সুষ্ঠু না হলে পরের চার ধাপে জাতীয় পার্টি আর অংশ নেবে না।

দলের সাংগঠনিক অবস্থা কারণ হিসেবে নেতা-কর্মীরা বলছেন, ২৩টি জেলায় পার্টির কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় আছে। এমনও জেলা আছে যেখানে ১০ বছরেও কাউন্সিল হয়নি। বৃহত্তর ঢাকার নারায়ণগঞ্জে ৫ বছর ও গাজীপুরে ৪ বছর যাবৎ সম্মেলনহীন কমিটি দিয়ে চলছে। বিগত সরকারের আমলে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুল হক চুন্নুর কিশোরগঞ্জ জেলায় সম্মেলন হয় না প্রায় একদশক। তিন বছর আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে বরিশাল জেলা। গত বছর অনুষ্ঠিত পিরোজপুর  জেলা জাপা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে পুরনোদের বাদ দিয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপি  থেকে আগত নেতাদের দিয়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সিলেট জেলা ও মহানগরেও অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংয়ের কারণে সংগঠনে গতিশীলতা আনতে পারছেন না জানান জেলা নেতারা।

জয়পুরহাট জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক আ ক ম তিতাস মোস্তফা বলেন, গেল সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র  থেকে কোনো ধরনের খোঁজখবর নেয়নি। তাই জেলা পর্যায়ে হতাশা আছে। উপজেলা নির্বাচন নিয়েও শঙ্কায় আছি। মাঠে নামিয়ে যদি পরমুহূর্তে বলে প্রত্যাহার কর। এ মুহূর্তে পার্টির নীতিনির্ধারকদের উচিত অচিরেই পার্টির তৃণমূলকে নিয়ে একটি সভা ডেকে দিক-নির্দেশনা দেওয়া।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম দফতর সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক খান জানান, গতবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। প্রার্থীদের বনানী কার্যালয়ে যোগাযোগ ছিল। এবার তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার সভাপতি ও  কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মো. নোমান মিয়া বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন করলেও আমাদের আশানুরূপ আসন দেওয়া হয়নি। আমরা চাই সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে উপজেলায় আমাদের চেয়ারম্যান ও ভাইস  চেয়ারম্যান পদে ছাড় দেওয়া হোক।

ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রাজী স্বপন বলেন,  জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই আমরা অনেকটা অলস সময় পার করছি। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আমিসহ বিভিন্ন উপজেলা নেতারা প্রাথমিক

প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে  দেবে কি-না জানি না। তা ছাড়া জনগণ তাদের ভোট দিতে পারবে কি-না তা নিয়েও সংশয় আছে।

সর্বশেষ খবর