সুশাসন নিশ্চিত করতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে প্রথম শর্ত মনে করেন অধ্যাপক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম। তার মতে, এই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কতটা নিশ্চিত হবে তা নির্ভর করে আন্তরিকতার ওপর। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে সুশাসন নিশ্চিত করার একটি সুযোগ এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হারানোর কিছু নেই। তাঁর আন্তরিকতাও আছে। এখন প্রয়োজন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থায় এগিয়ে যাওয়া। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বলেন, সুশাসনের জন্য অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে প্রধানত তিনটি বিষয় প্রয়োজন। এক. প্রবল সদিচ্ছা, দুই. কর্মপন্থা ও তিন. সবার সহযোগিতা। এর মধ্যে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে যেভাবে অনেক অপকর্মের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার (জিরো টলারেন্স) ঘোষণা দিয়েছে এবং আগের ক্ষমতাবান মন্ত্রীদের বাদ দিয়ে নতুনদের নিয়ে মন্ত্রিসভা সাজানো হয়েছে, তাতে তাদের সদিচ্ছা আছে বলেই মনে হচ্ছে। বলা হচ্ছে দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ন্যূনতম কোনো সহনশীলতা দেখানো হবে না। তবে এখন শুধু কথা বলার সময় নয়, কাজে দেখাতে হবে এবং সদিচ্ছাকে প্রবল সদিচ্ছায় পরিণত করতে হবে। কারণ সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যেভাবে শূন্য সহনশীলতা দেখাতে পেরেছে ঠিক সেভাবে মাদকের বিরুদ্ধে পারেনি। চুনোপুঁটিদের ক্রসফায়ারে দেওয়া হলো অথচ রাঘববোয়ালদের জন্য আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করে দায়মুক্তি দেওয়া হলে সেটা প্রশ্নবোধক হবে।
বিশিষ্ট কথাশিল্পী অধ্যাপক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলামের মতে, কর্মপন্থা নির্ধারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে সংসদীয় কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে তাদের সেভাবে ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন প্রয়োজন। সেই সঙ্গে দুদকের যেভাবে স্বাধীনভাবে সরকারের ভিতরের দুর্নীতি অনুসন্ধানের কথা সেভাবে হচ্ছে না। আসলেই তারা স্বাধীন কিনা সেটাও নিয়েও ভাবতে হবে। দুদক ছোট ছোট দুর্র্নীতির বিরুদ্ধে ছুটছে কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রে শুধু এক-দুবার তলব করেই ক্ষান্ত দিচ্ছে। এর বাইরে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় বা সংস্থার অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আবার পুলিশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্রেফতার করে আনা অপরাধীরা যেভাবে নিম্ন আদালত থেকে মুক্তি পাচ্ছে তারও অবসান প্রয়োজন। কীভাবে নিম্ন আদালতকে আরও বেশি সক্রিয় করা যায় তা ভেবে দেখতে হবে। প্রয়োজন গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে তথ্য প্রবাহের অধিকার নিশ্চিত করা। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি বড় হাতিয়ার। তাই এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের পরিবর্তে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলামের মতে, সরকারের একার পক্ষে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই জনগণ ও সহযোগী সব সংস্থাকে আস্থায় নিয়ে কাজ করতে হবে। জনগণ যদি দুর্নীতি বা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তথ্য দিয়ে দেখত তার যে কোনো ধরনের বিপদ ছাড়া দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে, তাহলে জনগণও এগিয়ে আসবে। এর বাইরে যেসব সংস্থা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের বিষয়ে নানাভাবে সহযোগিতা করে তাদের সহযোগী হিসেবে নিতে হবে। তিনি বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সারা বিশ্বেই স্বচ্ছতা আনয়নে কাজ করে থাকে, কিন্তু বাংলাদেশে টিআইবি যেন সব সরকারেরই গাত্রদাহ। এ অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ টিআইবি কখনই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করে না। তাই টিআইবির মতো যারা সহযোগী আছে তাদের সবাইকে নিয়ে সুশাসন নিশ্চিতের কাজ করতে হবে।