শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ-ভারত সমঝোতা স্মারক সই

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে একমত

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। গতকাল নয়াদিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ পরামর্শক কমিশনের পঞ্চম বৈঠকে যৌথভাবে এ সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্রুত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পন্ন করাসহ সব অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টনের কথা তোলেন। জবাবে ভারতের সুষমা বলেন, এ বিষয়টি যত দ্রুত সম্পন্ন করা যায় তার উদ্যোগ নেবে ভারত সরকার। এ ছাড়া সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুই দেশ যৌথ প্রকল্প চূড়ান্তও যথাসময়ে সেগুলোর বাস্তবায়ন করবে। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

গতকাল দিল্লিতে এ বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মোংলা বন্দরে ভারতীয় শিল্প স্থাপনের জন্য হীরানন্দনি গ্রুপের পুনের নিদার ইন্ডাস্ট্রিয়াল গোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাদেশ আর্থিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। অন্য তিনটি সমঝোতা হলো- বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ঔষধি বৃক্ষ বিভাগের সঙ্গে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আয়ুশের (যারা আয়ুর্বেদ ওষুধ তৈরি করবেন), দ্বিতীয়টি হলো ভারতের মুসৌরির সুপ্রশাসন কেন্দ্রের সঙ্গে বাংলাদেশের গণপ্রশাসনিক বিভাগের সমঝোতা (বাংলাদেশের প্রশাসনের মধ্যম ক্যাডারের ১ হাজার ৮০০ অফিসারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে) এবং ভারতের দুর্নীতি দমন সিবিআইর সঙ্গে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও ভারতের প্রসারভারতীয় চুক্তি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে আরও বাড়তি ব্যাখ্যার কারণে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৯৭১ সাল থেকে উভয় দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে তা বর্তমানে স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উন্নীত হয়েছে। উভয় দেশ এখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যে নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে তাতে আধুনিক উন্নত প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়বে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ, পরমাণু বিদ্যুৎ নির্মাণ এবং ইলেকট্রনিকসে। এসব বিষয়ে উভয় দেশের অফিসারদের বিষয় ও প্রকল্প চূড়ান্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তির সময়ে বাস্তবায়ন হয়। বাংলাদেশের মন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণ ও দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ত্রিমাত্রিক সহযোগিতা তৈরির জন্য ভারতের এক অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা এখন অর্থনৈতিক কূটনীতি।

বৈঠকের শুরুতেই সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান এবং তিনি যে প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে ভারতকে বেছে নিয়েছেন, সেটাই প্রমাণ করে উভয় দেশের সম্পর্ক কতখানি উন্নত হচ্ছে। তিনি বলেন, উভয় দেশের সম্পর্কে এখন সোনালি অধ্যায় চলছে। উভয় মন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন যে, নিরাপত্তা, সীমান্ত সহযোগিতা, পারস্পরিক লাভদায়ক বাণিজ্য ও পুঁজিলগ্নি, বিদ্যুৎ-এনার্জি, নদীর পানি বণ্টন, উন্নয়নমূলক সহযোগিতা, পরিবহন কানেকটিভিটি, সংস্কৃতি এবং জনতার সঙ্গে জনতার সম্পর্ক থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রের সহযোগিতা উভয় দেশকে আগের থেকে আরও নিবিড় করে তুলেছে। ভবিষ্যতে এমন যৌথ সহযোগিতার নিদর্শন তুলে ধরা হবে যাতে মনে হবে এ সম্পর্ক চিরকালীন অবিচ্ছেদ্য রয়ে যায়। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে উন্নয়নযজ্ঞ শুরু হয়েছে তাতে ভারতের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের মধ্যে দ্রুত সর্বাপেক্ষা উন্নতির পথে। বাংলাদেশের মন্ত্রী বলেন, উভয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্ক এক নজিরবিহীন পথে উন্নত হচ্ছে।

উভয়েই একমত হয়েছেন যে, সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রের মধ্যে সমুদ্র অর্থনীতি, সাইবার নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়ছে। বাংলাদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় ও মানবিক সাহায্য করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা বাংলাদেশের প্রশংসা করেন এবং আশ্বাস দেন এসব শরণার্থীকে ফের মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নিরাপদে দ্রুত ও টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রত্যাবর্তনের জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেবেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ২০১৭ সাল থেকে চার পর্যায়ে কক্সবাজারের শরণার্থীদের মানবিক সাহায্য দেওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান। উভয়েই একমত প্রকাশ করেন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে।

যৌথ কমিটির বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যাবতীয় বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ না হলেও সূত্রের খবর, তিস্তা পানি চুক্তি ও সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিষয়ে বাংলাদেশের মন্ত্রী যথেষ্ট জোরের সঙ্গে উত্থাপন করেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পারস্পরিক সফরের সময়ে যে সিদ্ধান্তগুলো হয়েছিল তার বাস্তবায়ন সম্পর্কে রোডম্যাপ তৈরি করতে বলেন। এই সঙ্গে ২০১৭ সালে চতুর্থ জেসিসির বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল তারও পর্যালোচনা করেন। ভারতের আসন্ন নির্বাচনের কারণে প্রকল্পগুলোর নাম এখন ঘোষণা করা হচ্ছে না। বৈঠকের পর প্রথমে উভয় মন্ত্রীর উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। পরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফররত বাংলাদেশের মন্ত্রীর জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। সেখানে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল ভি কে সিংও ছিলেন। উভয় দেশের ২১ জন করে প্রতিনিধিও ছিলেন।

সর্বশেষ খবর